ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাটকলগুলোতে ফের ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট অবরোধ শুরু

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

পাটকলগুলোতে ফের ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট অবরোধ শুরু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বকেয়া মজুরি প্রদান ও মজুরি কমিশনসহ নয় দফা দাবিতে ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়েছে সোমবার দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহে। পাশাপাশি পালন করা হচ্ছে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচী। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতারা এ খবর পাঠিয়েছেন। খুলনা অফিস ॥ বকেয়া মজুরি প্রদান ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তৃতীয় দফায় রাষ্টায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করেছেন। একই সঙ্গে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচী পালন করছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ও পাটকল শ্রমিক লীগের ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী সোমবার খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সোমবার রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচী পালন করা হয়। এর আগেও একই দাবিতে দুই বার পাটকলে ধর্মঘট এবং রাজপথ-রেলপথে অবরোধ কর্মসূচী পালন করেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। শ্রমিক নেতারা জানান, সারাদেশের সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে ৯ দফা দাবিতে ধর্মঘট ও অবরোধ কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। খুলনাঞ্চলের পাটকলসমূহে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচী চলছে। সোমবার সকাল থেকে মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, দিঘলিয়া উপজেলার স্টার, আটরা শিল্প এলাকার ইস্টার্ন ও আলিম এবং যশোরের নওয়াপাড়ায় অবস্থিত জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের প্রমিকরা এ আন্দোলন কর্মসূচী পালন করছেন। খালিশপুরের শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়কে মিছিল করে সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক এবং একই এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন। এ সময় তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করেন। এদিকে পাটকল শ্রমিকদের অবরোধ কর্মসূচীর কারণে সোমবার সকাল থেকে অবরোধ চলাকালীন সময় পর্যন্ত খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে কোন ট্রেন ছেড়ে য়েতে পারেনি এবং বিপরীত দিক থেকেও আসতে পারেনি বলে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে নগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করায় খুলনা-যশোর মহাসড়কে চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগের শিকার হন সড়ক ও রেল যাত্রীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট জুটমিলের সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের সঙ্গে শ্রমিকদের রুটি-রুজি জড়িত। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে শ্রমিকরা যে মজুরি পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। অন্য সব সেক্টরে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা হলেও পাটকল শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়া শ্রমিকদের ৮-১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। বকেয়া মজুরি প্রদান ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে যে কর্মসূচী শুরু হয়েছে দাবি না মানা পর্যন্ত শ্রমিকরা এ কর্মসূচী চালিয়ে যাবে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন বলেন, সোমবার (১৫ এপ্রিল) থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে টানা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট এবং প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হবে। এরপর বিরতি দিয়ে আগামী ২৫ এপ্রিল গেট সভা এবং ২৭, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল পাটকলে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটসহ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচী পালন করা হবে। বিজেএমসির খুলনা অঞ্চলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন সাড়ে ১৪ হাজার এবং বদলি শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ১৮ হাজার। মিলগুলোতে উৎপাদিত প্রায় এক লাখ বেল পাটজাত পণ্য (হেসিয়ন, সেকিং ও সিবিসি) অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় তিন শ’ কোটি টাকা। যথাসময়ে পাটজাত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যে কারণে শ্রমিকদের মজুরি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিয়মিত প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের নয়টি পাটকলের শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৪২ কোটি টাকা এবং কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ১০ কোটি টাকা বেতন বকেয়া পড়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। নরসিংদী ॥ মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের ডাকে নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিলস ও ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুটমিলস-এ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ৯৬ ঘণ্টার শ্রমিক ধর্মঘট। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দীর্ঘদিনেও মেনে না নেয়ায় ইউএমসি জুট মিলসের উত্তেজিত শ্রমিকরা বিভিন্ন সেøাগানে মিল গেটের সামনে জামতলায় অবস্থান করাসহ বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। এ সময় শ্রমিকরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত মিল গেট সংলগ্ন আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রাখে। ইউএমসি জুট মিলস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সফিকুল ইসলাম মোল্লা জানান, ইতিপূর্বে বহুবার মাসব্যাপী নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারকে দ্রুত শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মজুরি কমিশনসহ ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তারা দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এই ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছেন।
×