ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তোপের মুখে মোদি সরকার

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ১ এপ্রিল ২০১৯

 তোপের মুখে মোদি সরকার

গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেয়া প্রতিশ্রুতির ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়িত হয়নি বলে মনে করছে বিরোধী শিবির। সে সময় মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে বছরে দুই কোটি ভারতীয় চাকরি পাবে। তবে তার সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে কিন্তু কোথায় সেই চাকরি- এ কথা বলে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসসহ অন্যরা বিজেপি নেতাদের তীব্র সমালোচনা করছেন। এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী জনসভার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিল বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন সমিতির মাঠ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মমতা প্রশাসন সেই জায়গা বদলে শিলিগুড়ির রেলওয়ে মাঠে মোদির জনসভার জায়গা ঠিক করে দেয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, রাজ্যে কেমন শাসন চলছে এবার বুঝুন। কারণ এখানে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। খবর এনডিটিভি, পিটিআই ও আনন্দবাজার অনলাইনের। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবারের লোকসভা নির্বাচনে আমেথির পাশাপাশি কেরালার ওয়ানাদ আসন থেকে ভোটে লড়বেন। রবিবার সকালে কংগ্রেস নেতা এ কে এ্যান্টর্নি এই কথা জানান। এই প্রথমবারের মতো দুটি আসন থেকে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন রাহুল। রাহুলের এই সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যেই কটাক্ষের বাণ আসতে শুরু করেছে বিজেপি শিবির থেকে। বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, আমেথিতে হেরে যাবেন, সেটা জানেন বলেই একটা ভয় থেকেই কেরালার ওয়ানাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকেও দাঁড়াচ্ছেন রাহুল গান্ধী। বিজেপির এই ধরনের মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন আখ্যা দিয়ে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সূর্যেওয়ালা বলেন, মোদি যখন গুজরাট ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন, এই অভিযোগ তো তখনও করা যেত। স্মৃতি ইরানি চাঁদনি চক এবং আমেথিতে হেরে গিয়েছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী মোদির এই কর্মসংস্থান প্রতিশ্রুতিকেই লোকসভা ভোটের প্রধান ইস্যু করতে চাইছেন। সরকার সন্ত্রাস মোকাবেলা থেকে অন্যান্য ইস্যুতে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলেও ভারতে চাকরি ও মানুষের রোজগার নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের শক্তি প্রদর্শন করছেন, মানুষের আবেগ নিয়ে খেলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা কোনভাবেই তরুণদের চাকরির মতো বাস্তব সমস্যা থেকে তাকে নজর ঘোরাতে দেব না। মোদির ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’- স্লোগানের বদলে টুইটারে ‘ম্যায় ভি বেরোজগার’ স্লোগান তুলেছে কংগ্রেস। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, এত চাকরি হয়ে থাকলে মোদি সরকারকে এনএসএসও-র সমীক্ষা লুকোতে হচ্ছে কেন? লোকসভা ভোটের আগে এই কর্মসংস্থান ইস্যুতে ক্ষমতাসীন শিবির যে সত্যিই চাপে রয়েছে তা কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার ভোটের মাঠে নামাতে আরও স্পষ্ট হয়েছে। মোদি সরকারের নতুন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন নানা সরকারী প্রকল্পের পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলেন, মোদি সরকারের পাঁচ বছরে চাকরির সংখ্যা ১২ শতাংশ বেড়েছে। তবে এর পাল্টা জবাবে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেন, এনএসএসও বলছে, ৪ কোটি ৭০ লাখ চাকরি খোয়া গিয়েছে। বেকারত্বের হার ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। এই প্রশ্নের উত্তরে মোদি কি জবাব দেবেন? কৃষ্ণমূর্তি তার দাবি প্রমাণে ভারতের ১০ মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান তৈরির সরকারী প্রকল্পের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। যেমন কৌশল বিকাশ যোজনা, প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান তৈরি প্রকল্প, দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনা ইত্যাদি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বহু মানুষের চাকরি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে তিনি এটাও মেনে নিয়েছেন যে শুধু নতুন চাকরি নয়, ভাল মানের চাকরি তৈরিটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র শামা মহম্মদ বলেন, মোদি সরকার তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যত নষ্ট করেছে। তাই ৩ হাজার ৭শ’ পিএইচডি ডিগ্রীধারী বেকার পিয়নের চাকরি চেয়ে আবেদন করেছে। ১৪টি ঝাড়ুদার পদের জন্য ৪ হাজার এমবিএ ও ৮২ লাখ স্নাতকোত্তর ও ইঞ্জিনিয়ার হেল্পারের চাকরি চাইছেন।
×