ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয় দিয়েই লীগ শেষ সিলেটর

ঢাকাকে হারিয়ে শীর্ষে কুমিল্লা

প্রকাশিত: ১০:৩০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ঢাকাকে হারিয়ে শীর্ষে কুমিল্লা

মিথুন আশরাফ ॥ একদিকে উড়ছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। টানা চার জয় তুলে নিয়েছে। আরেকদিকে ডুবছে ঢাকা ডায়নামাইটস। টানা পাঁচ ম্যাচ হেরেছে। এই দুই দল শুক্রবার প্রথম ম্যাচে পরস্পরের বিপক্ষে লড়াই করে। চরম উত্তেজনাপূর্ণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের অসাধারণ বোলিংয়ের সামনে কুমিল্লার কাছে ১ রানে হেরেছে ঢাকা। এই ম্যাচ হারায় ‘প্লে-অফে’ ওঠার ক্ষেত্রে বিপত্তিতে আছে ঢাকা। আরেকদিকে এই ম্যাচে জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে কুমিল্লা। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে ২৯ রানে হারিয়েছে সিলেট সিক্সার্স। জয় দিয়েই লীগ শেষ করল সিলেট। হেরেও চিটাগং ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানেই যে থাকছে, তাও নিশ্চিত হল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের পঞ্চম ও শেষ পর্ব শুরু হয়েছে। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে চিটাগং আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিলেট ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে তা কাজেও লাগায়। লীগ থেকে বিদায় নেয়া সিলেট শেষ ম্যাচটি খেলতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৫ রান করে। ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার ৬৬, মোহাম্মদ নওয়াজ ৩৪ ও সাব্বির রহমান রুম্মন ৩২ রান করেন। বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার হারদুস ভিলজয়েন বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ৪ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে ১৮.৩ ওভারে ১৩৬ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় চিটাগং। মুশফিকুর রহীম ৪৮ রান করেন। এবাদত হোসেন ৪ উইকেট নেন। তাসকিন আহমেদ ১ উইকেট নিয়ে মোট ২২টি উইকেট শিকার করেন। আর ১ উইকেট শিকার করলেই এক আসরে সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার হতেন তাসকিন। কিন্তু ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। নিউজিল্যান্ড সফরের আগে ইনজুরিতে পড়লেন তাসকিন। ২ ওভার বোলিং করা তাসকিন শেষপর্যন্ত না থাকলেও সিলেট ঠিকই জিতে। দিনের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার বিপক্ষে লড়াই করে ঢাকা। টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তও নেয় ঢাকা। পেসার রুবেল হোসেনের গতিময় বোলিংয়ে কুমিল্লাকে ২০ ওভারে ১২৭ রানের বেশি করতেও দেয়নি সাকিবের ঢাকা। চার ব্যাটসম্যানই শুধু দুই অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারেন। সেই ইনিংসগুলোও আহামরি নয়। এরমধ্যে দুইজন আবার ২০ রানের বেশি করতে পারেন। ওপেনার তামিম ইকবাল ৩৮, মেহেদি হাসান ২০, শহীদ আফ্রিদি ১৮ ও ওয়াহাব রিয়াজ ১৬ রান করেন। প্রথম উইকেটে তামিম ও এভিন লুইস মিলে যে ৩৮ রানের জুটি গড়েন, সেটিই বড় জুটি হয়ে থাকে। ৮৭ রানে ৮ উইকেট পড়ার পর মেহেদি ও ওয়াহাব মিলে যদি ২২ রানের জুটি না গড়তেন, তাহলে এত রান করা সম্ভব হত না। এই রান ঢাকার সামনে কিছুই হওয়ার কথা নয়। কারণ, মিরপুরে সবসময়ই বড় স্কোর গড়তে দেখা গেছে ঢাকাকে। কিন্তু এদিন ম্যাচ সেরা সাইফউদ্দিন (৪/২২) বল হাতে এমনই ঝলক দেখান, তাতে কাত হয় ঢাকা। ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১২৬ রান করতে সক্ষম হয় সাকিবের দল। শুরুতে ২৯ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ঢাকা। মহাবিপদে পড়ে যায়। এরপর পঞ্চম উইকেটে গিয়ে দুই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান সুনীল নারাইন ও কাইরন পোলার্ড মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু দুইজনের জুটি ৪২ রানে পৌঁছাতেই নারাইনকে (২২) আউট করে দেন আফ্রিদি। তাতেও সমস্যা হয় না ঢাকার। পোলার্ড ও আন্দ্রে রাসেল যে উইকেটে থাকেন। ১৯ রান যোগ হতেই যখন পোলার্ডকে (৩৪) আউট করে দেন সাইফউদ্দিন, এরপর নুরুল হাসান সোহানকেও সাজঘরে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগান, তখনই বিপদে পড়ে যায় ঢাকা। শেষে ১৮ বলে জিততে ৩৭ রান লাগে ঢাকার, এমন মুহূর্তে আফ্রিদির টানা দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ঢাকাকে জয়ের আশায় ভাসান রাসেল। ১২ বলে জিততে তখন ২০ রান লাগে। ঢাকার জয়ের অনেক বেশি সুযোগ থাকে। কিন্তু ১৯তম ওভারে ওয়াহাব রিয়াজ এতটাই দুর্দান্ত বোলিং করেন, ওভারটিতে ৮ রানের বেশি নেয়াই যায়নি। সঙ্গে রাসেল ক্যাচ আউটও হয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াহাবের পা দাগের বাইরে থাকায় ‘নো’ হয়। তাতে বেঁচে যান রাসেল। ঢাকার সব আশা শেষ হয়ে গিয়েও যেন হয়নি শেষ! ৬ বলে জিততে তখন লাগে ১৩ রান। সাইফউদ্দিন বল হাতে নিয়ে এমন দুর্বার বোলিং করেন যে ১১ রানের বেশি নিতে পারেনি ঢাকা। তবে পঞ্চম বলে গিয়ে যখন রাসেল ছক্কা হাঁকান, তখন ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা আবার জাগে। বারবার নাটকীয়তা তৈরি হয়। কিন্তু কুমিল্লার জয় নিয়েই যে আসলে চিত্র তৈরি করা ছিল। শেষ বলে জিততে ৬ রান লাগে। তা নিতে পারেননি রাসেল। বাউন্ডারি হয়। শেষপর্যন্ত ১ রানে হারে ঢাকা। রাসেলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের জন্যই খেলায় এতটা উত্তেজনা তৈরি হয়। শেষপর্যন্ত রাসেল অপরাজিত ৩০ রান করেন। শেষ বলে রাসেলের পা পিছলে যায়। হাঁটু নিচু হয়ে যায়। তাই বলটি ভালভাবে মারতে পারেননি। চার হয়। কিন্তু দরকার ছিল ছক্কা। যা হয়নি। তাতে কুমিল্লার জয় হয়। পয়েন্ট তালিকায় সেরা দুই দলের একটি হতে পারলে ‘প্লে-অফে’ কোয়ালিফায়ার খেলার সুযোগ থাকবে। কোয়ালিফায়ার খেলার যোগ্যতা অর্জন করা মানেই হচ্ছে জিতলেই ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয়া। প্রথম কোয়ালিফায়ারে হারলেও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচটি জিতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করার সুযোগ মেলা। কুমিল্লা সেই সুযোগ করে নিল। ঢাকাকে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল। সেরা দুই দলের একটি হওয়াও নিশ্চিত করে নিল।
×