ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কামালের ভূমিকায় ঐক্যফ্রন্টে বাড়ছে টানাপোড়েন

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

ড. কামালের ভূমিকায় ঐক্যফ্রন্টে বাড়ছে টানাপোড়েন

রাজন ভট্টাচার্য ॥ জোটের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে নিজ দলের এমপিদের শপথ নিতে দেয়া ও সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে না পারায় বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর সঙ্গে ড. কামাল হোসেন তথা গণফোরামের দূরত্ব দিন-দিন স্পষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে নিজেদের মধ্যে অবিশ^াস। আছে আস্থার সঙ্কট। পাশাপাশি কামাল হোসেনের একক নেতৃত্বের কারণে নিজ দলও ফের ভাঙ্গনের মুখে। গণফোরামে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে শুক্রবার বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু আগে থেকে নেতৃত্বে পরিবর্তনের খবর রটে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে দলে ভাঙ্গন ঠেকাতে আগামী এক বছরের জন্য মূল কাউন্সিল পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলে গঠন করা হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নতুন এই রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের পর থেকে বিরোধী শিবিরে থাকা মানুষের মনে আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠে। এসব দলের নেতাদের ধারণা ছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট প্রভাব ফেলতে পারবে। ফ্রন্টের ধাক্কায় খান খান হতে পারে সরকারী দল। কিন্তু নানা নাটকীয়তা শেষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নজিরবিহীনভাবে ভরাডুবির মুখে পড়ে জোটটি। ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র আটটি আসনে জয়ের দেখা মেলে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটের দিনই নির্বাচন বয়কট করে জোটটি। ঘোষণা দেয় পুনরায় ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামাসহ নানা কর্মসূচীর। এরপর ফের ভোটের দাবিতে কয়েকটি আন্দোলনের কর্মসূচী দিলেও তা সফল হয়নি। এসব আন্দোলন-কর্মসূচীতে ছিল না সাধারণ নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ। বিএনপি পক্ষের নেতারা মনে করছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে লক্ষ্য নিয়ে গঠন করা হয়েছিল তা বিন্দুমাত্র পূরণ হয়নি। উল্টো ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জোটের শরিকদল গণফোরামের দুই নেতা এমপি নির্বাচিত হলেও তারা জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়ে সংসদে গেছেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেননি কামাল হোসেন। উল্টো দলের সাংসদ মোকাব্বির খান বাসায় মিষ্টি নিয়ে গেলে তাকে সমাদর করেছেন। শুক্রবারের দলের বিশেষ কাউন্সিলে কামাল হোসেনের পাশেই মঞ্চে বসে ছিলেন মোকাব্বির। এ নিয়ে নিজ দল ও শরিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। জানা গেছে, গণফোরামের বিজয়ী দুজনের শপথ নেয়াটা জোটের শরিকদল বিএনপির নেতারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এমতাবস্থায় জোটের শরিকদলগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। যদিও তাদের দলের একজন শপথ নিয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, গণফোরামের দুজনের শপথ নেয়ায় ঐক্যফ্রন্টে কোন নীতিবাচক প্রভাব পড়েনি। ঐক্যফ্রন্ট এখনও ঐক্য আছে, আর এ ঐক্য টিকে থাকবে লক্ষ্য আদায় পর্যন্ত। জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নেয়ার পর মতভেদ ও বিতর্ক ঘনিয়ে উঠেছে জোটটিতে। বিএনপির নির্বাচিত ছয় সদস্যও ভেতরে ভেতরে সংসদে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী। কিন্তু কৌশলগত কারণে এ বিষয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছেন না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। আবার বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও এ নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। নির্বাচিত আট সংসদ সদস্যের সবাই শপথ নিয়ে সংসদে গেলে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটে বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। কারণ নির্বাচিতরা দুই জোটের প্রায় সব নেতাই শপথ নেয়ার বিরুদ্ধে। ২০১১ সালের পর গণফোরামের কাউন্সিল হয়নি। নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে গণফোরামে কিছু পরিচিত মুখ যুক্ত হয়। এতে আশাবাদী হন কামাল হোসেন। তাই হঠাৎ করেই নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রয়োজনে বিশেষ কাউন্সিলের ডাক দেন তিনি। সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়াকে দলের সাধারণ সম্পাদক করতে মন স্থির করেন কামাল হোসেন। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ায় কাউন্সিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, যারা নতুন করে দলে যুক্ত হয়েছেন কোন রকম আলোচনা ছাড়াই তাদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। কামাল হোসেন একক সিদ্ধান্তে এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ সবার। অন্যদিকে মোকাব্বির খানকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার না করার ক্ষোভ তো আছেই। সব মিলিয়ে অনেকটা বিপাকেই আছেন কামাল হোসেন। শুক্রবার কাউন্সিল শুরুর কিছুক্ষণ পরই মঞ্চ থেকে নেমে বেরিয়ে যান দলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। পরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন যে দ্বৈত-নীতিতে দল চালাচ্ছেন সেভাবে রাজনীতি চলে না। মোকাব্বির প্রশ্নে তিনি (ড. কামাল) কোন পরিষ্কার বক্তব্য দিচ্ছেন না। ড. কামালের সাহস পেয়েই সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান সংসদে গিয়েছেন। শপথ নিয়ে কামাল হোসেনের বাসায় বিকেলে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে যান মোকাব্বির খান। তিনি তো ফুল মিষ্টি ফিরিয়ে দেননি।
×