ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন

মুখ থুবড়ে পড়ছে গণতন্ত্র

প্রকাশিত: ১১:৩১, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মুখ থুবড়ে পড়ছে গণতন্ত্র

বিশ্বে গণতন্ত্র ক্রমেই মুখ থুবড়ে পড়ছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার প্রভাব পড়েছে অন্য দেশের ওপর। ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ফ্রিডম ইন দি ওয়ার্ল্ড ২০১৯ শীর্ষক ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে প্রত্যেকটি দেশের অবস্থা পৃথকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৮ সালের অবস্থা ছিল হতাশাব্যঞ্জক। ৬৮টি দেশে রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের অবনতি ঘটেছে, উন্নয়ন হয়েছে ৫০টি দেশে। প্রতিবেদনে যেসব দেশের সমালোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে আছে রাশিয়া, ইরান, আজারবাইজান, মন্টেনিগ্রো, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি ও সাবেক তিনটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র। এই দেশগুলোতে টানা ১৩ বছর ধরে গণতন্ত্রের অবনতি ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনের শুরুতে একটি কার্টুন দেয়া হয়েছে। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সৌদি যুবরাজ বিন সালমানসহ কয়েকটি দেশের নেতৃবৃন্দের ছবি দেয়া হয়েছে যারা বিভিন্নভাবে ‘ফ্রিডম’ বা মুক্তি নস্যাতে সহযোগিতা করছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে যুক্তরাষ্ট্র এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী । তবে গত আট বছরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দুর্বল হয়েছে। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের আইনের শাসন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও গণতান্ত্রিক বিভিন্ন রীতিনীতির ওপর হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে মার্কিন গণতন্ত্রের মান ব্রিটেন বা জার্মানির চেয়ে নিচে নেমে গ্রিস, ক্রোয়েশিয়া ও মঙ্গোলিয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। উল্লেখ্য, ফ্রিডম হাউসের তহবিলের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র সরকার জোগান দিয়ে থাকলেও ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকা-ের সমালোচনা এতে করা হয়েছে। যার মধ্যে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান গ্রহণের বিষয়টি আছে। সম্প্রতি মধ্য ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে প্রচুর সংখ্যক শরণার্থী হেঁটে ও অন্যান্য উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো সীমান্তে গিয়ে আটকা পড়ে। ফ্রিডম হাউস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র শরণার্থীদের সঙ্গে কি আচরণ করে তা অন্যান্য দেশ গভীরভাবে লক্ষ্য করে থাকে। ফ্রিডম হাউসের প্রধান মাইকেল আব্রামোভিচ বলেন, মার্কিন গণতন্ত্রের অবনতি সারাবিশ্বে গণতন্ত্রের অবনমন ঘটিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রে ধস কেবল ট্রাম্পের সময় শুরু হয়নি। তার সময়ে এটি গতিশীল হয়েছে। কারণ তিনি প্রতিষ্ঠিত ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ওপর প্রায়ই বাগাড়ম্বর করে থাকেন। বিভিন্ন দেশে ভিন্ন মতাবলম্বী বা মানবাধিকার কর্মীদের বেশি হারে দেশান্তরী বা স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুতিন এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ গত বছর ভোটে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের উভয়েরই নির্বাচনী কৌশল প্রায় একই রকম ছিল। উভয়ই শক্তি প্রয়োগ করে মিডিয়া ও সুশীল সমাজের মুখ বন্ধ রাখেন। বিরোধীদের কথা বলার সুযোগ রাখেননি। অনেকটা রাষ্ট্র ক্ষমতার জোরে পদ ধরে রেখেছেন। যেসব দেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় তদের একটি হলো আর্মেনিয়া। সেখানে গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধী সংস্কারপন্থী নেতা নিকোল পাশিনিয়ান নির্বাচিত হয়েছেন। হাঙ্গেরি, সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রোর অবস্থা আগের প্রতিবেদনে ইতিবাচক থাকলেও গত বছর তার অবনতি ঘটেছে। প্রতিবেদনে লাখ লাখ জাতিগত কাজাখ (উইঘুর) ও হুইদের অবদমিত করার জন্য চীনের সমালোচনা করা হয়েছে।
×