ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে সরকার

প্রকাশিত: ১১:০১, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে সরকার

ওয়াজেদ হীরা ॥ সিয়াম সাধনার মাস রমজানের আর বেশিদিন বাকি নেই। মে মাসের শুরুতেই শুরু হচ্ছে মাহে রমজান। এরই মধ্যে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কেমন থাকবে সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। প্রতিবছর রমজান এলেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে নানা কথা হলেও শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হয় ক্রেতাকে। সাধারণ মানুষকে নিত্যপণ্যে একটু স্বস্তি দিতে উদ্যোগী হয়েছে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি শুরু থেকেই অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকার। তাই, এবার একটু আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে নিয়মিত বাজার তদারকি করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীও জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছেন। যে কোন অবস্থাতেই জনগণকে স্বস্তি দিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে সরকার। কয়েকদিন বাজার ঘুরে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের আগে কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সুকৌশলে বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে সবজির দাম বেশ চড়া। পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা শেষেও দাম কমছে না। কোন কোন বাজারে কেজিতে ৩০-৫০ টাকা বেড়েছে মাংসের দামও। রাজধানীর কাওরানবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, হাতিরপুলসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে মাছের দামও একটু বেশি। পহেলা বৈশাখের উৎসব শেষ হলেও ইলিশের দামে কমতি নেই। চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও স্বস্তি নেই সবজিতে। বিশেষ করে টম্যাটো, শসা, করলা, লাউ ইত্যাদির দাম একটু বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কিছুটা বেড়েছিল, আবার কমে যাবে। কিন্তু সামনে শব-ই- বরাত হওয়ার কারণে আপাতত কমবে না বলেও একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। আর একাধিক ক্রেতা জানান, এভাবেই দাম বাড়ে। যা বাড়ে তা কমে না। বৈশাখের আগে একটু বাড়ল, সামনে শব-ই-বরাতে আরও একটু বাড়বে। রোজা আসতে আসতে যা বাড়ানোর এভাবেই ব্যবসায়ীরা বাড়ায়। এখন থেকেই দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে বলেন সাধারণ মানুষ। শব-ই-বরাতকে কেন্দ্র করে একটি চক্র পণ্যের মূল্য বাড়াতে সক্রিয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে কয়েকটি সংস্থাকে বাজার তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশনের বাজার মনিটরিং সেল, জেলা প্রশাসন বাজার মনিটর করবে। খুচরা বাজার থেকে শুরু করে দেশের পাইকারি ও মোকামগুলোয় অভিযান চালাবে, যাতে রমজানকে পুঁজি করে কারসাজির মাধ্যমে কেউ অতি মুনাফা লুটতে না পারে। সেই সঙ্গে এসব বাজার নজরদারি করা হবে বলে জানা গেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কমমূল্যে বাজারে পণ্য বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবে। এর বাইরেও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, কৃষি বিপণন অধিদফতর ও পুলিশ বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করবে বলেও জানা গেছে। সাধারণ মানুষ এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন সাত সংস্থার তদারকি কতটা কাজে আসতে পারে সেটা দেখার বিষয়। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাজারের ওপর নজর রাখবেন সংশ্লিষ্টরা। জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর যে কোন কারসাজি অথবা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল। ক্রেতা-বিক্রেতা সূত্রে জানা গেছে, রমজানে মূলত কয়েকটি কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ কম থাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রমজানে সাধারণত যেসব পণ্যের অধিক চাহিদা থাকে, এ বছর সেগুলোর সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। তবে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন পণ্যের ঘাটতি দেখিয়ে মূল্যবৃদ্ধির অপচেষ্টা চালায়। এ পরিস্থিতিতে বাজার তদারকির কাজটি ফলপ্রসূ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাত সংস্থার মধ্যে যাতে সমন্বয় থাকে সেটিও বলছেন সাধারণ মানুষ। কেননা, সরকারের মহতি উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে পারে। একাধিক সূত্র আরও জানিয়েছে, এক বাজারে পণ্য নেই এমন মিথ্যা তথ্যে অন্য বাজারে অহেতুক কেউ কেউ দাম বাড়ায়। অর্থাৎ কখনও গুজবের ওপর ভিত্তি করে দাম হঠাৎই বাড়ানো হয়। এসব এবার কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে বলেও জানা গেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী জনকণ্ঠকে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করে। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। একটু আগে থেকেই এই বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। আমরা দেখতে চাই কোন্ জায়গা থেকে দাম বাড়িয়ে মানুষের কষ্ট দেয়া হয়। আমরা আমাদের মনিটরিং ইতোমধ্যেই শুরু করেছি। সামনের দিনগুলোতে মনিটরিং টিম বাড়ানো হবে। আমরা যে কোন মূল্যে জনগণকে রমজানে দ্রব্যমূল্যে স্বস্তি দিতে চাই। আশা করছি রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রত্যেক মুসলমানের কাছেই রমজান মাস বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। রমজানকে বলা হয় সংযমের মাস, আত্মশুদ্ধির মাস। অথচ এই রমজানেই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা লাভের আশায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি নিয়ে কথাবার্তা উঠলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকেন। এরই অংশ হিসেবে রমজান মাস সামনে রেখে ছয়টি পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রোজায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন ছয়টি পণ্য- ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর। রমজানে যাতে এ ধরনের পণ্যসামগ্রীর কোন সঙ্কট তৈরি না হয় সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ২.৫ থেকে ৩ লাখ টন, চিনি ৩ লাখ টন, ছোলা ৮০-৯০ হাজার টন, খেজুর ১৮ হাজার টন এবং পেঁয়াজ ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টনের। এছাড়া ৫০-৬০ হাজার টন মসুর ডালের চাহিদা তৈরি হয়। গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যানে ছোলা ব্যতীত অন্যসব পণ্যের দাম বাড়ার তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি।
×