ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দু’শ’ গ্রামের বেশি ইয়াবা বহন করলে যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদন্ড ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

দু’শ’ গ্রামের বেশি ইয়াবা বহন করলে যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদন্ড ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনগত দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রকৃত মাদক অপরাধীরা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। এজন্য ১৯৯০ সালের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ২০১৮ করা হয়েছে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে নতুন আইনে মাদক সংক্রান্ত মামলাসহ অন্য আইনগত কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। জনপ্রিয় গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের আড়ালে আসা নতুন মাদক এনপিএস বা খাত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে এসব মাদক দেশে আসছে। তবে দেশে কোন মাদক উৎপাদন হয় না। সীমান্ত পথে এসব মাদক আসে। মাদক কারবারিরা এখনও তৎপর রয়েছে। বৃহস্পতিবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সেগুনবাগিচার নতুন ভবনে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’-এর প্রায়োগিক বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার জন্য কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ জামাল উদ্দিন আহমেদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনগত দুর্বলতা ও ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে প্রকৃত অপরাধীরা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। এছাড়াও নানা কারণে ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে সেই সুযোগ থাকছে না। যেভাবে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সফলতা এসেছে, একইভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সফলতা আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এজন্য আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুসারে মামলা দায়েরসহ অন্য কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। ইতোমধ্যেই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের মোট জনশক্তির ৯২ শতাংশই যুব সমাজ। যুব সমাজকে জাগ্রত করার ক্ষেত্রে বড় বাধা মাদক। নেশার ছোবলে যুব সমাজ কর্মশক্তি, সেবার মনোভাব ও সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা জাতির বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। নতুন নতুন মাদক দেশে আসছে। এর ব্যবহারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইয়াবা সমাজ ও পরিবার বিষিয়ে তুলেছে। দিনমজুর, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বিত্তশালী শ্রেণী থেকে শুরু করে নানা বয়সী ও পেশার মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ছে ইয়াবার নেশায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন আইনে মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোর সাজার বিধান রাখা হয়েছে। ২০০ গ্রামের বেশি ইয়াবা বহনকারীর সাজা যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদন্ড করা হয়েছে। মাদকের গডফাদার ও অর্থপাচার মামলায়ও শাস্তি রাখা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের জনবল ১৭শ’ ৬ জন থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৪২ জন করা হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকাসহ বিভাগীয় পর্যায়ের ছয়টি নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে নতুন রাসায়নিক গবেষণাগার চালুর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা চলছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা (সেবা) বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, মাদকের চাহিদা থাকলে সরবরাহ বাড়বেই। এই দুটিই কমিয়ে আনতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মামলা বাড়িয়ে লাভ নেই। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের মানসিকভাবে পরিবর্তিত হওয়ার আহবান জানান তিনি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ পরিচালিত কর্মশালায় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, সমাজসেবা অধিদফতর, পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্য বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×