ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কোম্পানিগুলো এখানে আইটি পণ্য বানাবে, ২৫ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে ॥ মন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে ৯ কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি সই

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে ৯ কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি সই

ফিরোজ মান্না ॥ গাজীপুর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের জন্য দেশী-বিদেশী নয়টি প্রযুক্তি কোম্পানি চুক্তি করেছে। মোবাইল, ল্যাপটপ, কমিউনিকেশন ডিভাইস, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, আইওটি, বিপিও, ট্রেনিং সেন্টার, ডাটা সেন্টারসহ বিভিন্ন আইটি পণ্য তৈরি করবে এরা। আর এসব পণ্য তৈরির জন্য ২৫ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্প্রতি কোম্পানিগুলোর পৃথক চুক্তি সই হয়েছে। আইসিটি খাতে বেসরকারী পর্যায়ে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে। যাতে দেশী-বিদেশী কোম্পানি বিনিয়োগে আগ্রহী হন। এমনিতেই তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে বিনিয়োগের পরিবেশ এই মুহূর্তে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। আমরা ’২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বে উপস্থাপন করতে চাই। সরকারের এই রূপকল্প বাস্তবায়নে আইসিটি খাতে দক্ষ জনবলও তৈরি হচ্ছে। হাইটেক পার্কগুলো পুরোপুরি অপারেশনে এলেই দেশ অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে। আমরা যদি তুলনামূলক হিসেবে দেখি তাহলে দেখা যাবে, ’১৪ সালে দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো ১৫০ জিবিপিএস। বর্তমানে যার পরিমাণ ৮৫০ জিবিপিএসর (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) বেশি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। ’১৭ সালের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৩৫০ জিবিপিএস। একই বছরের আগস্টে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২১ জিবিপিএসে। এই হারে ব্যান্ডউইথ বাড়তে থাকলে আগামী মার্চে এক টেরাবাইটে (১০২৪ জিবিপিএস) পৌঁছবে। বছর শেষে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে এক হাজার ২শ’ জিবিপিএস। মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের তরুণরা বিশ্বে অন্যতম মেধাবী। এই তরুণ সমাজের হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাবে। আমি একবার একটা সিম্ফনির কারখানায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি সবাই বাংলাদেশের তরুণ। প্রথমে মনে করেছিলাম, সবাই হয়ত বিদেশী হবে। একটি মেয়ে সেখানে কঠিন ডিভাইস তৈরি করছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কোন বিষয়ে পড়েছ। সে বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। এতেই বোঝা যায় বিষয় কোন ফ্যাক্টর নয়। সবাই এখানে কাজ করতে পারবে। আমরা ডিজিটাল ডিভাইস বানিয়ে রফতানি করতে পারব। আমি মনে করি দেশী-বিদেশী এই ৯ কোম্পানিতে দেশের ২৫ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আবার অনেকেই বিশ্বমানের তথ্য প্রযুক্তিবিদ হয়ে বের হতে পারবেন। সরকারের ভিশন ’২১-এর মধ্যে দেশ পুরোপুরি ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে। আমাদের তরুণ-তরুণীরা সরকারের লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্র মতে, রবি আজিয়াটা, জেনেক্স, বিজেআইটি সফটওয়্যার, ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস অটোমেশন, নাসডাক টেকনোলজি ও জেআর এন্টারপ্রাইজ-এই ৯ কোম্পানি পৃথক কারখানা তৈরি করবে হাইটেক পার্কে। কোম্পানিগুলোকে ইতোমধ্যে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হাইটেক পার্কে তারা আগামী ৪০ বছর বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানি পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। চুক্তিতে ২০ দশমিক ৫০ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয় নয় কোম্পানিকে। এর সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, আইওটি, বিপিও, ট্রেনিং সেন্টার, ডাটা সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে। দেশের শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা সহজেই কাজের সুযোগ পাবে। সরকার দেশে আইসিটি সেক্টরকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই সেক্টরে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে নানা ধরনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার তথ্যপ্রযুক্তিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে ঘোষণা করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ’১৮ সালে নেয়া এক বিলিয়ন ডলার আয়ের টার্গেট ইতোমধ্যে পূরণ করেছে। এখন ’২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। একই সময়ে ২০ লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী বা মানবসম্পদ তৈরি করা হবে। এই ২০ লাখ পেশাজীবী জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ জন্য সারাদেশে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চল থেকেও তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা যাতে কাজ করতে পারে এমন অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে।
×