ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা

বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে শেখ হাসিনা নক্সীপল্লী

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৪ মে ২০১৯

বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে শেখ হাসিনা নক্সীপল্লী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে ‘শেখ হাসিনা নক্সী পল্লী প্রকল্প’। প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণে ৭০০ কোটি টাকাসহ মোট ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বরাদ্দ চেয়ে অর্থ সচিবকে আধাসরকারী (ডিও) পত্রও দিয়েছেন বস্ত্র ও পাট সচিব। শেখ হাসিনা নক্সী প্রকল্প, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, নক্সী, কারু ও তাঁত শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাটের গৌরব ফিরিয়ে আনাসহ পাটখাত সংস্কারের প্রস্তাবনা থাকছে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব বাজেটে। এই সংস্কার কাজের মধ্যে থাকছে পাটকল কর্পোরেশনের অধীনে থাকা ৩টি মিল সুষমকরণ, আধুনিকায়ন, পুনর্বাসন ও বর্ধিতকরণ। বস্ত্র ও পাট সচিব মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বস্ত্র ও পাটখাতকে বেশ গুরুতের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পাটখাতের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের মন্ত্রণালয়ের বাজেটে আমরা কারু ও তাঁত শিল্পীদের জন্য ‘শেখ হাসিনা নক্সী প্রকল্প’ এর ওপর জোর দিচ্ছি বেশি। এজন্য আগামী বাজেটে উন্নয়ন খাতের সিলিং (অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত বরাদ্দ সীমানা) ৭০০ কোটি টাকায় করার সুপারিশ করা হয়েছে।’ অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো ডিও লেটারে বলা হয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন ও শেখ হাসিনা নক্সী পল্লী জামালপুর প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় সীমা ৭০০ কোটি টাকাসহ মোট ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। জানা গেছে, শেখ হাসিনা নক্সী পল্লী প্রকল্পকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে মূলত নক্সী ও তাঁত শিল্পীদের দারিদ্র্য বিমোচন, জীবনযাত্রা ও উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান উন্নয়নের জন্য। এজন্য সার্ভিস সেন্টার ও ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করা হবে। গত ১২ মার্চ একনেকে এ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২১ সালের ১ মার্চ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে জামালপুর সদর উপজেলায় ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারী খাসজমি প্রায় ৮৯ একর এবং বাকিটা ব্যক্তি মালিকানাধীন। যা পর্যায়ক্রমে অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পের জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৫৮১ কোটি টাকা এবং ভূমি উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি টাকা। ডিও লেটারে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩০টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে। এর মধ্যে চলতি বছরের জুন মাসে ২টি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। অসমাপ্ত বাকি ২৮টি প্রকল্প আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এসব প্রকল্প ছাড়াও চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) আরও চারটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে, আগামী অর্থবছরে এডিপিতে নতুন প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩২টি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, পাটকলে লোকসানের পরিমাণ কমিয়ে আনতেও বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১৪টি পাটকল সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে পরিচালনার একটি পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পাটশিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজনে ভর্তুকি এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। পাট মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নক্সী প্রকল্প ছাড়া আগামী বাজেটে পাটখাতের উন্নয়নে মধ্যমেয়াদী সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। মধ্যমেয়াদী সংস্কারের মধ্যে থাকছে, পাটকল কর্পোরেশনের আওতাধীন ৩টি মিল সুষমকরণ, আধুনিকায়ন, পুনর্বাসন ও বর্ধিতকরণ। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৪ কোটি টাকা। এছাড়া এক হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পাট খাত থেকে ‘ভিসকোস’ উৎপাদন প্লান্ট প্রকল্প নেয়া হবে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সংস্কারের আওতায় ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এগুলো হচ্ছে করিম জুট মিলস ও দৌলতপুর জুট মিলসে ফেল্ট কারখানা স্থাপন এবং কেএফডি মিলসের বহুমুখী ইউনিটের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন কার্যক্রম। এদিকে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রাথমিক সিলিং নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ৫৮১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন খাতে ৯৮১ কোটি টাকা প্রয়োজন। উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য এর আগেও অর্থ বিভাগকে একটি পত্র দেয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি জানান, পত্র পাওয়ার পর অর্থ বিভাগ ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে উন্নয়ন ব্যয় ৬০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু তারপরও উন্নয়ন কাজ শেষ হবে না। এজন্য উন্নয়ন ব্যয়ের সিলিং ৭০০ কোটি টাকা নির্ধারণের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।
×