ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনুভব করতে পারে যে বায়োনিক হাত

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

 অনুভব করতে পারে  যে বায়োনিক হাত

ইটালির রাজধানী রোমে বিজ্ঞানীরা এই প্রথম একটি বায়োনিক হাত তৈরি করেছেন যা স্পর্শ অনুভব করতে পারে এবং বড় খবর হচ্ছে, এই অনুভূতি পেতে হলে বায়োনিক এই হাতটি যে শুধু গবেষণাগারেই থাকতে হবে তা নয়, ল্যাবরেটির বাইরেও যে কোন জায়গাতেই এই অনুভূতি পাওয়া যাবে। এই বয়োনিক হাতটি যার শরীরে সংযোজন করা হয়েছে তার নাম আলমেরিনা মাসকেরেলো। প্রায় ২০ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় তিনি তার বাম হাত হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি বলছেন, তার মনে হচ্ছে, তিনি যেন তার সেই পুরনো হাত ফিরে পেয়েছেন। কৃত্রিম এই হাতটির আঙ্গুলে কিছু সেন্সর লাগানো আছে যার ফলে বোঝা যায় হাত দিয়ে যে জিনিসটি ধরা হয়েছে সেটি শক্ত নাকি নরম। এসব বার্তা যুক্ত থাকে পিঠের একটি ব্যাগে রাখা কম্পিউটারের সঙ্গে। কম্পিউটারটি এসব বার্তাকে একটি ভাষায় রূপ দেয় যা পড়তে পারে আমাদের মস্তিষ্ক। বিজ্ঞানীদের এই একই আন্তর্জাতিক দলটি ২০১৪ সালে বিশ্বের প্রথম বায়োনিক হাত তৈরি করেছিল যেটা অনুভব করতে পারে। কিন্তু সমস্যা ছিল ওই হাতের সঙ্গে যেসব সেন্সর এবং কম্পিউটার সামগ্রী লাগানো থাকতো সেগুলো এতো বড় ছিল যে ওই হাত নিয়ে ল্যাবরেটরির বাইরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন যে হাতটি তৈরি করা হলো সেটির প্রযুক্তি এতো ছোট যে সেটি একটি পিঠের ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে অনায়াসেই বাইরে চলে যাওয়া সম্ভব। এই গবেষণা দলে ছিলেন প্রকৌশলী, স্নায়ুুবিজ্ঞানী, শল্য চিকিৎসক, ইলেকট্রনিক্স ও রোবটিক্স বিশেষজ্ঞরা। যে তিনটি দেশের বিজ্ঞানীরা এই হাতটি তৈরি করেছেন সেগুলো হলো- ইটালি, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানি। আলমেরিনার হাতের ওপরের অংশে কিছু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ইলেকট্রোড বসানো হয়েছে। এসব ইলেকট্রোডের সাহায্যে বিভিন্ন তথ্য তার মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছায়। এই বায়োনিক হাতের দক্ষতা পরীক্ষার সময় আলমেরিনার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। তারপর তিনি যখন একটা একটা করে জিনিস হাত দিয়ে ধরছিলেন, তিনি বলতে পারছিলেন কোন জিনিসটা শক্ত আর কোনটা নরম। তিনি বলেন, ‘অনুভূতিটা খুবই স্বতঃস্ফূর্ত। মনে হবে এটাই যেন আপনার আসল হাত। এখন আপনি এমন সব কাজ করতে পারছেন যা এর আগে করা কঠিন ছিল। যেমন কাপড় পরতে পারছি, পায়ে জুতা গলাতে পারছি- এই পৃথিবীতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তার সবই করতে পারছি। এই বায়োনিক হাত লাগানোর পর মনে হচ্ছে আমি আবার একজন সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠেছি।’ বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহ এবং যন্ত্রের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই উদ্ভাবন বড় ধরনের এক অগ্রগতি। এ নিয়ে শুনুন যুক্তরাজ্যে মিডেলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক ড. শাহেদুর রহমানের সাক্ষাতকার। অডিওটি শুনতে হলে ওপরের লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন। আলমেরিনার শরীরে বয়োনিক হাতটি লাগানো ছিল ছয় মাসের মতো। কিন্তু হাতটি পরীক্ষামূলক হওয়ার কারণে এটি এখন খুলে রাখা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দলটি বলছেন, তারা আশা করছেন যে এই প্রযুক্তিকে তারা হয়তো আকারে আরও ছোট করে আনতে সক্ষম হবেন। আর তখন এই হাতটি বাজারেও বিক্রি করা হতে পারে। আলমেরিনাও বলেছেন, বয়োনিক হাতটি যখন পুরোপুরি নিখুঁত হয়ে উঠবে তখন তিনিও যান্ত্রিক এই হাতটি তার বাকি জীবনের জন্য ফেরত পেতে আগ্রহী।
×