ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওসি প্রত্যাহার

না’গঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পোশাক শ্রমিক নিহত

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

 না’গঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে  পোশাক শ্রমিক  নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ বন্দরে শনিবার রাতে পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আশিক হোসেন (২১) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতে সাংবাদিকরা বিষয়টি নিশ্চিত করতে যোগাযোগ করলেও পুলিশ বিষয়টি গোপন রাখে। এই ঘটনায় পুলিশের একজন এসআইসহ আহত হয়েছেন ১৫ জন। ভাংচুর করা হয়েছে পুলিশের দুটি গাড়ি। এদিকে ঘটনাটি তদন্ত করতে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার বিকেলে বন্দর থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সরকারকে পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও ওয়্যারলেস সেট ছিনিয়ে নেয়া এবং সরকারী কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, শনিবার রাতে বন্দর থানা পুলিশের একটি দল উপজেলার মদনপুরের চাঁনপুর এলাকায় আসামি ধরতে যায়। এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান সমর্থক পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি দিপু ও সুজনকে আটক করে পুলিশ। ওই দুই আসামিকে গাড়িতে তুলে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে রাখে। এ সময় দিপু ও সুজনের সমর্থক লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে টেটা, বল্লম ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পুলিশকে মারধর করে তাদের কাছ থেকে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংঘর্ষে পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলীসহ ১৫ জন আহত হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগান থেকে ৮ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষের সময় আশিকুর রহমান বাবুল(২২) ও পথচারী পোশাক কারখানা শ্রমিক আশিক হোসেন (২১) গুলিবিদ্ধ হয়। পায়ে গুলিবিদ্ধ আশিক হোসেন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। অপর গুলিবিদ্ধ আশিকুর রহমান বাবুলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাবুল কমিল্লার জেলার বাইতোলা গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) আবাসিক চিকিৎসক আসাদুজ্জামান জানান, নিহত আশিকের বাম পায়ের উরুতে এবং কোমারের নিচে পেছনের অংশে একটি করে বুলেটের ক্ষত চিহ্নিত রয়েছে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্যই আশিক হোসেনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এলাকাবাসী জানান, নিহত আশিক পোশাক কারখানায় কাজ করে। রাতে বাজার করতে গেলে তার বাম পায়ের উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়। গুরুতর আহতাবস্থায় অনেক সময় সে ঘটনাস্থলে পড়েছিল। এ সময় অধিক রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। তবে পুলিশ আশিকের মৃত্যুর বিষয়টি রাতভর গোপন রাখে। সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। নিহত আশিক হোসেন লালমনিরহাট জেলাল শহীদুল ইসলামের ছেলে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা মদনপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পরিবহন চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানের সঙ্গে যুবলীগ নেতা আমির হোসের গ্রুপের বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরে ১৮ নবেম্বর দুপুরে প্রকাশ্যে দিবালোকে মদনপুর বাসস্ট্যান্ডের একটি দোকানের সামনে আমির হোসেনের সমর্থকরা খলিলুর রহমানকে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে খলিলুর রহমানের সমর্থকরা একত্রিত হয়ে আমির হোসের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালায় এবং ভাংচুর করে। ওই সময় সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর করে এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনায় খলিলুর রহমানের পক্ষে তার স্ত্রী বাদী হয়ে আমির হোসেনসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ্য করে মামলা করে। আর পুলিশ বাদী হয়ে একটি সরকারী কাজে বাধা প্রদান ও হামলার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। শনিবার ওই মামলার আসামি ধরতে গেলেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ বিষয়ে বন্দর থানার পরির্দশক (তদন্ত) হারুনার রশিদ জানান, পুলিশের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরাকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা ও ওয়্যারলেস সেট ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় পুুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২শ’-৩শ’ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত আশিক হোসেনের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা লাশ দাফন করতে লালমনিরহাটে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-২) সাজ্জাদ রোমন জানান, রবিবার বিকেলে প্রশাসনিক কারণে বন্দর থানর ওসি মোঃ আজহারুল ইসলাম সরকারকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-খ) খোরশেদ আলম জানান, দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আশিক নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার অনুসন্ধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল-মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির বাকি দুই সদস্যের মধ্যে আমি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম) ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিআইও-১) পরিদর্শক সরাফত উল্লাহ রয়েছেন। আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×