ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নীল যমুনার বুকে সবুজ সমুদ্রের ঢেউ...

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ৯ মার্চ ২০১৯

নীল যমুনার বুকে সবুজ সমুদ্রের ঢেউ...

বাবু ইসলাম ॥ ধু ধু বালিয়াড়িতে সবুজের সমারোহ। চারদিকে সবুজ আর সবুজে ছেয়ে গেছে যমুনার বুকচিরে জেগে ওঠা জমি। মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের পাতা। এ যেন নীল যমুনার বুকে সবুজ সমুদ্রের ঢেউ। সবুজ ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে দুলে ওঠে কৃষকের হৃদয়। গোলা ভরা ধানের যে স্বপ্ন কৃষক এতদিন দেখছিল তা যেন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। যমুনার নাব্য ফিরিয়ে আনতে ২০১৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জে নদী ড্রেজিং করে। কিন্তু ড্রেজিংয়ের মাটি কোথায় ফেলা হবে তার কোন পরিকল্পনা ছিল না। প্রকৌশলীদের বুদ্ধিমত্তায় চারটি ক্রসবার বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ পরিকল্পনায় যমুনার ভাঙ্গন থেকে জেলা সদর যেমন রক্ষা হবে তেমনি পুনরুদ্ধার হবে যমুনার বুকে বিলীন হওয়া জমি। ক্রসবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর যমুনাপারের সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, ছোনগাছা, খোকশাবাড়ি ও কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। এসব অঞ্চলের সর্বস্ব হারানো কৃষকের মনে বইছে আনন্দের সুবাতাস। নতুন করে ফিরে পাওয়া বাপ-দাদার ভিটা-মাটিতে বসবাস ও চাষাবাদ করছেন তারা। ধান, গম, আখ, ভুট্টা, চীনাবাদাম, কালাইসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে এখানে। এছাড়া নিজ বাড়িতে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন কৃষাণীও। খুশিতে উৎফুল্ল খোকসাবাড়ির কৃষক বায়েজিদ বলেন, বাবার প্রায় ১৫ বিঘা আবাদি জমি এক সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছিল। নদী ভাঙ্গনরোধে যমুনার বুকচিরে ক্রসবার বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে জেগে উঠেছে আমাদের বাড়িসহ প্রায় পাঁচ বিঘা জমি। এই জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। গাঢ় সবুজ পাতাগুলো দেখে মনে হচ্ছে ফলনও খুব ভাল হবে। নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব খোয়ানো শত শত কৃষক এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নেমেছেন। একটি জমিতে একই সঙ্গে একাধিক ফসল উৎপাদন করছেন এ অঞ্চলের কৃষক। চরাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় মাঠভরা ফসল, গোলাভরা ধান আর যমুনার রূপালি মাছ ছিল চরের মানুষের ঘরে ঘরে। গত দুই যুগ ধরে নদীভাঙ্গন আর প্রলয়ঙ্করী বন্যায় একে একে সবকিছুই যমুনার গর্ভে চলে যায়। ধীরে ধীরে সহায়সম্পত্তি সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে কৃষক। সব হারিয়ে শহররক্ষা বাঁধের ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতেন চরবাসী। পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষায় চারটি ক্রসবার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি যমুনার গর্ভ থেকে উদ্ধার হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হয়। ক্রসবাঁধ নির্মাণ হওয়ার পর আরও চার হাজার হেক্টর জমি নতুন করে চাষযোগ্য হয়েছে। এসব জমিতে ধান-গমের পাশাপাশি ব্যাপকহারে ভুট্টা ও চীনাবাদাম আবাদ করছেন কৃষক।
×