ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনিরাপদ খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলেছে হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৩ মে ২০১৯

 অনিরাপদ খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলেছে  হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে ভেজালের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রয়োজনে মাদকবিরোধী অভিযানের মতো মানহীন অনিরাপদ খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধেও সরকারকে যুদ্ধ ঘোষণার অনুরোধ জানিয়েছে হাইকোর্ট। বাজারে প্রচলিত মানবদেহ ও জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মানহীন পণ্যের কারণে বাংলাদেশে বসবাস অনিরাপদ হয়ে উঠছে । এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিতে রবিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ একথা বলেছে। এ সময় ৫২ প্রতিষ্ঠানের মানহীন ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে দ্রুত প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বাজারে থাকা ১৮টি কোম্পানির এসব পণ্য দ্রুত অপসারণ করে ধ্বংস এবং মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার উৎপাদন বন্ধ করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আদালত; এজন্য প্রয়োজনে ‘জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করতেও বলা হয়েছে। আগামী ২৩ মে এই রিট আবেদনের পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে আদালত। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, সরিষার তেল- সিটি অয়েল মিলের তীর, গ্রিন ব্লিসিং ভেজিটেবল অয়েল কোম্পানির জিবি, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা, শবনম ভেজিটেবল অয়েলের পুষ্টি ব্র্যান্ডগুলো। লবণের মধ্যে রয়েছে- এসিআই, মোল্লা সল্ট, মধুমতি, দাদা সুপার, তিন তীর, মদিনা, স্টারশিপ, তাজ ও নূর স্পেশাল ব্র্যান্ডগুলো। মসলার মধ্যে রয়েছে- ড্যানিশ, ফ্রেশ, বাঘাবাড়ি স্পেশাল, প্রাণ ও সান এর গুঁড়া হলুদ; এসিআই ফুডের পিওর ব্র্যান্ডের গুঁড়া ধনিয়া লাচ্ছা সেমাইয়ের মধ্যে রয়েছে- মিষ্টিমেলা, মধুবন, মিঠাই, ওয়েলফুড, বাঘাবাড়ি স্পেশাল, প্রাণ, জেদ্দা, কিরণ ও অমৃত ব্র্যান্ডগুলো । নুডলসের মধ্যে রয়েছে- নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডলি নুডলস। কাশেম ফুড প্রোডাক্টের ‘সান’ ব্র্যান্ডের চিপসও এই তালিকায় রয়েছে। আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলে, ‘খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র রমজান মাসেই অভিযান চালানো যথেষ্ট নয়। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সারাবছরই অভিযান অব্যাহত রাখা উচিত। খাদ্যপণ্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র নিজেদেরকে কর্মকর্তা মনে না করে, দেশপ্রেমিক নাগরিক ও জনগণের প্রতি ভালবাসা থেকে দায়িত্ব পালন করা উচিত।’ আদালত আরও বলে, ‘যদিও এই জাতীয় বিষয়ে হাইকোর্টের নিয়মিত দেখা উচিত নয়। কারণ, এর জন্য যথাযথ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কিন্তু এরকম অবস্থায় হাইকোর্ট কিছু না করেও বসে থাকতে পারে না। তাই ভেজালরোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরী।’একইসঙ্গে হাইকোর্ট অনুরোধ জানিয়ে বলে, ‘সরকার ও সরকারী দল এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন এসব ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যেমন যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তেমনি ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে ভেজাল খাদ্যরোধে জরুরী অবস্থা ঘোষণারও অনুরোধ জানাচ্ছি।’ আদালত আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট সরকার ও নির্বাহী বিভাগের কাজের অগ্রাধিকার কী হবে, তা নির্ধারণ করে দিতে পারে না। কিন্তু খাদ্যে ভেজালরোধের বিষয়টিকে এক নম্বরে অগ্রাধিকার দেয়ার অনুরোধ জানানো হলো। ভেজালের বিষয়ে আর কোনও আপোস কিংবা ছাড় দেয়া হবে না বলেও আদালত তার আদেশে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে ১০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আর যতক্ষণ পর্যন্ত ওই পণ্যগুলো বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় মানসম্মত ঘোষিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই পণ্যগুলো বাজারে আসতে পারবে না বলে হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে।
×