ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

দুই বাংলার হৃদয় ভরিয়ে ‘বাংলা উৎসব ২০১৯’

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

দুই বাংলার হৃদয় ভরিয়ে ‘বাংলা উৎসব ২০১৯’

কানায় কানায় দর্শক। কণ্ঠ কলাকুশলীদের সঙ্গে তাদের ঠোঁটস্থ গানের কলিগুলো গেয়ে চলেছেন। মঞ্চের কখনও বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দুর, ‘বন্ধু তোমায় এ গান শোনাব বিকেল বেলায়’ বা রূপঙ্করের ‘এ তুমি কেমন তুমি’ অথবা ইমনের ‘তুমি যাকে ভালবাস’। কখনও পঞ্চকবির সুরসুধা, কখনও বা আধুনিক গানের মায়াবী সুরের ঝরণাধারায় সিক্ত হলো কলকাতার দর্শক শ্রোতারা। সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের রাজনৈতিক রোষানলে বিভক্ত হয় জাতিসত্তা। সেই বিভাজনে বিভক্ত হতে হয় একই ভাষাভাষী নাগরিকদের। সেই সুবাদে কাঁটাতারের পৃথক সীমানায় বসবাস বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর। তবে ভাষার সেতুবন্ধে একই বৃত্তে মিলে যায় দুই দেশের সমভাষার মানুষেরা। দেশ পৃথক হলেও প্রাণের বাংলা ভাষায় প্রকাশ ঘটে জাতিসত্তার। বাংলা ভাষার সেই শেকড়কে উপজীব্য করে গত ৪ থেকে ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলা উৎসব ২০১৯। দক্ষিণ কলকাতার সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র রবীন্দ্র সরোবর। সুবিশাল এলাকা নিয়ে কৃত্রিম লেকের পাশে দাঁড়িয়ে এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আর এ কেন্দ্রের মধ্যমণি নজরুল মঞ্চে। কলকাতার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের পদচারণে মুখর ছিল গোটা এলাকা। সেখানে তৈরি করা হয়েছিল মিনি বাংলাদেশ। তিন দিনের এই উৎসব যৌথভাবে আয়োজন করেছিল বেঙ্গল গ্রুপ ও বন্ধন ব্যাংক। দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছিল বাংলা উৎসব। উৎসব উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, বন্ধন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চন্দ্রশেখর ঘোষ, বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট ইন্দ্রজিৎ সেন, নাথিং বিয়ন্ড সিনেমার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরিন্দম শীল, পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ। প্রথম দিন মঞ্চে গান করেছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নচিকেতা চক্রবর্তী, লোপামুদ্রা মিত্র, শুভমিতা, বাপ্পা মজুমদার, ফাহমিদা নবী, অনুপম রায় এবং প্রবুদ্ধ রাহা। উৎসবের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের শিল্পীরা নানা ধারার বাংলা গান পরিবেশন করে মুগ্ধতা ছড়ান কলকাতার শ্রোতামহলে। শুধু বাংলাদেশের শিল্পী নন, উৎসবে বর্ণিল সুরসুধায় রঙিন করেন কলকাতার শিল্পীরাও। প্রথম পর্বে গানে গানে মুগ্ধতা ছড়ান বাংলাদেশ ও ভারতের নবীন শিল্পীরা। প্রথমেই মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের তরুণ শিল্পী মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য ও ডলি ম-ল। পরে পর্যায়ক্রমে গান পরিবেশন করেন কলকাতার শিল্পী আকাশ ভট্টাচার্য ও অঙ্কিতা বসু। ভরাট কণ্ঠে তরুণ শিল্পী তূর্য গেয়ে শোনান ‘যেতে যেতে একলা পথে’, ও ধীরে ধীরে প্রাণে আমার’ শিরোনামের দুটি গান। চার তরুণের পরিবেশনা শেষে বিকালে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। তাতে বাংলাদেশের শিল্পীরা একচেটিয়াভাবে গান গেয়ে মুগ্ধ ও অভিভূত করেন কলকাতার শ্রোতাদের। লাইসা আহমদ লিসা, ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, খায়রুল আনাম শাকিল, অদিতি মহসিন, বুলবুল ইসলাম, চন্দনা মজুমদার গানে গানে যেন ছড়িয়ে দেন স্বর্গীয় আবেশ। সব শেষে লোকসঙ্গীতের সঙ্গে শ্রোতার অন্তরে ভাললাগার অনুভব ছড়ান তারুণ্যের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল চিরকুট। অদিতি মহসিন একে একে গেয়ে শোনান কবিগুরুর নানা পর্বের পাঁচটি গান। শুরুতেই তিনি পরিবেশন করেন ‘তোমায় গান শোনাব’ শিরোনামের গানটি। গানটি শেষ হতেই তুমুল করতালিতেই শ্রোতারা তাঁকে অভিনন্দন জানান। তারপর একে একে তিনি পরিবেশন করেন ‘ওগো আমার চির অচেনা পরদেশি’, ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলো ভাঙল ঝড়ে’, ‘আমার মন মানে না’ ও ‘তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা’ শীর্ষক গানগুলো। সমাপনী দিন পরিবেশনায় অংশ নেয় বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু। ঐ দিন বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গান শোনান রূপঙ্কর। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন দুর্নিবার সাহা। আধুনিক গানের সঙ্গে চলচ্চিত্রের গানে সুররসিকদের হৃদয় উদ্দীপ্ত করেন এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী ও ইমন চক্রবর্তী। গোপাল বর্মণকে সঙ্গী করে তালবাদ্য পরিবেশন করেন প-িত বিক্রম ঘোষ। সম্মিলিতভাবে ঐতিহ্যবাহী তালবাদ্য উপস্থাপন করবেন মোঃ মনিরুজ্জামান, অভিষেক মল্লিক, সত্যজিৎ মুখার্জি ও দশরথ দাশ। সবশেষে রাগাশ্রয়ী সঙ্গীত পরিবেশন করেন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী। সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী আরতি মুখার্জিকে ‘জীবনকৃতী সম্মান’-এ সম্মানিত করা হয় উক্ত অনুষ্ঠান থেকে।
×