ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি হতাশ

ঐক্যফ্রন্ট জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে যাবে না

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১০ এপ্রিল ২০১৯

ঐক্যফ্রন্ট জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে যাবে না

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করতে চায় বিএনপি। কিন্তু ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকলে সেখানে অংশ নিতে নারাজ। ইতোমধ্যেই বিএনপি নেতাদের এ কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই দফায় দফায় সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনের চেষ্টা করলেও বাস্তবে এ যাত্রায়ও আন্দোলনে যেতে পারছে না বিএনপি। সূত্র জানায়, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিএনপির সিনিয়র নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করে। সর্বশেষ সোমবার রাতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকেও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুগপৎ আন্দোলন করবে। গণতন্ত্র রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সূত্র মতে, সোমবার রাতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা কথা বলেছেন। এ সময় তারা জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করতে চাইলে বিএনপির সঙ্গে সে আন্দোলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থাকবে না বলে জানিয়ে দেন। তাই আপাতত খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এককভাবে আন্দোলন করে এগিয়ে যাওয়া সহজ নয়। তাই সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের চেষ্টা চলছে। ২০ দলীয় জোটে এখনও জামায়াত আছে। তাই জোটগত কর্মসূচী তাদের বাদ দিয়ে পালন করা সম্ভব নয়। এ কারণে যদি কোন সমমনা দল বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করতে না চায় তাহলে ওই দলের বিষয়। তবে আন্দোলন ছাড়া যে কোন দাবি আদায় করা সম্ভব নয় তা এতদিনে সব দলগুলোই উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই আমরা মনে করছি সব সমমনা দলেরই যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হওয়া উচিত। তা না হলে বিএনপিকে একা হলেও আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো বার বার আন্দোলন কর্মসূচী দেয়ার হুমকি দিলেও জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচন করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের পথে না গিয়ে চুপসে যায় বিএনপি। কিন্তু দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইচ্ছায় সম্প্রতি আবারও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে সরব হয় বিএনপি। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি সমমনা বিভিন্ন দলের নেতারাও অবিলম্বে আন্দোলন শুরুর ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া এক পর্যায়ে দলের তৃণমূল নেতারা বিএনপি মহাসচিবকে আন্দোলন কর্মসূচী দেয়ার জন্য ঘিরে ধরেন। তবে শীঘ্রই আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া হবে জানিয়ে তিনি তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে মুক্তি পান। জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ৩০ ডিসেম্বর বিকেল থেকেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলন কর্মসূচীর বিষয়ে মতামত নেয়া হয়। কিন্তু কোন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারাই তখন আন্দোলন কর্মসূচী পালনে সায় দেননি। তাদের যুক্তি ছিল এমনিতেই তারা মামলায় জর্জরিত হয়ে নানামুখী হয়রানির শিকার তার ওপরে নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর আন্দোলন কর্মসূচী শুরু করলে আরও বেশি নাজেহাল হতে হবে। তবে সম্প্রতি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মনোভাব কিছুটা পাল্টেছে বলে জানা গেছে। অবশ্য গতবছর ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে দলের পক্ষ থেকে আন্দোলন কর্মসূচী দিতে চাইলে খালেদা জিয়া নিজেই তখন আন্দোলন থেকে বিরত থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করার নির্দেশ দেন। এর ফলে বিএনপি তখন তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচী ছাড়া আর কোন কর্মসূচী পালন করেনি। এক পর্যায়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কাছাকাছি চলে এলে আন্দোলন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বাদ দিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে ধর্ণা দেন। এই দুই প্রবীণ নেতাই বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর নির্বাচনী জোট করতে সম্মত হন। তবে তারা শর্ত দেন বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে আসতে হবে। বৃহত্তর জোটে আসম রবের নেতৃত্বাধীন জাসদ, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও আনার চেষ্টা করা হয়। বার বার বলার পরও বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অধ্যাপক ডাঃ বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা বৃহত্তর জোট গঠন প্রক্রিয়া থেকে সরে যায়। কিন্তু জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকলেও তাদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করতে সম্মত হয় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতবছর ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা চাঙ্গাভাব ফিরে আসে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপিসহ এ জোটের অন্যান্য শরিক দল গণফোরাম, জাসদ, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্যও অংশ নেয়। প্রথম দফায় ১ নবেম্বর এবং দ্বিতীয় দফায় ৭ নবেম্বর সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপের পর বিএনপি দাবি আদায়ে আন্দোলনের কথা বাদ দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনেই পুরোদমে নির্বাচনমুখী হয়। তবে নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপির তৃণমূল নেতারা আবার কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। অবশ্য নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনও জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন। তিনি এও বলেন, ভবিষ্যতে জামায়াতকে নিয়ে আর রাজনৈতিক কোন কর্মসূচী পালন করবে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু বিএনপি কিছুতেই জামায়াতকে ছাড়তে নারাজ। তাই তারা কৌশলে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলেন। তবে ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কিছু নেতা বিএনপির এ কৌশল বুঝেই এ ধরনের আন্দোলনের বিরোধিতা করেন। এদিকে আন্দোলনের আগে সরাদেশের সর্বস্তরে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে দল পুনর্গঠনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে বিএনপি। এ জন্য ইতোমধ্যেই বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে তারা। রাজপথের আন্দোলনে থাকতে পারবে এমন নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের দাবি উঠলেও তারেক রহমান রাজি না থাকায় আপাতত তা হচ্ছে না।
×