ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাপানের সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৩০ মে ২০১৯

 জাপানের সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন  সহায়তা চুক্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাপানের সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই অর্থ দিয়ে বিদ্যুত, জ্বালানি ও সমুদ্রবন্দর উন্নয়নের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। বুধবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই চুক্তি করা হয়। বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি ও ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ চুক্তিতে সই করেন। এছাড়া টোকিওতে জাপান-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যকার চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অন্যতম উদার একটি দেশ। বাংলাদেশে আইনের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগ সুরক্ষা, উদার ট্যাক্স পলিসি, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর রেয়াত সুবিধা দিচ্ছে। শতভাগ বিদেশী মালিকানা, লভ্যাংশ এবং মূলধনের পূর্ণ প্রত্যাবর্তন সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ইইউ, কানাডা এবং জাপানসহ বিশ্বের বেশিরভাগ শীর্ষ বাজারে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রবেশাধিকারের কথা উল্লেখ করেন তিনি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৩ অর্জনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে এটিকে ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে শীর্ষ ৩২টি দেশের মধ্যে রয়েছে। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দেশের মধ্যে একটি হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি বেসরকারী খাত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি উদ্যোক্তা তৈরিতে এবং বেসরকারী বিনিয়োগে। এটা দেশী বা বিদেশী হতে পারে। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আড়াই হাজারে জাপানের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করা আছে। সরকার টু সরকার এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে প্রচুর জায়গা নেয়া হয়েছে। দুটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের কাজ চলছে এবং আরও ২৬টি হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণাধীন রয়েছে। বাংলাদেশের ৮০০ আইটি কোম্পানির মধ্যে দেড় শ’ কোম্পানি বিদেশী গ্রাহকদের বিশেষ আইটি সেবা দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাইক্রোসফট, ইনটেল, আইবিএম, ওরাকল, সিকসোসহ স্বনামধন্য কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশের ২০ হাজার আইটি বিশেষজ্ঞ কাজ করছে। জাপানী ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক সুনাম, ওষুধ শিল্প ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের নীতির প্রশংসা করেন জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। অন্যদের মধ্যে এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ও জাপানের বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সংগঠনের নেতারা। ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি ॥ এদিকে, প্রধানমন্ত্রী জাপান যাওয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুত খাত এবং শিল্পায়নের জন্য জাপান ২৫০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। ৪০তম এই প্যাকেজ আগের বারের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। জাপানী এই অর্থে মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১), বিদেশী বিনিয়োগ সহায়ক প্রকল্প (২), জ্বালানি দক্ষতা ও সুরক্ষা সহায়ক প্রকল্প (পর্যায়-২) ও মাতারবাড়ি আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পে (৫) অর্থায়ন করা হবে। চুক্তির পর দুই নেতা যৌথ বিবৃতি দেন। চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতার আগে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা ও শিনজো আবে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ‘পরীক্ষিত বন্ধু’ জাপানে চারদিনের সফরে মঙ্গলবার রাজধানী টোকিও এসেছেন শেখ হাসিনা। বুধবার বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান শিনজো আবে। এ সময় সুসজ্জিত একটি দল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠক শুরু হয়। দুই দেশের নীতিনির্ধারক ছাড়াও সরকারী কর্মকর্তারাও বৈঠকে অংশ নেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক প্রমুখ। জাপান এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। ১৯৭২ সাল থেকে দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশ মোট এক হাজার ১৩০ কোটি ডলারের সহায়তা পেয়েছে। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর শেখ হাসিনার এটাই প্রথম জাপান সফর। এছাড়া আজ বৃহস্পতিবার ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ সম্মেলনে তিনি এশিয়ার সম্ভাবনা ও উত্থান নিয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরবেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও তাত্ত্বিকদের সামনে। এদিকে, টোকিওতে জাপানী সম্প্রচারমাধ্যম নিকেই-এর আয়োজনে ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে আলোচক হিসেবে থাকবেন আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক হিসেবে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার টোকিও থেকে জেদ্দায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে ফিনল্যান্ডে যাবেন তিনি। তিন দেশ সফর শেষে আগামী ৮ জুন প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।
×