ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল রফতানি করা হবে

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৩১ মে ২০১৯

  ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল রফতানি করা হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার প্রধান কারণ উচ্চমূল্যের শ্রমিক। এ কারণে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে দরকার ব্যাপক কৃষি যন্ত্রপাতি। এই যন্ত্র কিনতে কৃষি মন্ত্রণালয় তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে। উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টেনে তিনি শ্রমিক সঙ্কট নিরসনে কৃষিকাজে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেসরকারী পর্যায়ে যে কেউ এখন চাল রফতানি করতে পারবেন। এ লক্ষ্যে আবেদন করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুই-এক দিনের মধ্যে অনুমোদন দেবে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ধানের কম বাজার মূল্যের বিষয়ে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। ২০১৭ সালের চাল আমদানির শুল্ক রেয়াতের পর চাহিদার অতিরিক্ত চাল আমদানি, উৎপাদন বৃদ্ধি ও শ্রমিকের অভাবে এবার ধানের মূল্য কমে গেছে বলে জানান মন্ত্রী। শ্রমিক সঙ্কট নিরসনে যান্ত্রিকীকরণের বরাদ্দ বাড়ানো হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বিগত অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট বাবদ বরাদ্দকৃত ভর্তুকি খাতের তিন হাজার কোটি টাকা যান্ত্রিকীকরণ খাতে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সে মোতাবেক খসড়া প্রকল্পও প্রণয়ন করা হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সমস্যার (কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া) সবচেয়ে বড় সমাধান কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা। এটা হলো মূল। এটা সরকারের দায়িত্ব। সরকার ইতোমধ্যে কৃষি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়েছে। একটা হার্ভেস্টারের দাম যদি ১২ লাখ টাকা হয় সরকার দেবে ছয় লাখ, চাষী দেবে ছয় লাখ টাকা। হাওর ও উপকূলবর্তী এলাকায় সরকার দেয় ৭০ শতাংশ, চাষী দেয় ৩০ শতাংশ। চাষীর যে অংশ সেটা দেয়ার মতো চাষীও অনেক সময় পাওয়া যায় না। সরকারেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যান্ত্রিকীকরণে আমাদের যেতেই হবে। এজন্য উনি বরাদ্দ বাড়াবেন। ইতোমধ্যে যেটা নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে তা হলো, আমাদের ৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাজেটে থাকে কৃষিতে ভর্তুকি দেয়ার জন্য। ৬/৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়, উনি বলেছেন উদ্বৃত্ত সেই তিন হাজার কোটি টাকা কৃষি যান্ত্রিকীকরণে কৃষককে ভর্তুকি বা প্রণোদনা হিসেবে দিতে। তিনি বলেন, আমরা একটা প্রকল্প করছি সেটার মাধ্যমেও চাষীকে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তায় ভরার কাজ হবে মেশিনের মাধ্যমে। এ ধরনের ছোট মেশিনের দাম ১২ লাখ টাকা, আমরা ভালমানের যন্ত্র নেব। আমরা চীন ও জাপানের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত রেখে সরকার ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রফতানির বাজারে যাওয়া কঠিন। তারপরও ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমরা যেতে পারব। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেউ যদি চাল রফতানির আবেদন করে, এক-দুদিনের মধ্যে অনুমতি দেয়া হবে। সব ধরনের চালই রফতানি করতে পারবে। চাল রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানো হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, অর্থমন্ত্রী আমাদের বলেছেন দরকার হলে তিনি আরও বাড়িয়ে দেবেন। প্রণোদনা ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ বা ৩০ শতাংশ দেয়া যেতে পারে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষককে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ধান কেনা হচ্ছে। আমরা আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়েছি, চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ করা হয়েছে। আমদানি আর হবে না। গত ২০১৭ সালের চাল আমদানির শুল্ক রেয়াতের পর চাহিদার অতিরিক্ত চাল আমদানি, উৎপাদন বৃদ্ধি ও শ্রমিকের অভাবে এবার ধানের মূল্য কমে গেছে। এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৯৬ লাখ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমরা আশাও করিনি এতটা উৎপাদন হবে। তিনি বলেন, রফতানি করব এটাও তো একটা বিরাট মেসেজ। রফতানি করতে পারলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে। যারা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে ধান বিক্রি করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা বড় চাষী তারা ধান ঘরে রেখে দেয়। চাষীদের সারের ওপর আরও কিছু প্রণোদনা দেয়া যায় কি-না তা দেখছি। আর কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রক্রিয়াকে দ্রুত করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, কৃষিটা সবসময়ই অনিশ্চিত। শুধু আমাদের দেশে নয়, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় দেশে দেখবেন টম্যাটো হাইওয়েতে ঢেলে দিচ্ছে, দুধ হাইওয়ে ঢেলে দিচ্ছে। পচনশীল পণ্য, উৎপাদন বাড়লে দাম কমে যায়, এটার সমাধান করা যায় না। আমি সেটা বলছি না, আমরা গুদাম করলাম না কেন? বাংলাদেশে সম্পদ সীমিত। বিদ্যুত উৎপাদন করতে হবে। রাস্তাঘাট করতে হবে। আমাদের খাদ্যশস্য সংরক্ষণে গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২১ লাখ টন। আরও ৮ লাখ টন ধারণ ক্ষমতার গুদাম নির্মাণাধীন। মন্ত্রী জানান, ধানসহ কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে চাষীর সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে ফসলের ক্রয়মূল্য অগ্রিম নির্ধারণ করে মৌসুমের শুরুতেই সরাসরি কৃষক পর্যায় থেকে ধান সংগ্রহসহ কিছু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ধানের ন্যায্যমূল্য দিতে দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত গোডাউন না থাকায় সরকার কৃষকের কাছে থেকে বেশি পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারছে না। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার কিছু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে রয়েছে ধানের ক্রয়মূল্য অগ্রিম নির্ধারণ করে মৌসুমের শুরুতেই সরাসরি কৃষক পর্যায় থেকে এ ফসল সংগ্রহ শুরু, চাষীর সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে সে মোতাবেক ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা, সরকারী গুদামের ধারণ ক্ষমতা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি, সরকারের ধান সংগ্রহের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে ৫০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত এবং চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করে রফতানিকে উৎসাহিত করা। এছাড়া কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় কমানোর মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক করতে কৃষি মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেবে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর মধ্যে নন-ইউরিয়া সারসহ অন্যান্য উপকরণে প্রণোদনা বৃদ্ধি, সেচের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ব্যয় কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনে প্রণোদনা আরও বৃদ্ধি করা হবে। উন্নত বিশ্বে স্কুল-কলেজ ছুটির সময় কৃষিকাজে ছাত্ররা পরিবারকে সাহায্য করে এ প্রসঙ্গ টেনে কৃষিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিক সঙ্কট নিরসনে কৃষিকাজে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়োগ করতে পারে পরিবার। ২০১৭ সালে চাল আমদানির শুল্ক রেয়াতের পর চাহিদার অতিরিক্ত চাল আমদানি, উৎপাদন বৃদ্ধি ও শ্রমিকের অভাবে এবার ধানের মূল্য কমে গেছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এবার বোরো লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৯৬ লাখ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমরা আশা করিনি এতটা উৎপাদন হবে।
×