ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে ভোক্তারা ৭০ শতাংশ বেশি দামে ভোগ্যপণ্য কিনছে

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ১০ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশে ভোক্তারা ৭০ শতাংশ বেশি দামে ভোগ্যপণ্য কিনছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় বাংলাদেশে নিম্ন ও মধ্যবর্তী ভোক্তাদের ভোগ্যপণ্য কিনতে ৭০ শতাংশ বেশি মূল্য গুণতে হয় বলে জানিয়েছেন কমনওয়েলথ সচিবালয়ের সাবেক প্রধান ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের পণ্যমূল্যের ব্যবধান কমাতে পারত তাহলে দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্যের সংখ্যা যে হারে কমছে সেটা আরও ত্বরান্বিত হতো।’ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আয়োজিত ‘টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য পরিষদের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের মূল্য ৭০ শতাংশ বেশি হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবর্তী ভোক্তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে।’ এটি দেশের দারিদ্র্য হ্রাসের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘দেশে পণ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশ অনেক তলানি থাকার কারণে আশানুরূপ বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। কারণ পণ্য বিক্রি করে যে পরিমাণ লাভ করা সম্ভব ব্যবসা শুরু করতেই প্রায় সে পরিমাণ ব্যয় করতে হয়।’ এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত হতে চাই। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী বেশকিছু ভাল পরিকল্পনা নেয়া হলেও স্বল্পমেয়াদী ভালমানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।’ এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন টেন্ডার আহ্বান করলে এমন সব শর্ত জুড়ে দেয় যে, টেন্ডারে নতুনরা অংশগ্রহণই করতে পারে না। এমনকি কেউ ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শোধ না করলে তারা একটা ক্লাবে ঢুকে যায়। ফলে অটো তাদের ঋণ রিডিউল হয়ে যায়। অথচ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় লস করলে দেউলিয়া হয়ে যেতে হয়। তাদের এক্সিটের কোন উপায় থাকে না।’ সরকারকে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান জানান ব্যবসায়ী এ নেতা। শফিউল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও লাভ করে। তারা বেসরকারী ব্যাংকের সুদে স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুদের পার্থক্য) ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশে শিল্প খাতে ঋণের সুদ হারই হচ্ছে ২ শতাংশ। এভাবে অধিক সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা শিল্প স্থাপন করতে পারবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে ৭০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে হবে। এ আয়ের অধিকাংশই বেসরকারী খাত থেকে আসবে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অবশ্যই সরকারকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারী খাতের উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ কমিশনের চেয়ারপার্সন ইকবাল খান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আরও বক্তব্য দেন বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম।
×