ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পৈত্রিক সম্পত্তির দখল না পেয়ে এক সপ্তাহ আগে ভৈরব ছাড়ে পরিবারটি

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৪ মে ২০১৯

 পৈত্রিক সম্পত্তির দখল না পেয়ে এক সপ্তাহ আগে  ভৈরব ছাড়ে পরিবারটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব, ১৩ মে ॥ রাজধানীর উত্তরখানের একটি বাসা থেকে রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ তিনটি একই পরিবারের সদস্য। তারা সম্পর্কে মা, মেয়ে ও ছেলে। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের জগন্নাথপুর উত্তরপাড়ার ফকির বাড়ি। পৈত্রিক সম্পত্তি দখল না পেয়ে সপ্তাহখানেক আগে ভৈরবের বাসা ছেড়ে তারা তিনজন ঢাকার উত্তরখানের বাসায় উঠেছিলেন। নিহতরা হলেন- মা জাহানারা বেগম ওরফে মুক্তা (৪৫), ছেলে কাজী মুহিব হাসান (২৮) ও মেয়ে তাসপিয়া সুলতানা (২০)। তাসপিয়া প্রতিবন্ধী ছিলেন। পুলিশ ঘর থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করে। চিরকুটে লেখা ছিল, ভাগ্য আর আত্মীয়স্বজনের অবহেলার কারণেই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সোমবার সরেজমিন শহরের জগন্নাথপুর উত্তরপাড়ার ইকবালের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, জাহানারা বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেন ছিলেন বিআরডিবি অফিসের ব্যবস্থাপক। তিনি ২০১৬ সালে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। সেখানেই কর্মরত অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। ইকবাল বড়লেখায় কর্মরত থাকলেও পরিবারটি থাকত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। পরে পরিবারটি ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। ইকবালের মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী মেয়ে ও ছেলের ভরণ পোষণ এবং লেখাপড়া চালাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয় জাহানারা বেগম মুক্তার। আর্থিক অনটনে দিনকাটে তাদের। অনেকে তাদের বাড়ি ভাড়াও দিতে চাইতেন না। ৭/৮ দিন আগেও তারা ভৈরবে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এবং প্রাপ্য সম্পত্তির জন্য এলাকার মুরব্বিদের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন ইকবালের স্ত্রী। মাস তিনেক আগে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসাটি ছেড়ে তিন সদস্যের পরিবারটি ভৈরবে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়িতে তাদের থাকার নিজস্ব ঘর না থাকায় পাশের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করেন। পরিবারটি ৫ মে ভৈরবের বাসা ছেড়ে দিয়ে ঢাকার উত্তরখানের বাসায় উঠেছিল বলে জানালেন ইকবালের এক প্রতিবেশী। ঢাকায় চলে যাবার পর পরিবারটির কারও সঙ্গে এলাকাবাসীর যোগাযোগ ছিল না। এলাকাবাসী জানায়, জগন্নাথপুর এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা হাছান আলীর দুই স্ত্রীর সাত ছেলে ও ছয় মেয়ে রেখে মারা যান। সাড়ে পাঁচগ-া জমির বাড়িতে ১৩ জন ওয়ারিশ। তার এক ছেলে ইকবাল হোসেন নিহত পরিবারটির গৃহকর্তা ছিলেন। দুই বছর পূর্বে তিনি মারা যান। ৪ ভাইয়ের বাড়ি জোরপূর্বক ভোগ দখল করে রেখেছিল আশরাফুল ও আহসানউল্লাহ নামের ইকবালের দুই ভাই। তাই নিয়ে চলে আসছিল দ্বন্দ্ব। তাদের কারণে পরিবারটি পৈত্রিক বাড়িতে থাকার যায়গা পায়নি। তবে আহসানউল্লাহ বলেন, ঈদের পর বাড়িতে সবাই আসলে বসে তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল।
×