ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রার্থিতা বাতিল হওয়া আসনে পুনর্তফসিল দাবি ঐক্যফ্রন্টের

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

 প্রার্থিতা বাতিল হওয়া আসনে পুনর্তফসিল দাবি ঐক্যফ্রন্টের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকার ১৫ আসনে একই সময়ে জনসভা ও গণমিছিল, ২৭ ডিসেম্বর বেলা দুটায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও গণফোরামের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শুক্রবার পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারে ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল বলেন, পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের আচরণ ‘নজিরবিহীন’। ড. কামাল বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কোন ভোট হয়নি। এটা একটা আয়োজন ছিল। তারা বলেছিল, দ্রুত নির্বাচন দেবে, কিন্তু সেই দ্রুত সময় আর আসেনি। প্রহসন বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন, তা না হলে দেশে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হবে। তিনি বলেন, তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে দাবি করবেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। দয়া করে মিথ্যাচারের এই খেলা বন্ধ করুন। এটা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। সরকারকে বলব, এটা সম্পূর্ণ ভাঁওতাবাজি। যে কায়দায় করা হচ্ছে, সব স্বৈরাচারী শাসনকে হার মানিয়েছে। ড. কামাল বলেন, পাঁচ বছর পর নির্বাচন করছেন, এটা প্রহসনে পরিণত করবেন না। আগামীকাল থেকে খবর নেব, এই আচরণ বন্ধ হয়েছে কিনা। সংবিধানে লেখা আছে, পুলিশ কোন দলীয় বাহিনী হবে না। পুলিশ ভাইদের অনুরোধ করব, আপনারা পুলিশ ভাইয়েরা যা করছেন, ১৬ আনা নিরপেক্ষ পরিপন্থী। তা অবিলম্বে বন্ধ করুন। এটা করলে জনগণের মালিকানা থাকবে না, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দেবে। শুধু এটা নিশ্চিত করুন, আমরা বলছি না, আমাদের ভোট দিতে হবে। জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দিবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে দলটির সাবেক মন্ত্রী কামাল হোসেন বলেন, জোর করে নির্বাচিত হবেন, দাবি করবেন বিজয়ী হয়েছেন, এটা অর্থহীন। দেশের মানুষ চায় অবাধ নির্বাচন। এদেশের মানুষ অনেক জীবনের বিনিময়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে অতীতে। কিন্তু ৪৭ বছর পরেও ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এটা লজ্জাজনক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১৬ জন ধানের শীষের প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেসব আসনে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে, সেসব আসনে পুনঃতফসিলের দাবি জানাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। ইন্টারনেটের গতি কমানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে, এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৩টি নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থিতা শূন্য হয়ে গেছে বলে জানানো হয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে। প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে অভিযোগ করে জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে। পোস্টার ছিনিয়ে নেয়াসহ নির্বাচনী কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে। থানার ওসিরা নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাইছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির হোসেন প্রমুখ। বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও হামলার বিষয়ে সরকারকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন বলেন, মাথা ঠিক করেন, মাথা সুস্থ করেন, মাথা ঠান্ডা করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণকে ভোটাধিকার থেকে সরিয়ে দেয়া মানে স্বাধীনতার ওপর আঘাত করা। আপনারা এসব হামলা-মামলা বন্ধ করুন। এই নির্বাচনের আগে যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি না, তা গত ৩০-৪০ বছরে কখনও দেখিনি। পুলিশ এবং দলীয় কর্মীদের রাস্তায় নামিয়ে পেশিশক্তির ব্যবহার করে জনগণের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে সরকার। আমি ধরেই নিয়েছিলাম নির্বাচনের আগে কিছু তো হবেই, তবে এই অবস্থা দেখতে হবে তা কখনও ভাবিনি। অবিলম্বে এগুলো বন্ধ করা হোক। এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই বন্ধ করা হোক। গণফোরামের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের যত স্বৈরাচারী সরকার ছিল সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে এই সরকার। দেশের জনগণ যদি দেখে সরকার ভোটবাক্স দখল করে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে, তারা কখনও এই সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না। পুলিশের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, পুলিশের কর্মকান্ড আমি অবাক হয়েছি। সংবিধান লেখার সময় পুলিশের ভূমিকা লেখা হয়েছিল ‘নিরপেক্ষ’। পুলিশ কোনও দলের কিংবা রাষ্ট্রের হবে না। তবে এখনকার পুলিশ কাউকে বিরোধীদলীয় মনে করলেই ধরে ফেলে, অর্থাৎ সংবিধানে যে নিরপেক্ষ শব্দটি লেখা আছে, তার ষোল আনা পরিপন্থী কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ।
×