ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যাযাবর জীবনাখ্যান ‘রহু চণ্ডালের হাড়’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

যাযাবর জীবনাখ্যান ‘রহু চণ্ডালের হাড়’ মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আর দশজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলে না তাদের জীবন। কোথাও স্থিতু হওয়ার পরিবর্তে ক্রমাগত স্থানান্তরিত হয় সে জীবন। তেমনই এক ভাসমান জীবনের পথ পাড়ি দেয় বেদে জনগোষ্ঠী। যাযাবর সেই জীবনের অন্যতম এক চরিত্র বাজিকর। আর সব বাজিকরই জানে ‘রহু চ-ালের হাড়’ কথাটাই ঐন্দ্রজালিক ও বুজরুকি। তবুও সব বাজিকরই এখনও রহু চ-ালের হাড়ের স্বপ্ন দেখে মনে মনে এবং বিশ্বাস করে তার সার্থক অস্তিত্ব¡ সম্ভব। এমনই গল্পের নাটক রহু চ-ালের হাড়। বর্ণনাত্মক রীতির আদলে নির্মিত হয়েছে আরশিনগরের দ্বিতীয় প্রযোজনাটি। অভিজিৎ সেনের উপন্যাস অবলম্বনে বিস্তৃত হয়েছে নাটকের কাহিনী। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন রেজা আরিফ। শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হয়। বাজিকরের সে এক ভিন্ন জীবন। বাঁশবাজি, দড়িবাজি, বান্দর নাচানো, কাঠের পুতুল নাচানো, বিচিত্র চিকিৎসা পদ্ধতিসহ অলৌকিকতার পসরা ঘুরে বেড়ায় সে জীবন। বাজিকরের নেই কোন ধর্ম। ভারতবর্ষের প্রায় দেড় শ’ বছরের ইতিহাসের সঙ্গে বাজিকরের পাঁচ পুরুষের পরিক্রমণ, থিথু হওয়ার চেষ্টা আর বিতারিত হওয়ার বেদনাগাথা নিয়ে আবর্তিত হয়েছে রহু চ-ালের কাহিনী। ঘটনার সময়কাল উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি। রাজমহলের গঙ্গার গড়ে ওঠে বেদে জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বাজিকরের অস্থায়ী ছাউনি। বাজিকরদের জীবনের প্রবাহমান বাস্তবতার চিত্র উঠে এসেছে নাটকটির গতিময় উপস্থাপনায়। সমগ্র ভারতবর্ষজুড়ে সাঁওতাল বিদ্রোহ যখন তুঙ্গে তখন কেমন করে যেন বাজিকরেরা মিশে যায় সেই বিদ্রোহের সঙ্গে। এমন প্রেক্ষাপটে সর্দার পীতেম চেয়েছিল থিতে হোক তার জীবন। এক টুকরো জমি হোক; হোক জাতপাতের পরিচয়। কিন্তু কোথায় হবে সেই স্থির দেশ আর স্থিতিশীল জীবন। তাই তো আকাক্সক্ষার সঙ্গে মেলে না বাস্তবতা। ধর্ষিতা হয় পীতেমের মেয়ে পেমা। বাজিকর পীতেম আর সালমার বেঁচে থাকার নিরন্তন চেষ্টা কিংবা লুবিনী জামিরের স্বপ্নময় ভালবাসার কথা নিপুণ নাট্যকৌশলে প্রাণ পেয়েছে নাটকে। পীতেমের ছেলে পরতাপের কৃষক হয়ে ওঠা কিংবা পেমা আর আনন্দের বিশ্বাস অবিশ্বাসের বিয়োগান্তক যে ক্যানভাস উঠে আসে নাটকে এক কথায় তা অসাধারণ। পাশাপাশি জামিরের জীবন সমুন্দ্রে রাধার আগমন, যেন মানুষের ভেতরকার দ্বৈতসত্তার শিল্পিত চিত্র। পরতামের মাঝেও জেগে ওঠে গৃহী হওয়ার বাসনা। পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায় সেই বাসনাকে। ঠিকই তখনই আবার গৃহস্থ মানুষ দ্বারা আক্রান্ত হয় বাজিকরের জীবন। দেদোন ঘোষের অত্যাচার আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তলিয়ে যাওয়া যাযাবর মানুষগুলো আবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে মহাকালের দিকে অগ্রসর হয়। এভাবেই এগিয়ে নাটকের কাহিনী। নাটকের রহু চরিত্রে রূপ দিয়েছেন আসাদুজ্জামান আবির। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বপ্নীল সোহেল, শ্যামাঙ্গিনী শ্যামা, শারমিন ডেইজি, ওয়াহিদ খান সঙ্কেত, নুসরাত জিসা, জৈজয়ন্তী খীসা, হৃদয় বসাক, পারজানা মুক্ত, তানজিম আহমেদ, প্রিন্স সিদ্দিকী, নাজমুল রিগান, নওরীন নিপু, হাসান অমিত, জিনাত জাহান নিশা, আইনুন পুতুল প্রমুখ। ড. সোমা মুমতাজের কোরিওগ্রাফিতে মঞ্চসজ্জা করেছেন আলী আহমেদ মুকুল। আলোক পরিকল্পনা করেছেন শাহীন রহমান। পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন রেজওয়ানা মৌরি রেজা।
×