ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাকি ৪৫ লাখ এক মাসের মধ্যে দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

রাসেলকে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন গ্রীন লাইনের মালিক

প্রকাশিত: ১১:২০, ১১ এপ্রিল ২০১৯

রাসেলকে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন গ্রীন লাইনের মালিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রীন লাইন পরিবহনের নিচে পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেলকে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন পরিবহন কোম্পানির মালিক মোঃ আলাউদ্দিন। বাকি টাকা আগামী একমাসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এদিকে ভুল আসামি হয়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ডুমুরিয়া গ্রামের জাহালম জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কেমন আছেন এবং কীভাবে জীবন-যাপন করছেন সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জাহালমের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে তাকে আগামী বুধবার আবারও আদালত হাজির হতে বলেছে আদালতে। বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চগুলো এ আদেশ প্রদান করেছে। হাইকোর্ট এর আগে গ্রীন লাইন পরিবহনের নিচে পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেলকে বুধবারের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিল। সঙ্গে গ্রীন লাইন পরিবহনের মালিককেও আদালতে হাজির হতে বলেছিল। তবে মালিক আদালতে হাজির হওয়া পর্যন্ত টাকা না দেয়ায় দুপুরের মধ্যে কিছু টাকা হলেও পরিশোধ করতে মালিককে মৌখিক আদেশ দেয় হাইকোর্ট। সে অনুয়ায়ী ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে গ্রীন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। বাকি ৪৫ লাখ টাকা এক মাসের মধ্যে রাসেলকে বুঝিয়ে দিতে গ্রীন লাইনের মালিককে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পা হারানো রাসেল ও গ্রীন লাইন পরিবহনের মালিক হাজী মোঃ আলাউদ্দিনের উপস্থিতিতে আদালত বুধবার এই আদেশ দেয়। বুধবার বিকেলে আবার আদালত বসলে আইনজীবী অজি উল্লাহ পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক দেখিয়ে বলেন, এই চেক আমরা এখন হাতে হাতে দিতে চাচ্ছি। ১৫ তারিখ এটা ক্যাশ করা যাবে। বিচারক তখন বলেন, মাত্র ৫ লাখ টাকা নিয়ে এসেছেন। এতদিন হয়ে গেল। এ্যাক্সিডেন্টটা কবে হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকল, আপনারা কোন খোঁজ খবরও নিলেন না। এরপর রাসেল সরকারকে ডেকে বিচারক জানতে চান তার কোন ব্যাংক এ্যাকাউন্ট আছে কি না। রাসেল এ্যাকাউন্ট আছে জানালে বিচারক তাকে চেক নিতে বলেন এবং ওই চেক বুঝে নেয়ার বিষয়ে বিবাদী পক্ষকে লিখিতভাবে জানাতে বলেন। বাকি টাকা দিতে গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ কেন সময় চাইছে আদালত তা জানতে চাইলে অজি উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও এই মামলায় পক্ষভুক্ত হতে সুপ্রীমকোর্টে আবেদন করেছে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান তখন বলেন, ওসব আমরা শুনতে চাই না। এক মাস সময় দিলাম। এর মধ্যে বাকি টাকা দিয়ে দিবেন। সেই সঙ্গে রাসেলের অন্য পায়ের চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় আদালত। অজি উল্লাহ তখন বলেন, একটা এনজিও রাসেলের অন্য পায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবে। রাসেল আদালতকে বলেন, তিনি যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তখন তার বাবা ও ভাই গ্রীন লাইনের মালিকের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। সে সময় হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন হাজী আলাউদ্দিন। উনি যাওয়ার আগে বলেছিলেন, এসে বিষয়টা দেখবেন। বলেছিলেন- ‘দোয়া করে দেব’। কিন্তু খোঁজ খবর নেয়া বা টাকা দেয়া- কোনটাই তারা করেনি। এ সময় গ্রীন লাইনের মালিককে সামনে ডেকে বিচারক বলেন, আপনি একটা ব্যবসা চালান, আপনার পরিবহনের সুনাম আছে। আমরাও কখনও কখনও ওই পরিবহনে চড়েছি। ধরে নিলাম এই ঘটনায় তার দায় আছে, কিন্তু একটা দায় সবারই আছে। ওর চিকিৎসা করানোর একটা মানবিক দায়িত্ব আছে।’ হাজী আলাউদ্দিন তখন বলেন, রাসেল সরকারের ঘটনার পর আমিও পারিবারিকভাবে তিনটা এ্যাক্সিডেন্টের মুখোমুখি হয়েছি। আমার বড় ছেলের চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। আমার স্ত্রীর কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। আমিও এক মাস ধরে অসুস্থ। আমার যে ব্যবসা, তা এখন লসে আছে। আদালতের আদেশের পর রাসেল সরকার সাংবাদিকদের বলেন, টাকা বড় কথা না। সব থেকে বড় কথা হল মানুষের একটা অঙ্গ। যে অঙ্গ একমাত্র ওপরওয়ালা ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না। আমি যদি আজ পাঁচ কোটি টাকা দিয়েও পা লাগাই, তাহলেও আমি আগের জীবনে ফিরে যেতে পারব না। গতবছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীন লাইন পরিবহনের বাসচালক প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের দেহ থেকে বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর অস্ত্রোপচার করে তার বাম পা কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনায় রাসেলের বড় ভাই আরিফ সরকার বাসচালক কবির মিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ওই দিনই মামলা করেন। পা হারানো রাসেলের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম, গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা। ওই দুর্ঘটনার পর সরকারী দলের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি আইনজীবী এ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি গতবছরের ১৪ মে হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন। রিটের শুনানিতে চলতি বছরের ৬ মার্চ রাসেল আদালতকে বলেছিলেন, পা হারানোর পর এখন পর্যন্ত গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ তাকে একটি টাকাও দেয়নি। খোঁজখবর নেয়নি, চিকিৎসার ব্যয়ও বহন করেনি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রাসেলকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। জাহালম কেমন আছেন জানতে চায় হাইকোর্ট ॥ ভুল আসামি হয়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ডুমুরিয়া গ্রামের জাহালম জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কেমন আছেন এবং কীভাবে জীবনযাপন করছেন সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জাহালমের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে তাকে আগামী বুধবার আবারও আদালত হাজির হতে বলেছে আদালত। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। জাহালমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার নথি তলবের বিষয়ে শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে জাহালমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোঃ খুরশীদ আলম খান। পরে আমিত দাসগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে আছেন, তার জীবন-জীবিকা কীভাবে চলছে তা জানতে আগামী বুধবার নিয়ে আসতে বলেছেন আদালত। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বুধবার সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত ৩৩টি মামলার নথি হাইকোর্টে জমা দেয়ার কথা ছিল। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সকালে একটি মামলার সম্পূরক নথি আদালতে জমা দিয়ে শুনানির জন্য বেলা ২টা পর্যন্ত সময় চেয়ে বলেন, জাহালমকে নিয়ে সিনেমা তৈরি করতে চেয়েছিলেন একজন পরিচালক। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সিনেমা না বানাতে অন্য কোর্ট থেকে একটা আদেশ নিয়েছিলাম। সেই কোর্টে মূল (রিট মামলা) মামলাটির নথি রয়েছে। ‘৩৩টি মামলার মধ্যে আমরা একটি মামলার সাপ্লিমেন্টারি দিচ্ছি। সবগুলো মামলার নথি সংগ্রহ করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এ বিষয়টা বিবেচনায় নিয়ে শুনানি ২টায় রাখলে ভাল হয়। আদালত তখন বলে, ‘আপনাকে আরও ৩২ মামলার কাগজপত্র দিতে হবে। ২টায় না ৩টায় রাখলাম। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার নিজেদের অসুবিধার কথা জানিয়ে শুনানি ‘নট টুডে’ করার অনুরোধ জানান। পরে আগামী বুধবার দিন রাখা হয়।
×