ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুজব ছড়ানো ঠেকাতে পুলিশ চায় মোবাইল ফোনের সিম নিয়ন্ত্রণ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 গুজব ছড়ানো ঠেকাতে পুলিশ চায় মোবাইল ফোনের সিম নিয়ন্ত্রণ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ একের পর এক গ্রেফতার হচ্ছে গুজব ছড়ানোয় জড়িতরা। তারপরও থেমে নেই গুজব ছড়ানো। বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশ-বিদেশে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিতেই ‘পরিকল্পিত’ গুজব ছড়ানো হচ্ছে। রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে গুজবকেই বেছে নিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সহযোগীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে গত বুধবার পর্যন্ত গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত ৬১ জন গ্রেফতার হয়েছে। এদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গভীরভাবে মনিটরিংয়ের জন্য সেল খোলা হয়েছে। সেলগুলোর তৎপরতায় সাইবার ক্রাইম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। নিয়ন্ত্রণের জন্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা চাইছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা। বুধবার র‌্যাব-১০ এর হাতে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার হয় মোহাম্মদ আলী (২৮)। র‌্যাব-১০ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর আশরাফুল হক জানান, তার কাছ থেকে জব্দ মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হতো, যার প্রমাণ মিলেছে। মোহাম্মদ আলী ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় এমন পোস্ট দেয়া হয়েছে। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন পোস্ট দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। মন্ত্রী, রাজনীতিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়ানোর তথ্য মিলেছে। সে পরিকল্পিতভাবে দেশ-বিদেশে সরকার ও রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তাকে শূন্যের কোঠায় আনতে এমন অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল। সব মিলিয়ে আটক ৬১ জনের অধিকাংশই ছাত্র শিবিরের সদস্য। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলছেন, শুধু র‌্যাবের হাতেই সম্প্রতি ৩৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। যাদের অধিকাংশই স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। এদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ছাত্র শিবিরের সদস্য সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ খাতে জামায়াত রীতিমতো অর্থায়ন করে যাচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে এমন তথ্য মিলেছে। চক্রটি এতটাই ভয়ঙ্কর যে, তারা সেনাবাহিনী সম্পর্কেও গুজব ছড়ায়। যা দেশে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি রীতিমতো প্রশ্নের মুখে ফেলে। যদিও ফেসবুকে গুজব সম্পর্কে অনেকেই সচেতন। তারপরেও গ্রামের অনেক সহজ সরল মানুষ সম্পর্কে এমন গুজব ছড়ানোর কারণে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সম্পর্কেও মানুষ ভুল ধারণা পোষণ করে। র‌্যাব যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে। ধারাবাহিক অভিযানে গ্রেফতারও হচ্ছে। তারপরেও গুজব ছড়ানো থামছে না। যদিও সাইবার সিকিউরিটি আগের তুলনায় বেশি তৎপর হওয়ায় গুজবের মাত্রা অনেকটাই কমে এসেছে। আশা করছি, আস্তে আস্তে আরও কমবে। কারণ যারা গুজব ছড়াবে, তাদের মোবাইল নম্বরসহ অন্যান্য ঠিকানা সঠিক থাকলে এবং তারা যদি দেশে থাকে তাহলে অবশ্যই ধরা পড়তে বাধ্য। প্রযুক্তিগত অপরাধের সঙ্গে কোন না কোনভাবে মোবাইল ফোনের সংশ্লিষ্টতা থাকে। তাই সঠিক পরিচয়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলছেন, প্রযুক্তির অনেক সুবিধাজনক দিক আছে, আবার অসুবিধাও আছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হরহামেশাই গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। কারণ তারা দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করতেই পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ায়। তাদের গ্রেফতার করতে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যেই পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ চালু হয়েছে। সেসব বিভাগ সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা রাখছে। যে কারণে বর্তমানে গুজব ছড়ানোর মাত্রা অনেকটাই কমে গেছে। প্রকৃত মোবাইল ফোন নিশ্চিত করতে এবং মোবাইলে ব্যবহৃত সিম সঠিক ব্যক্তি ব্যবহার করছেন, কিনা তা নিশ্চিত করতে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তারা সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। কারণ শুধু সঠিক ব্যক্তি সঠিক মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড ব্যবহার করলে, অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে। বেনামী সিমকার্ড, চোরাই মোবাইল ফোন ও ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্টের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হলে প্রযুক্তিগত অপরাধ দিন দিন কমে আসতে বাধ্য। গুজবের বিষয়ে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ও সিআইডির মুখপাত্র মোল্যা নজরুল ইসলাম বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্র ও সরকারকেন্দ্রিক নানা অপপ্রচার, প্রপাগা-া ও গুজব ছড়ানোর ঘটনা ঘটেই চলেছে। গুছব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতরা গ্রেফতারও হচ্ছে। তারপরেও গুজব ছড়ানো থেমে নেই। তবে আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে সব ধরনের প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো কঠোরভাবে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১১২ ফেসবুক এ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। এসব এ্যাকাউন্ট অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, লিবিয়া ও সৌদি আবর থেকে ৬০ জন সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তি পরিচালনা করছে।
×