ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটের আগেই বিএসইসিতে পরিবর্তনের দাবি

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

বাজেটের আগেই বিএসইসিতে পরিবর্তনের দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আইন লঙ্ঘন করে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আগামী বাজেটের আগেই আমরা বিএসইসিতে পরিবর্তন দেখতে চাই। শেয়ারের অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে সোমবার ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’ এর ব্যানারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতীকী গণঅনশনে সংহতি প্রকাশ করে তিনি এসব কথা বলেন। মেনন বলেন, রবিবার সংসদে প্রশ্নের-উত্তরে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন ‘পুঁজিবাজারে সঙ্কট আছে। সেখানে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করা না গেলে আমাদের শিল্প, বাণিজ্য কোনটাই হবে না। কারণ পুঁজিবাজার থেকেই অর্থ সংগ্রহ করা হয়।’ সংসদে সত্য কথা বলায় আমি অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু সত্য কথা বলেই শেষ হবে না। আমাদের কথা হচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান আইন ভঙ্গ করে পর পর তিনবার কীভাবে থাকে? এর জবাব আপনাদের দিতে হবে- বলেন সাবেক মন্ত্রী মেনন। তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই জুন মাসে বাজেটের আগেই বিএসইসিতে পরিবর্তন এসেছে। কারণ আপনারা আইন ভঙ্গ করেছেন। আমরা পার্লামেন্টে আইন করেছি, আপনারা সেই আইন ভেঙ্গেছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা তালিকা চাই গত ৯ বছরে কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে আইপিও ইস্যু করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা কারা? তাদের পরিচয় চাই এবং তাদের বর্তমান অবস্থা কি? আমরা তার তালিকা চাই। মেনন আরও বলেন, আইপিও নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে আমি তাদের বিচার চাই। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে চক্রান্ত চলছে এমন ইঙ্গিত করে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান বলেন, আর্থিক খাত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে গেছেন, সেখানে আমাদের আর্থিক খাতের পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে কারেন্ট এ্যাকাউন্ট ডেফিসিট। কারেন্ট এ্যাকাউন্ট ডেফিসিট যদি কন্টিনিউ করে তাহলে জানবেন দেশের অর্থনীতি খারাপ, সামষ্টিক অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে। তাহলে কোন চক্রান্ত চলছে আজকে বাংলাদেশে? অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেনন বলেন, সমস্যা যখন সৃষ্টি হয়, তার সমাধান আছে। আপনি (অর্থমন্ত্রী) বলেছেন আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা দেয়া হবে। এই প্রণোদনা কী হবে সেটা যদি বিস্তারিত বলেন তাহলে ভাল। ১৩ জুন বাজেট আসবে, আশা করি বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কী প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। এর আগে সকাল থেকে ১২ দফা দাবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা অনশন কর্মসূচী পালন করছেন। এক পর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন সেখানে এসে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করে তাদের সরবত পান করিয়ে অনশন ভাঙ্গান। বিনিয়োগকারীদের ১২ দফা দাবির মধ্যে ছিল- ইস্যুমূল্যের নিচে অবস্থান করা শেয়ারগুলো ওই কোম্পানির পর্ষদে বাইব্যাক করা, প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করা, যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে তাদের ন্যূনতম ১০ শতাংশ লভ্যাংশ নিশ্চিত করা, স্ক্রিপ নিটিং তথা শর্ট সেল আইন বাতিল করা, খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের আইনের আওতায় আনা, পুঁজিবাজারে অর্থের জোগান বৃদ্ধির জন্য সহজশর্তে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেয়া, অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনা শর্তে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এক্সপোজার বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে গণনা করা, ২ সিসি আইনের বাস্তবায়ন করা, এই আইন যারা বাস্তবায়ন না করবে তাদের বিচারের আওতায় আনা, মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে পুঁজিবাজারে সক্রিয় করা, একই সঙ্গে ফান্ডগুলোর ন্যূনতম ৮০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা, পুঁজিবাজার সম্পর্কে যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট-২০১৫ বাস্তবায়ন করা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিপরীতে বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ নামে বিকল্প স্টক এক্সচেঞ্জ করা।
×