ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখী ভাতার চেক ছাড়

পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারী সুখবর পেলেন

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১০ এপ্রিল ২০১৯

পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারী সুখবর পেলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পহেলা বৈশাখের আগেই সুখবর পেলেন দেশের পাঁচ লক্ষাধিক এমপিওভুক্ত বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। সরকারের ঘোষণা অনুসারে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে নতুন করে চালু করা বৈশাখীভাতা পেলেন তারা। মঙ্গলবার বৈশাখী ভাতার চেক ছাড় করা হয়েছে। বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা হিসেবে আটটি চেকের মাধ্যমে এ অর্থ নির্ধারিত চারটি ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীও শিক্ষা উপমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শিক্ষক সমাজ। অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে নতুন করে চালু করা বৈশাখীভাতা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন বেসরকারী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। নতুন পেস্কেল ঘোষণার পর সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে চাকরিজীবীদের সে অনুসারে বৈশাখীভাতা চালু হতেই এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা একই দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু বৈশাখীভাতা তারা পাচ্ছিলেন না। ফলে নতুন স্কেলে বেতন পেলেও এক পর্যায়ে নতুন স্কেলে বৈশাখীভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েন তারা। শুরু করেন আন্দোলন। এরপর গেল বছরের শেষ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ঘোষণা আসে। কিন্তু তাও কার্যকর না হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে আবার আন্দোলন শুরু হলে দ্রুত ঘোষণা কার্যকরের কথা জানানো হয়। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার এলো সুখবর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন পে স্কেলে বৈশাখীভাতা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নতুন স্কেলের সুবিধাভোগী, তাই তারাও বৈশাখীভাতা পাবেন এটা ছিল স্বাভাবিক। তবে একটু দেরিতে হলেও ভাতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে এটাই স্বস্তির। বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখীভাতা হিসেবে আটটি চেকের মাধ্যমে এ অর্থ নির্ধারিত চারটি ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) উপ-পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মোঃ রুহুল মমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ১৪২৬ বঙ্গাব্দের বৈশাখীভাতা প্রদান করা হয়েছে। এ বাবদ ২০ শতাংশ বৈশাখীভাতার চেক ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। বণ্টনকারী ব্যাংক হিসেবে অগ্রণী, রূপালী, জনতা ও সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দুটি করে মোট ৮টি চেকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈশাখীভাতার টাকা তুলতে পারবেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈশাখীভাতা বাবদ একবছরে ১৭৭ কোটি ২৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয় হবে। গত বছরের ৮ নবেম্বর বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বৈশাখীভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী। উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইনসহ অন্যরা। সভা শেষে মোঃ সোহরাব হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসরকারী শিক্ষকদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখীভাতা ও ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে বেসরকারী শিক্ষা খাতে এক বিপ্লব ঘটে গেল। সোহরাব হোসাইন আরও জানান, আগামী বৈশাখ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈশাখীভাতা পাবেন। এ বাবদ এক বছরে ১৭৭ কোটি ২৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয় হবে। পাঁচ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির জন্য বছরে ব্যয় হবে ৫৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় এ টাকা বরাদ্দ রেখেছে। অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী ইনক্রিমেন্ট দেয়া হবে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর গত বছর থেকেই শিক্ষকরা ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। এবার পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মূল বেতনের ২০ শতাংশ ‘বৈশাখীভাতা’ পেলেন। সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বেসরকারী সকল শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনই। শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন শিক্ষক সমাজের নেতৃবৃন্দ। নিয়োগের দাবিতে এনটিআরসিএর সামনে বিক্ষোভ ॥ বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগ বঞ্চিতরা নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে এ দাবি জানান নিয়োগবঞ্চিতরা। ছয় মাসের ডিপ্লোমাধারী আইসিটি বিষয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীরা এ সময় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুলিশ তাদের রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়াতে বললে কর্মসূচী স্থগিত করেন তারা। নিয়োগ বঞ্চিতদের দাবি, ৬ মাসের ডিপ্লোমায় আইসিটি বিষয়ে সরকারী শিক্ষক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ সুপারিশের জন্য আবেদন করেছিলেন তারা। সুপারিশপ্রাপ্তও হয়েছিলেন। পেয়েছিলেন সুপারিশপত্রও। কিন্তু এরপর হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এনটিআরসিএ সনদ যাচাইয়ের মাধ্যমে তাদের যোগদান করাতে বলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। গত ১২ জুন জারি হওয়া এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুসারে সুপারিশপ্রাপ্তদের শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে বলা হয়েছিল। তাই, ৬ মাসের ডিপ্লোমায় আইসিটি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। নিয়োগের দাবিতে একটি প্রতিনিধি দল এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেনের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। নিয়োগ বঞ্চিতদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন চেয়ারম্যান। প্রতিনিধি দলের নেতা ওসমান গণি বলেন, চেয়ারম্যান স্যার বলেছেন, নীতিমালা মন্ত্রণালয় করেছে, সে প্রেক্ষিতে তাদের কাছে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন। নিয়োগের সুপারিশপত্র পেয়েও আমরা নিয়োগ পাইনি। এ কারণে আমরা হতাশ। আমরা সরকারের উচ্চ মহলে আমাদের দাবি মেনে নেয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
×