ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাজ ভাসে না

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৯ এপ্রিল ২০১৯

জাহাজ ভাসে না

সীমাহীন অবহেলা, ঔদাসীন্য এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যহীনতার নিদর্শন হয়ে ওরা ভাসছে নদীতে। অলস বসে থাকায় জং ধরে যাচ্ছে যেন সবকিছুতে। টানা দু’বছর ধরে ‘নট নড়ন চড়ন’ অবস্থা তাদের। অথচ দুবছর আগেই তাদের পণ্য পরিবহন করার কথা। এই চার জাহাজের করুণ ক্রন্দন হয়ত শুনতে পায় কর্ণফুলী নদী। হয়ত নদী তীরবর্তী প্রবহমান বাতাসে ভেসে যায় তাদের গুমরে ওঠা কান্নার ধ্বনি। কিন্তু তাতে সুরাহা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এদের কেনা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার পানগাঁও বন্দরে কন্টেনার পরিবহনে সংযুক্ত এই চারটি জাহাজের ভবিতব্য বোধ হয় জানে না কেউ। ২০০৯ সালে চারটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। তিন বছরের মধ্যে এগুলো হস্তান্তর হওয়ার কথা ছিল। সংগ্রহ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এগুলো পানিতে ভাসার কথা ছিল। কথা ছিল পণ্যবাহী কন্টেনার পরিবহনের। দুর্ভাগ্য যে, নবনির্মিত জাহাজগুলো পেতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। টানা সাত বছর পর ২০১৭ সালের জুনে জাহাজগুলো হাতে পায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন বা বিআইডব্লিউটিসি। প্রাপ্তির পরও তারা গত দুই বছরে এগুলো চালু করেনি। ফলে এসব জাহাজ গ্রহণের পর থেকেই নোঙর করে আছে কর্ণফুলী নদীতে। গত দু’বছরেও জাহাজ চতুষ্টয় মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের তালিকাভুক্ত হয়নি। জাহাজগুলো বন্দরে তালিকাভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু দু’বছরেও সে কাজের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে এসব জাহাজ চালু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ওঠানামা করা প্রায় ৭০ শতাংশ কন্টেনার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর। কন্টেনার পরিবহনে সড়কের ওপর থেকে চাপ কমাতে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ঢাকার পানগাঁওয়ে একটি কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ করে। একই সঙ্গে স্বল্প খরচে কন্টেনার পরিবহন ও কন্টেনার পরিবহন ব্যবহার উন্নতি এবং রাজস্ব আয় বাড়াতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় চারটি জাহাজ সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পায় ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর। অনুমোদিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী চারটি জাহাজ সংগ্রহে ২০১০ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর একনেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাহাজ চারটি তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বান ছাড়াই চট্টগ্রাম ড্রাইডক ও খুলনা শিপইয়ার্ডকে কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু বেসরকারী শিপইয়ার্ড মালিক সমিতি সরকারী প্রতিষ্ঠানকে বিনা দরপত্রে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলা জটিলতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ ছিল। ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর রায় সরকারের পক্ষে আসে। প্রকল্প সংশোধন করে ১৫১ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়। এ সময়েও প্রকল্প শেষ না হওয়ায় মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। দুটি প্যাকেজে জাহাজগুলো সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে দুটি চট্টগ্রাম ড্রাইডক এবং দুটি জাহাজ খুলনা শিপইয়ার্ডের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়। উদ্দীপন এক্সপ্রেস, উদয়ন এক্সপ্রেস, উন্নয়ন এক্সপ্রেস ও উত্তরণ এক্সপ্রেস নামক এই চারটি জাহাজ নির্মাণ সংস্থাদ্বয় ২০১৭ সালে হস্তান্তর করে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সক্রিয় হলে পণ্য পরিবহন কাজের গতি বাড়ত। বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন দেশের স্বার্থে।
×