ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফের ফোনালাপ

তারেক রহমানের আদেশ নির্দেশে ক্ষুব্ধ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

তারেক রহমানের আদেশ নির্দেশে ক্ষুব্ধ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করলেও লন্ডন থেকে তারেক রহমানের দেয়া আদেশ নির্দেশে ক্ষুব্ধ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিভিন্ন সময় তারেকের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ক্ষোভের কথা কম বেশি প্রচার হলেও মঙ্গলবার রাতে ফ্রন্ট নেতা ও ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেনের টেলিফোন আলাপে বেড়িয়ে এসেছে তারেকের বিরুদ্ধে ক্ষোভের চিত্র। ফোনালাপে তারেকের একক কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে জাফরুল্লাহর বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে বিএনপির পিরোজপুরের (আসন-১) দলীয় প্রার্থীকে জাফরুল্লাহ বলেছেন, তারেক সাহেব লন্ডন থেকে বইসা বইসা হুকুমনামা দেবেন, এইটা ঠিক না। ফোনালাপে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের কর্মচারীদের দ্বারা দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এক টেলিফোন আলাপে বলেছিলেন, আমরা তারেকের রাজনীতি ধংস করতেই ঐক্যফ্রন্ট করেছি। ডাঃ জাফরুল্লাহর একাধিক টেলিফোন আলাপ এর আগে ফাঁস হয়েছে। যেখানে বেরিয়ে এসেছে ঐক্যফ্রন্ট ও ব্যক্তিগতভাবে জাফরুল্লাহর নানা অপরাধের বয়ানও। তবে মঙ্গলবার রাতে ফাঁস হওয়া টেলিফোন আলাপ নিয়ে ইতোমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে প্রথমেই কল করেছেন ব্যারিস্টার সারোয়ার। ব্যারিস্টার সারোয়ার: স্যার আস্সালামু আলাইকুম, ব্যারিস্টার সারোয়ার বলছি। ডাঃ জাফরুল্লাহ: অ্যা, কে? ব্যারিস্টার সারোয়ার: স্যার, ব্যারিস্টার সরোয়ার, পিরোজুপর-১। ডাঃ জাফরুল্লাহ: জি বলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ। ব্যারিস্টার সারোয়ার: স্যার ওই যে টিটু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম, হোটেল লেকশোরে। ডাঃ জাফরুল্লাহ: হ্যাঁ হ্যাঁ। ব্যারিস্টার সারোয়ার: স্যার কালকে প্রথমে একটু ঝামেলা হইছিলো, পরে ঠিক হয়ে গেছে। রাত ১১টার সময়ে নমিনেশন পেপার পেয়েছি। ডাঃ জাফরুল্লাহ: অ্যা, পরে হইছে নমিনেশন? ব্যারিস্টার সারোয়ার: হ্যাঁ হ্যাঁ, পরে। প্রথমে একটু ঝামেলা করছিল, প্রথম স্যার। ডাঃ জাফরুল্লাহ: তাই? কেন? ব্যারিস্টার সারোয়ার: ঝামেলা করছিল, ওইখানে আমি জানি আমার সিদ্ধান্ত হইয়া আছে। কিন্তু তারা করছে কি, ্ওইখানে ওই ভিতর থেকে কোন ক্লার্ককে বা কেউ ম্যানুপুলেট হইয়া, ভিতরে এরকম আগেও হইছে, ওইখানে জেপি লেইখা রাখছে, জাতীয় পার্টি লেইখা রাখছে। পরে যখন মহাসচিবকে বললাম। পরে কারেকশন করে দিছে। এরকম ম্যানুপুলেশন আরও হচ্ছে। এদিকে খেয়াল রাইখেন। স্যার দোয়া কইরেন। ডাঃ জাফরুল্লাহ: একদিকে ম্যানুপুলেশন হচ্ছে আবার তারা (চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের কর্মচারীরা) ওভার ওয়াচ... কোন কিছু সিস্টেমেট্যাকালি করেনাই তো। ব্যারিস্টার সারোয়ার: স্যার এক্সাক্টলি। এই যে, যখন দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তারেক সাহেব এপ্রোভড করেছে। ঐড়ি ধ পষবৎশ ড়ৎ ড়ভভরপরধষ ংঃধভভ পযধহমব রঃ? কীভাবে একটা ক্লার্ক দলীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে? ডাঃ জাফরুল্লাহ: না না এইটাও খারাপ। তারেক সাহেব ওইখান থেকে বইসা বইসা হুকুমনামা দেবেন, তোমরা এইটা করনা... এইটা ঠিক না। এখানে নিজেদের কাছে কিছু ক্ষমতা ছাড়তে হবে। এটা না হলেতো... নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় না আসলে। এখানে অনেকে আছে নমিনেশন দিলে লাভ হতো। পুলিশের কাউকে নমিনেশন দেয়া হয় নাই। দিলে লাভ হতো। অথচ আওয়ামী লীগ দিছে। ব্যারিস্টার সারোয়ার : স্যার দোয়া কইরেন। আমি নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে যাচ্ছি পিরোজপুর। অন দ্য ওয়ে টু পিরোজপুর স্যার, দোয়া কইরেন স্যার। ডাঃ জাফরুল্লাহ: গুড লাক। এর আগে সম্প্রতি ছাত্রীদের দিয়ে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা দায়েরসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির নির্দেশ দিয়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণবিশ^বিদ্যালয় ঘিরে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে এলাকাবাসীদের নামে নিজেদের ছাত্রীদের দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দেয়ার নির্দেশ সংবলিত ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে ডাঃ জাফরুল্লাহ গণবিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মর্তুজা আলী বাবুকে ছাত্রীদের দিয়ে এক মৌলভীর বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের ও ছাত্রদের দিয়ে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই ফোনালাপে ডাঃ জাফরুল্লাহ তার প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মর্তুজা আলীকে ভাল খাওয়া-দাওয়াসহ নানা সুবিধা দিয়ে সাভারের প্রত্যেক থানায় লোকজন সংগঠিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, মারপিট করতে ৫০ জনের বেশি লাগে না। ২০টা ছাত্র রাখ ভাল করে খাওয়া-দাওয়া করাও। এখন একটু এগ্রেসিভ হও। এখন একমাত্র পথ হচ্ছে ওরা এক কদম বাড়লে আমাদের ২ কদম বাড়াতে হবে। এই আলাপে পরিষ্কার হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তাদের হয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলন তৈরিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মর্তুজা আলীকে বলতে শোনা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা নিপীড়নবিরোধী মানববন্ধন আছে। সেখানে আমাদের ছেলে মেয়েরাও যাবে। এরপর ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, হ্যাঁ, জাহাঙ্গীরনগরে প্রবেশ করাতে পারলে অনেক লাভ হবে।
×