ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনায় ৬ হাজার হেক্টরে চিটা

হাওড়ে কোল্ড ইনজুরি আক্রান্ত বোরো

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১০ এপ্রিল ২০১৯

হাওড়ে কোল্ড ইনজুরি আক্রান্ত বোরো

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে ॥ আগাম বন্যার আশঙ্কায় উচ্চ ফলনশীল জাতের (উফশি) ব্রি-২৮ ধান চাষ করে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাওড়ের কৃষকরা। পরাগায়ন মৌসুমে কাক্সিক্ষত তাপমাত্রা না থাকায় এসব জমি ‘কোল্ড ইনজুরিতে’ আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আক্রান্ত জমির ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলের চার উপজেলার অন্তত ৬ হাজার হেক্টর জমি কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে- খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ, মদন ও কলমাকান্দা। সূত্র মতে, এসব উপজেলার ২ হাজার ৫শ’ ২০ হেক্টর জমি সম্পূর্ণভাবে আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ এসব জমি থেকে কোন ধানই পাবেন না কৃষকরা। বাকি ৩ হাজার ৪শ’ ৮০ হেক্টর জমি থেকে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ ভাগ ধান পাওয়া যেতে পারে। সব মিলিয়ে ২৩ হাজার ৪শ’ ৩০ টন ধান কম উৎপাদন হবে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। এদিকে জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও কিছু কিছু জমি কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাই আক্রান্ত জমির পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা। উৎপাদনের এ অবস্থা দেখে এখন চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন তারা। কৃষি বিভাগ জানায়, গাজীপুরে অবস্থিত কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি টিম সম্প্রতি দুইবার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি এবং মদনের হাওর এলাকার বোরো জমি পরিদর্শন করেন এবং কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা সমস্যাটিকে ‘কোল্ড ইনজুরি’ বলেই শনাক্ত করেন। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক বছরের আগাম বন্যার কারণে হাওড়াঞ্চলের কৃষকরা ব্রি-২৮ ধান আবাদের দিকে ঝোঁকে পড়েছেন। কারণ- এ জাতের ধান অপেক্ষাকৃত আগে ফলে। এতে আগাম বন্যার ঝুঁকিও কম থাকে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে- অপেক্ষাকৃত আগে ফলন পাওয়ার আশায় অনেক কৃষক নির্ধারিত সময়ের আগেই বীজতলা তৈরি এবং চারা রোপণ করে ফেলেন। যারা অগ্রহায়ণের শেষ থেকে পৌষের শুরুর দিকে জমি রোপণ করেছেন- তাদের জমিই কোল্ড ইনজুরিতে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। কারণ এসব জমিতে ঠিকমতো পরাগায়ন হয়নি। কৃষি বিভাগের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, পরাগায়ন মৌসুমে অন্তত ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রার দরকার পড়ে। কিন্তু ওই কৃষকদের জমি যখন পরাগায়নের স্টেজে আসেÑ তখন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম ছিল। যারা কিছুটা দেরিতে অর্থাৎ পৌষের শেষের দিকে আবাদ করেছেনÑ তাদের জমিতে কোল্ড ইনজুরি দেখা দেয়নি। মদনের কয়ার হাওরের কৃষক রুবেল, আব্দুর রশিদ ও তলার হাওরের কৃষক হারেছ তালুকদার এবং মন্নাফ মিয়া জানান, ‘আগাম বন্যার ভয়ে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার একটু আগেই জমি আবাদ করেছিলাম। কিন্তু ঠা-ার কারণে ধানে চাল হয়নি। ধানের বদল চিটা হয়ে শীষ মরে যাচ্ছে। অন্যান্যবার যে জমিতে একর প্রতি ৭০-৮০ মণ ধান পেতামÑ এবার সেখানে ১৫-২০ মণ করে পাব বলেও মনে হচ্ছে না। মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপুতা এবং খালিয়াজুরির কীর্তনখোলা ও পাঙ্গাসিয়া হাওরেও দেখা যাচ্ছে এমন চিত্র। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান হাওড় এলাকার বোরো জমিতে কোল্ড ইনজুরির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘যারা নির্ধারিত সময়ের আগে জমি রোপণ করেছেন- কেবল তাদের জমিতেই এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য জমির উৎপাদন ভাল হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু কিছু জমির ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।’ ভবিষ্যতে কোল্ড ইনজুরি থেকে মুক্ত থাকতে কৃষকদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমি আবাদ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। জানা গেছে, এ বছর জেলার ১০ উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৯শ’ ৫২ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬শ’ হেক্টর। এর মধ্যে রয়েছে- ২৩ হাজার ৮শ’ হেক্টরে হাইব্রিড, ১ লাখ ৬০ হাজার ৪শ’ ৮০ হেক্টরে উফশি এবং ৩শ’ ২০ হেক্টরে স্থানীয় জাতের ধান।
×