ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবিতে কোন্দলে পুড়ল ছাত্রলীগের বৈশাখী আয়োজন

প্রকাশিত: ১০:০৫, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

 ঢাবিতে কোন্দলে পুড়ল ছাত্রলীগের বৈশাখী আয়োজন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে দুই দিনব্যাপী লোকসঙ্গীত ও কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে শুক্রবার দিবাগত রাত ও ভোরে উৎসবস্থলে দুই দফায় ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের ফলে কনসার্টের আয়োজন বাতিল করা হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিরোধের কারণেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। শোভনের অনুসারীরাই এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ অন্য সকল পক্ষেরই। অন্যদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন হলে শোভনের অনুসারীদের ওপর রাব্বানী, সাদ্দাম ও সনজিতের অনুসারীরা হামলা করেছে বলে দাবি করেছেন সভাপতি শোভন। শোভনের অভিযোগ, হলগুলোর প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির সঙ্গে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসাইনের কোন্দলের কারণে এ ঘটনার সূত্রপাত। শোভনের অনুসারীদের ভাষ্যমতে, সংগঠনের এত বড় আয়োজন। অথচ সভাপতি শোভনের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কোন ধরনের আলোচনা করেননি অন্য তিন নেতা রাব্বানী, সনজিত ও সাদ্দাম। আয়োজনের স্পন্সর কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড ‘মোজো’ এক কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়েছে। এই টাকার বিষয়েও শোভনকে জানানো হয়নি। শোভনকে বাদ দিয়েই পুরো উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। তারা আরও বলছেন, শোভন সভাপতি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের কারণে। বাকি তিনজন অতীতের বিদ্যমান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রাব্বানী, সনজিত ও সাদ্দামের তুলনায় শোভনকে প্রধানমন্ত্রী বেশি পছন্দ করায় ইষ্বার্ণিত হয়ে শোভনের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন বলে দাবি তার অনুসারীদের। জানা যায়, আকিজ ফুড এ্যান্ড বেভারেজ লি. এর উৎপাদনকৃত কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড ‘মোজো’র সহযোগিতায় দুই দিনব্যাপী লোকসঙ্গীত ও কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এতে জেমস, মিলা, ওয়ারফেজ, আর্টসেল ও ফিড ব্যাকসহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের সঙ্গীত পরিবেশনের কথা। মঞ্চ বানানোসহ সামগ্রিক প্রস্তুতি গুছিয়ে আনার মধ্যেই শনিবার ভোররাতে শোভনের একদল অনুসারী গিয়ে মঞ্চসহ মোজোর বিভিন্ন উপকরণে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ আসে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত মোজোর মার্কেটিং বিভাগের অপারেশন হেড (ব্র্যান্ড) আজম বিন তারেক বলেন, রাত ১টার পর এই হামলা হয়। ২০-২৫ জনের একটি দল এসে গন্ডগোল বাঁধাতে গেলে আমি তাদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করি। এর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরও ১০০-১৫০ জন এসে আমাকেসহ আমার ওয়ার্কারদের বের করে দেয়। ১০-১২ মিনিটের মধ্যে পুরো জায়গায় ভাংচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। হামলার কিছুক্ষণের মধ্যে কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন রাব্বানী, সনজিত ও সাদ্দাম। তবে এ সময় ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন কিংবা তার অনুসারী কোন নেতাদের দেখা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায়নি। তবে ২০-২৫ লাখ টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। এখানকার যত ব্রান্ডিং ছিল সব নষ্ট করে দিয়েছে, ৩৪টি ঘর ছিল সব ফেলে দিয়েছে। ছয়টি ঘর পুড়ে ফেলেছে। ২২টি ফ্রিজের মধ্যে ১৭টি ফ্রিজ ভাংচুর করেছে, ১টিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার সৌভাগ্য যে দামী জিনিসগুলো- সাউন্ড সিস্টেম আমি মাত্র গাড়ি থেকে নামিয়েছিলাম। না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হত। শনিবার সকালে দ্বিতীয় দফায় উৎসবস্থলে আবারও হামলা হয়। এতে দুই দফা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানায় স্পন্সর কোম্পানিগুলো। আজম বিন তারিক বলেন, কাল রাত এই ঘটনা ঘটার পর আমাকে অনেক রিকুয়েস্ট করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সবকিছু আন্ডার কন্ট্রোলে থাকবে। তাই আমি সবকিছু গুছিয়ে পুনরায় কাজ করা শুরু করলাম। সকাল ৮টার দিকে চারজন লোক হেলমেট পরে এসে আমাদের সাউন্ড সরানোর যে বক্স (যার দাম তেতাল্লিশ লাখ টাকা) সেখানে পেট্রোল বোমা মারে। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল। আমার সামনেই জিনিসগুলো পুড়ে দেয়া হয়েছে। তারপর তারা দ্রুত আবার মোটর বাইকে করে চলে যায়। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি প্রায় কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ক্যাম্পাসে প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখে কনসার্ট হয়। যারাই এখানে হামলা করুক, তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তবে আমি যাদের হামলা করতে দেখেছি, তারা সকলেই ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের অনুসারী। এদের মধ্যে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের আহসান, ছাত্রলীগের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য প্রদীপ চৌধুরী ও সম্ভবত মুহসীন হল ছাত্রলীগ সভাপতি জহির রায়হান সরকার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি শোভন বলেন, ঘটনার বিষয়ে পরে জানতে পেরেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা সাধারণত এর দায়িত্ব নিয়ে থাকে। অতীতেও তেমনটা ছিল। কিন্তু এবারে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তারা আমার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করলে কনসার্টের দায়িত্বে থাকা ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেই। শুরুতে ডাকসু এই কনসার্টের আয়োজন করে। কিন্তু বিষয়টা দেখতে খারাপ দেখা যায়, এ কারণেই ঢাবি ছাত্রলীগ সংযুক্ত হয়। অনুসারীদের হামলার অভিযোগকে অস্বীকার করেন শোভন। তিনি বলেন, এটি মূলত হলগুলোর প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির সঙ্গে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসাইনের কোন্দলের কারণে এ ঘটনার সূত্রপাত। শোভন আরও বলেন, ঘটনা শোনার পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের সঙ্গে কথা বলি। তাদের বলি যে, তোমরা দায়িত্বশীল জায়গায় আছ। এই জায়গা থেকে উস্কানি দিয়ে দায়িত্বহীন কাজ না করার আহ্বান জানাই। পরবর্তীতে বিভিন্ন হলে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। নেতারা কখনও এভাবে নেতৃত্ব দিয়ে উস্কানি দিতে পারে না। ঢাবির দুই হলে শোভনের অনুসারীদের ওপর হামলা ॥ লোকসঙ্গীত ও কনসার্টের আয়োজনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগর কিছু সময়ের মধ্যেই স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষারের কক্ষ ভাংচুর করার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের নির্দেশেই হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তুষার। উক্ত হলের ৩১৮ নাম্বার কক্ষে থাকেন সাদ্দাম হোসাইন। মাহমুমুদল হাসান তুষার বলেন, সাদ্দাম অতীতেও আমার কক্ষ দখল করতে চেয়েছিল। মল চত্বরের ঘটনাকে ইস্যু করে তিনি হল সংসদের ভিপি আব্দুল আলীম খানকে দিয়ে আমার কক্ষে তান্ডব চালিয়েছেন। তারা মোট তিনটা কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরবর্তীতে হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে তালা ভাঙ্গা হয়। এছাড়া সাগর হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে সে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে সাদ্দাম হোসেনকে মুঠোফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি। স্যার এফ রহমান হল ছাত্র সংসদের ভিপি আব্দুল আলীম খান বলেন, হল সাধারণ সম্পাদকের রুমে হামলার সময় মল চত্বরে ছিলাম। যারা মল চত্বরে অগ্নিসংযোগ করেছে, তারাই তুষারের রুমে হামলা করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
×