ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইল-৮ আসনে কাদের সিদ্দিকীর মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে

প্রকাশিত: ২২:১৭, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

টাঙ্গাইল-৮ আসনে কাদের সিদ্দিকীর মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবার নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাসাইল এবং সখীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৮ নির্বাচনী আসন। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৪৫ জন। বিএনপির হেভিয়েট প্রার্থী বলে পরিচিত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান এ আসন থেকে নির্বাচন করে আসছেন। এই আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের অনুপম শাহজাহান জয়। তার পরিবর্তে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। সম্প্রতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করার পর তিনি এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনী কৌতূহল বেড়েছে। কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রতিষ্ঠার পর এই আসনটি সাধারণ ভোটারদের কাছে বঙ্গবীরের মাঠ বলে পরিচিতি পেয়েছে। বঙ্গবীরের আসনটিতে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দি থাকায় ত্রিমুখী লড়াইয়ের কারণে জাতীয় নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তাছাড়া বৃহৎ দুই দলের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিরা এই আসনের কাজকর্ম সরাসরি মনিটরিং করেন থাকেন। জানা যায়, বিগত ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হুমায়ূন খালিদ, ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মুর্শেদ আলী খান পন্নী, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোর্শেদ আলী খান পন্নী, ১৯৯১ সালে পঞ্চম এবং ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হুমায়ূন খান পন্নী, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, ১৯৯৯ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শওকত মোমেন শাহজাহান, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রতিষ্ঠিত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রার্থী বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, ২০০৮ সালে নবম এবং ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত মোমেন শাহজাহান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ভোটারবিহীন নির্বাচনে শওকত মোমেন শাহজাহান নির্বাচিত হওয়ার ক’সপ্তাহ পরই তার মৃত্যু হয় এবং উপ-নির্বাচনে তারই ছেলে অনুপম শাহজাহান জয় বিজয়ী হন। এ আসনের ভোটাররা জানান, গত পাঁচ বছরে বাসাইল-সখীপুরের সর্বত্রই সুষম উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এলাকার রাস্তাঘাট, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সোলার প্যানেল, মসজিদ-মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উন্নয়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবারও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীকেই তারা পছন্দ করছেন। এবার আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, করটিয়া সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইবারের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের সুনাম রয়েছে। বাসাইল-সখীপুরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার মূলে তার দক্ষ প্রার্থী বাছাইকেই প্রকৃত কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঠে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। গণসংযোগ, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, কুশল বিনিময়ে তিনি মাঠে সবসময় রয়েছেন। এসব কারণে বাসাইল-সখীপুরের নেতাকর্মীদের মাঝে রয়েছে তার ব্যাপক প্রভাব। সমর্থকদের দাবি, নির্বাচনে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে একমাত্র তার নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় ধরে রাখা সম্ভব। তাই নির্বাচনে তিনি জয়ী হবেন বলে তার সমর্থকরা মনে করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বাসাইল-সখীপুরে বিএনপির রাজনীতির একমাত্র কর্ণধার হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান এই আসনের প্রার্থী হিসেবে দুইবার নির্বাচন করেছেন। কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারেননি। এরপরও বাসাইল-সখীপুরে তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া সখীপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মোহাম্মদ হাবিব নির্বাচনে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। কর্মীদের সঙ্ঘবদ্ধ করে বিএনপির জন্য কাজ করে যেতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সম্প্রতি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে চলে আসার পর এ আসনের বিভিন্ন দলীয় প্রার্থীদের হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে। প্রাণ ফিরে পেয়েছেন বঙ্গবীরের কর্মীসমর্থক এবং বঙ্গবীরপ্রেমী সাধারণ মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাসাইল-সখীপুর ছিল তার প্রাণকেন্দ্র। যে কারণে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে এই আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করবেন বলে জানান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা বীরপ্রতীক। বঙ্গবীর সমর্থকরা জানান, উপ-নির্বাচনে কারচুপির পর থেকে এটা বঙ্গবীরের নির্বাচনী মাঠ বলে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। তাই আমাদের প্রচারণাও চলছে বঙ্গবীরের নামের উপর।
×