ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নবম ও দশম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৮:০১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

নবম ও দশম শ্রেণির পড়াশোনা

শিক্ষক হাইমচর সরকারী কলেজ হাইমচর, চাঁদপুর। প্রথম অধ্যায় প্রস্তুতি-৫ সৃজনশীল ১। বাংলা আমার প্রাণের ভাষা এ ভাষাতে কথা বলে জুড়ায় মনের সকল আশা। আগামীকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে সৌমেন কবিতা আবৃত্তি করবে। তার বাবা কবিতাটি শেখাচ্ছেন। সৌমনের আবৃত্তি শুনে বড় ভাই মিলুর তার ছাত্র জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। ফেব্রুয়ারি মাসের এই দিনে ঢাকা শহরের ছাত্রজনতা বিশাল মিছিল নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। শুরু হয় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ। সেই গোলাগুলিতে অনেকে শহীদ হন। ক) ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় কত সালে? খ) ‘তমদ্দুন মজলিস ’ সংগঠনটির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর। গ) উদ্দীপকে মিলু ভাইয়ের মনে পড়া আন্দোলনটির প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা কর। ঘ) “বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে উক্ত আন্দোলন সকলে ঐক্যবদ্ধ করেছে।” তোমার মতাতম বিশ্লেষণ কর। ক) উত্তর : ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় ১৯৪৭ সালে। খ) উত্তর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস গঠিত হয়। এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এ সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল বাংলাভাষাকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা এবং বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা। তাই তো ৬-৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত যুবকর্মী সম্মেলনে ‘বাংলাকে শিক্ষা ও আইন আদালতের বাহন ’ করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর এ সংগঠন ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। এ সময় তমদ্দুন মজলিস ‘ভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে। গ) উত্তর : উদ্দীপকের মিলু ভাইয়ের মনে পড়া আন্দোলনটি ভাষা আন্দোলনের নির্দেশ করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচীতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে পূর্ব বাংলায় তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ওঠে, লেখালেখি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মিছিল, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারিসহ সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদের ভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের দাবি জানান। কিন্তু তা অগ্রাহ্য হয়। একই সালের ১৯ মার্চ গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ ৩০ জানুয়ারি ধর্মঘট পালন করে। ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট এবং ঐদিন রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারি এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪৪ ধারা জারিসহ সভা-সমাবেশ ও মিছিল এক মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় (ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখ চত্বর) একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় ১০ জন করে মিছিল শুরু করা হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিক থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে , মিছিলে লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এক পর্যায় পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে আবুল বরকত, রফিক, জাব্বার, সালামসহ আরও কয়েকজন শহীদ হন এবং অসংখ্য লোক আহত হন। ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালে প্রতিবাদ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে পরিণত হয়। ঘ) উত্তর : বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে উক্ত আন্দোলন সকলে ঐক্যবদ্ধ করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এটি ছিল বাঙালি জাতির প্রথম প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রেরণা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারের অবহেলা, বঞ্চনা ও শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবমাননা বাঙালির মনকে প্রবলভালে নাড়া দিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানের হাতে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি কোনকিছুই নিরাপদ নয়। তাই পাকিস্তানের প্রতি আগে যে মোহ ছিল তা দ্রুত কেটে যেতে থাকে নিজস্ব জাতিসত্তা সৃষ্টিতে ভাষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক এবং গুরুত্ব পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি হিসেবে নিজেদের আত্মপরিচয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি গড়ে তোলার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে থাকে। এরই ভিত্তিতে বাঙালি জাতি এক হতে থাকে এবং ভাষা আন্দোলন গড়ে তোলে। প্রথমে এ আন্দোলন শিক্ষিত ও ছাত্রসমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পূর্ব বাংলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণ করে। আর ভাষাকেন্দ্রিক এ ঐক্যই জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি রচনা করে। ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির জীবনে এমন একটি অধ্যায় যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা জাগ্রত হয় এবং বিকাশ ঘটে। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা সর্বপ্রথম নিজেদের একটি স্বতন্ত্র সত্তা, স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে ভাবতে শুরু করে। যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুতরাং বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশ ভাষা আন্দোলন সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
×