ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেজা ফারুক

গরমে তাঁতের শাড়ি

প্রকাশিত: ১০:১৬, ৩ মে ২০১৯

গরমে তাঁতের শাড়ি

প্রকৃতিতে চলছে এখন গ্রীষ্মের দহন প্রহর। গরমের দাবদাহে সারাদেশই যেন হাপিত্যেশ করছে। আবহাওয়ার প্রচন্ড উত্তাপে নিসর্গের মতো জনজীবনও বেসামাল। রৌদ্রের দাবদাহে ঘর থেকে বেরোনোরই যেন উপায় নেই। তাছাড়া কী ঘরে, কী বাইরে সর্বত্রই গ্রীষ্মকালীন খরতাপ অনুভূত হচ্ছে। এই ভ্যাপসা গরমে একটু স্বস্তি, একটু শীতল পরশ পেতে তাই সবার মধ্যেই চলছে আকুলি-বিকুলি। অবশ্য গ্রীষ্মের এই সময়টাতে গরমের মাত্রা কখনও কমবে, কখনও বাড়বে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তবে ইদানীং বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, খালবিল, নদীনালা, পুকুর-জলাশয় শুষ্কতার কবলে পড়ার দরুন যেমন প্রকৃতিতে পড়েছে বিরূপ প্রভাব পাশাপাশি গাছপালা, বন-বনানী ক্রমশ উধাও হয়ে যাওয়ার কারণেও প্রকৃতি তার স্বাভাবিক আচরণ হারাতে বসেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনাবৃষ্টি, খরার প্রভাবও। সব মিলিয়ে আবহাওয়ার এই বিশৃঙ্খল পরিবেশ নৈসর্গিক কোমলতাকেও করেছে ক্ষুণ্ণ। বায়ুমন্ডলের উষ্ণ প্রভাবের দরুনও প্রকৃতির মাঝে নেই পরিবেশের ভারসাম্য। এই অবস্থায় এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি যেমন দৈনন্দিন জীবনে পরম সুখের স্পর্শ বুলিয়ে যায়, একই রকমভাবে এই গ্রীষ্মকালে পোশাকের ক্ষেত্রেও আসে ব্যাপক পরিবর্তন। বিশেষ করে নগর জীবনে দেখা মেলে এই দৃশ্যাবলীর। কেননা, শহরে প্রায় সব মানুষই কী নারী, কী পুরুষ কমবেশি সবাইকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে বাইরে বেরোতে হয়। নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউবা চাকরিসূত্রে, কেউবা পারিবারিক, সাংসারিক কাজে ঘর থেকে বাইরে আসেন। কেউবা কলেজ, ইউনিভার্সিটি, স্কুলেও যাচ্ছে। কেউ আবার বাচ্চাদের স্কুলে আনানেয়ার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ঘর থেকে বাইরে আসছেন। তারা প্রত্যেকেই কমবেশি পোশাক পরিচ্ছদ এবং এক-আধটু সাজগোজ করে পরিপাটি না হয়ে বাইরে আসতে পারেন না পারিপার্শ্বিকতার কথা চিন্তা করে। তবে এই প্রচন্ড গরমে বাধ্য না হলে কোন নারীই কি রাস্তায় বেরোয়? আর বের হলেও রোদের হাত থেকে রক্ষা পেতে একটা ছাতা তাদের সঙ্গী হয়ে যায় প্রয়োজনের খাতিরে। পরিবেশের সঙ্গে মানানসই পোশাক ছাড়া তো বাইরে বের হওয়ার কথা তারা চিন্তাই করতে পারেন না। আর এক্ষেত্রে গরমে তাদের প্রথম পছন্দ হলো শাড়ির ক্ষেত্রে তাঁতের সুতি শাড়ি এবং সালোয়ার-কামিজ হলেও চাই সুতিরই। গর্জিয়াস, সিল্ক বা টিস্যুজাতীয় ফেব্রিক্স এ সময় কল্পনাতেও আসে না। ফলে গরমে তাঁতের শাড়ির ব্যবহার এবং চাহিদা দুটোই বেড়ে যায়। গ্রীষ্মের খরতাপের হাঁসফাঁস থেকে রেহাই পেতে আরামদায়ক শাড়ি বা ড্রেসের বিকল্প নেই। আর এই আরামদায়ক তাঁতের শাড়ির বিশাল যোগানদাতা হলো টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প। সারাবছর টাঙ্গাইলের তাঁতের নানা ধরনের শাড়ির চাহিদা লক্ষণীয় হলেও গরমে বিভিন্ন ডিজাইনের ফ্যাশনেবল তাঁতের সুতির শাড়িই যেন নারীর পছন্দের শীর্ষে চলে আসে। তবে যারা শাড়িতে অভ্যস্ত নন তারা বেছে নেন সুতির সালোয়ার-কামিজ, তরুণীরা ফতুয়া। তাছাড়া টাঙ্গাইলের তাঁতের বোনা সুতির শাড়ির দামও যেমন থাকে নাগালের মধ্যে, একই ভাবে নারীর ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে এবং বাঙালিয়ানার আটপৌরে আবেশও যেন ফুটে ওঠে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি পরিধানের মধ্যদিয়ে। বাঙালী নারীর সৌন্দর্য চেতনা বরাবরই একটু আলাদা এবং অবশ্যই শিল্পময়। তাদের সাধারণ সাজগোজ, পোশাক-আশাকে যেমন থাকে চলমান সময়ের নিপুণ প্রকাশ, তেমনি বাঙালিত্বকে ধারণ করে সব সময় নিজস্ব সংস্কৃতির বৃত্তের মধ্যে থাকতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর এখানেই বাঙালী নারী হয়ে ওঠেন অনন্য। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বরাবরই একটা আলাদা বৈশিষ্ট নিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে তৈরি হয়ে আসছে। তবে বিগত কয়েক দশকে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শাড়িতে এসেছে কারুকার্জের নিখুঁত ছোঁয়া। আর সেই নান্দনিকতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলার নারীসমাজ তাদের পছন্দের তালিকার প্রথমদিকেই টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িকে জায়গা দিয়েছেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী গ্রীষ্মকাল আসবে। আর দৈনন্দিন জীবনে সুতির ড্রেসের ব্যবহারও বেড়ে যাবে গাণিতিক হারে। টাঙ্গাইলের তাঁতের সুতির শাড়ি যেমন প্রতিষ্ঠিত বুটিকশপগুলো থেকে কিনতে পাওয়া যায়, পাশাপাশি জেলা এবং উপজেলা শহরের খ্যাতিনামা বুটিকশপ থেকেও সংগ্রহ করা যেতে পারে। এই গরমে এক চিলতে হিমঠান্ডা হাওয়া আর তাঁতের সুতির শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া যেন সপ্ন ছাড়িয়ে এসে বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়ায়। ছবি : রাহুল চৌধুরী মডেল : নিহারীকা
×