ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গম আবাদে অন্তরায় আবহাওয়ার অসামঞ্জস্যতা

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ৯ এপ্রিল ২০১৯

গম আবাদে অন্তরায় আবহাওয়ার অসামঞ্জস্যতা

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ আবহাওয়ার অসামঞ্জস্যতায় গম আবাদে কৃষক বেশ বেকায়দার পড়েছেন। তারপরও গম উদ্বৃত্ত এলাকা বগুড়ায় আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। তবে কৃষকের কথা : শীতকালীন আবহাওয়া অতীতের মতো থাকলে গমের আবাদ আরও বাড়ানো যাবে। বর্তমানে গম গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) কয়েকটি জাতের গম অবমুক্ত করা হয়েছে। এগুলোতে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ২ দশমিক ৫৫ মে.টন। আবহাওয়াজনিত কারণে গমের আবাদ আশাতীত হচ্ছে না। দানাদার (সিরিয়াল) খাদ্যশস্য গমের আবাদ গত শতকের ৯০’র দশকের শুরুতে অনেক বেশি ছিল। খাদ্য তালিকায় গম দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্যে স্থান পায়। পরবর্তী সময়ে শীতের সময়কাল অনেক কমে উষ্ণ আবহাওয়ার আধিক্যে কৃষক ঠাহর করতে পারছিল না গম আবাদ করবে কিনা। শীতের সঙ্গে গরম থাকলে গমের ফলন কমে যায়। তার ওপর গম ওঠার মৌসুমে কামলাকিষান পাওয়া যায় না। গমপাতা ধারাল হওয়ায় কৃষি মজুররা কাটতে অপরাগতা প্রকাশ করে। গ্রামীণ জীবন উন্নত হওয়ায় শ্রমিকরা কাজের বিকল্প সংস্থান করতে পেরেছে। নানাবিধ কারণে গম আবাদের কৃষক অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানাচ্ছে, গম সাধারণত বেলে দোঁয়াশ মাটিতে ভাল ফলে। বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনট উপজেলায় গমের আবাদ বেশি। এই সময়টায় (এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ) গমের মাড়াই-কাটাই প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি অর্থবছরে বগুড়ায় গম আবাদের টার্গেট করা হয় ২ হাজার ১শ’ হেক্টর জমি। উৎপাদন আশা করা হয় ৫ হাজার ৩শ’ ৫৫ মে.টন। কৃষক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গমের আবাদ করে। যে পরিমাণ ২ হাজার ৬শ’ ৮৩ হেক্টর। গম উৎপাদন হওয়ার কথা ৬ হাজার ৮শ’ ৪১ মে.টন। কৃষক ও কৃষি বিভাগ আশাবাদী নির্দিষ্ট পরিমাণ গম উৎপাদিত হবে। কারণ এবার শীত মৌসুম নির্ধারিত সময় পর্যন্ত না থাকলেও আবহাওয়া শীতল ছিল। যা এখনও আছে। সারিয়াকান্দির কৃষক রফিকুল ইসলাম বললেন, এবার গমের ফলন ভাল পেয়েছেন। একটা সময় উত্তরাঞ্চলে গমের অধিক আবাদ হতো। দিনাজপুরে গম গবেষণা কেন্দ্র থেকে উফশী জাতের গম উদ্ভাবন করা হয়। কৃষকদের কাছে গম ছিল দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) প্রতিটি মৌসুমে উৎপাদন উপযোগী নানা জাতের ধান উদ্ভাবন হওয়ায় গম চাষ কিছুটা কমেও গিয়েছিল। সুসংবাদ হলো- ফিরে আসছে সেই গম। বগুড়ার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহসিন আলী জানালেনÑ বগুড়া অঞ্চলে গমসহ অন্যান্য দানাদার খাদ্যশস্যের জমি বেড়েছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর। মাঠে বারি ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ জাতের গম আবাদ হয়েছে। এই জাতের গমে হেক্টর প্রতি উৎপাদন আড়াই মে.টন থেকে ৩ মে.টন। হালে যবের আবাদ বাড়ছে। যবের ছাতু স্বাস্থ্যসম্মত। যবে হৃদ ও ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ ধরনের খাবার ‘ওটস’ তৈরি হচ্ছে। গমের আটার কদরও বাড়ছে। মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে দুই বেলা রুটি ও এক বেলা (দুপুরে) ভাত খাচ্ছেন। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ আছে তাদের এই পথ্য মেনে চলতে হয়। চিকিৎসকগণের কথা : ভাতে আছে অধিক পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট। যা দেহের ওজন বাড়ায়। সুস্থ মানুষেরও ভাত কম খাওয়া ভাল। কৃষি কর্মকর্তা জানালেন, গম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতি উপজেলায় প্রদর্শনী প্লট করা হয়। কৃষক গম চাষে উৎসাহি হয়ে আবাদ কার্যক্রম বাড়ায়।
×