ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলার অবকাঠামো সম্পন্ন হতে আরও ২০ বছর

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলার অবকাঠামো সম্পন্ন হতে আরও ২০ বছর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার কাঠামো শেষ হতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। তবে দুই বছর পর প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও মেলার মাঠকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে আরও ১০ থেকে ২০ বছর সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার কাঠামোকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে ২০১৫ সালে চীনের সহায়তায় ৭৯৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার কমপ্লেক্স’ (বিসিএফইসি) নামের এ প্রকল্প নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণখালীর বাগরাইয়াটেকের ২০ একর জায়গার ওপর বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর পাঁচ বছরের মাথায় গত ২৮ জানুয়ারি (সোমবার) বিসিএফইসির প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার কাঠামোকে আন্তর্জাতিকমানের করে নির্মাণ করতে ২০ একর জায়গা যথেষ্ট নয়। লাগবে আরও ১৭ একর।’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৭৯৬ কোটি টাকার মধ্যে চীন সরকার ৬২৫ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার ১৭১ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, চীন সরকার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘চাইনিজ স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ নামের প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়।’ চীনা ওই প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজের অনেক কিছুই বাংলাদেশের মন মতো হচ্ছে না বলেও জানান বিসিএফইসির প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘চীন যে কাজগুলো করছে, তা তাদের ডিজাইন অনুযায়ী। এর অনেক জিনিসই আছে যেগুলো হয়ত আমরা আমাদের মন মতো ব্যবহার করতে পারব না।’ ২০২০ সালের মধ্যে ‘চাইনিজ স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’র নির্মাণ কাজ শেষ হলে পরবর্তী কাজ বাংলাদেশই করবে বলেও জানান রেজাউল করিম। তিনি আরও বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী জমি পেলে সেগুলো আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী করব। যাতে এটি সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিকমানের হয়।’ ইতোমধ্যে ২০ একরের বাইরে আরও ছয় একর জমি এ প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিসিএফইসি প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘২০ একর জমিতে প্রকল্পের কাজ চলছে। আমাদের জায়গার চাহিদা মোট ৩৭ একর। আগে ২০ একর পেয়েছি, পরবর্তীতে আরও ছয় একর দেয়া হয়েছে। সবমিলে এখন আমাদের ২৬ একর জায়গা আছে। আমরা আরও ১২ একর জমি চেয়েছি। এগুলো রাজউক আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।’ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ বছরও লাগতে পারে। এখন আমরা যেটা করছি, ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ করতে। আবার নতুন পরিকল্পনায় বিভিন্ন ধাপ থাকতে পারে। প্রথম ধাপ সম্পন্ন করতে এটার পর আরও তিন বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু এ এক্সিবিউশন সেন্টারকে পরিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে ২০ বছর নয়, কমপক্ষে আট থেকে ১০ বছর সময় লাগবে।’ ‘আমরা চাচ্ছি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে একটা ভালমানের হোটেল এবং আরও কিছু করার। যাতে সম্পূর্ণ ব্যবহার উপযোগী না হলেও মোটামুটি কিছু একটা দাঁড় করাতে পারি’- যোগ করেন প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম। গত ৮ জানুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন উপলক্ষে মেলা প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। এতে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সচিব মফিজুল ইসলাম, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা। বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেদিন সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার বেশিরভাগ অংশেরই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আপনারা দেখতে পাবেন, অচিরেই সেটা শেষ হলে আমরা সেখানে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ডরমেটরি থাকবে, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা থাকবে। আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা আমরা বাড়াতে চাচ্ছি। যারা বিদেশ থেকে এখানে এসে পণ্য প্রদর্শন করবেন, সেটাও করার ব্যবস্থা করছি। ২০২০ সালে সবকিছু শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।’ ঠিক ২০ দিনের মাথায় গত ২৭ জানুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আপাতত আগারগাঁওয়েই হবে। পূর্বাচলে (রূপগঞ্জ) মেলা হবে, তবে তা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে। শহরের বাইরে তো ওটা, যার কারণে ওখানে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা রেডি হয় নাই, অত জায়গাও নাই। নতুন যে জায়গাটা (রূপগঞ্জে) হবে সেখানে সারাবছর ধরে রফতানিমুখী পণ্য প্রদর্শন হবে। তবে বাণিজ্য মেলা আপাতত আগারগাঁওয়েই অনুষ্ঠিত হবে।’ ‘অভিযোগ রয়েছে, বাণিজ্য করতে ইপিবি নিজেই চায় না বাণিজ্য মেলাটা পূর্বাচলে হোক’- এমন অভিযোগের জবাবে গত ৮ জানুয়ারি বাণিজ্য সচিব বলেছিলেন, ‘রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো চায় না পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলা যাক, আমার মনে হয় এটা ঠিক নয়। একদমই ঠিক নয় যে, এটা বাণিজ্য করার জন্য। কারণ আপনারা দেখতে পাবেন, অচিরেই সেটা (নির্মাণকাজ) শেষ হলে আমরা সেখানে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করব।’ কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিআরটিসি বাসে ২৫ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল অংশের কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত। এখান থেকে বরাবর পাঁচ থেকে সাত মিনিট হাঁটলেই পাওয়া যাবে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার কমপ্লেক্সের অবস্থান।
×