ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সংস্কৃতিমনা খেলোয়াড় মননশীলরা কখনও জঙ্গীবাদে জড়ায় না’

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

  ‘সংস্কৃতিমনা খেলোয়াড় মননশীলরা কখনও জঙ্গীবাদে জড়ায় না’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যারা জাতীয় সঙ্গীত গায়, লালন-নজরুল সঙ্গীত শোনে এবং রবীন্দ্র নাথের লেখা পড়ে, তারা কখনও উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদে জড়াতে পারে না। সংস্কৃতিমনা, খেলোয়াড কিংবা মননশীলরা কখনও জঙ্গীবাদে জড়ায় না। যারা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার পর ফের ভাল পথে ফিরতে চায়, পুলিশের তরফ থেকে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়া জঙ্গী অভিযানে নিহতদের পরিবারের সঙ্গেও কথা হয়েছে। যুবকরা কেন জঙ্গীবাদে জড়ায়, সে বিষয়টি সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার দিনব্যাপী ‘সহিংস উগ্রবাদবিরোধী যুব সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান শেষে এমন মন্তব্য করেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম। সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে যুবসমাজ তথা তরুণদের ভূমিকা, উগ্রবাদের এ সমস্যা সমাধানে তরুণরা কি ভাবছে, তা জানতে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি) এই সংলাপের আয়োজন করে। ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহযোগিতায় সংলাপে অংশগ্রহণ করে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পেশাজীবী ও সাংবাদিকরা সহিংস উগ্রবাদ নিরসনে বিভিন্ন পন্থা ও সমস্যা তুলে ধরেন। প্রধান আলোচক হিসেবে মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, তরুণদের একটি অভিযোগ তাদের কথা কেউ শোনে না। তাদের ওপর সবকিছু চাপিয়ে দেয়। সত্যিকার অর্থে আমরা তরুণদের কথা শুনতে চাই। তরুণরা সহিংস উগ্রবাদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার বিষয়ে কি ভাবছে তা জানতে চাই। তিনি আরও বলেন, ভিডিও গেমও প্রভাবিত করে জঙ্গীবাদকে। ভিডিও গেমের মাধ্যমে বিভিন্ন অস্ত্র চালানো এবং পরবর্তী সময়ে বাস্তবে অস্ত্র চালাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে তরুণরা। সাইবার স্পেস বা ইন্টারনেট রেডিকালাইজেশনের জন্য বড় প্লাটফর্ম। উগ্রবাদে জড়িয়ে যাওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ সামাজিক বঞ্চনা। তরুণরা সামাজিক বঞ্চনা থেকে উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ে। প্রিজন রেডিকালাইজেশন ঠেকানোর জন্য কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে উগ্রবাদের চিন্তার ভ্রান্তধারণা থেকে ফিরিয়ে আনা একটি চ্যালেঞ্জ। কেন আপনি লাদেন বা জঙ্গী তামিমের মতো ব্যক্তিকে আদর্শ মেনে জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদের মতো সহিংস পথ বেছে নেবেন? আদর্শবান বা রোল মডেল আমাদের দেশে অনেক ব্যক্তি আছেন। যাদের অনুসরণ করা যায়। জিহাদের মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে, মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী বলে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে ভ্রান্তধারণাপুষ্ট কিছু মানুষ। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ইউএনডিপি প্রতিনিধি রবার্ট স্টরম্যান বলেন, জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে সহিংসতা ও উগ্রবাদ একটি ক্যান্সার। একজন সন্ত্রাসী কিংবা উগ্রবাদীকে শুধু শাস্তির আওতায় আনলেই হবে না। কারণ সমাজে এদের প্রভাব রয়েছে। শাস্তির পাশাপাশি উগ্রবাদের চালিকা শক্তিগুলো কী কী তা শনাক্ত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্ব সহিংসতা জরিপে ২২ নম্বর অবস্থানে রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চপর্যায় থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত কি ধার্মিক কি শিক্ষিত আর কি আধুনিক মননের অধিকারী কম বেশি সব স্তরের মানুষের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে সহিংসতায়। অনুষ্ঠানে লালবাগ মাদ্রাসার ছাত্র সামসুদ্দিন বলেন, ধর্মের জায়গায় আমাদের সবার দুর্বলতা আছে। আমরা কোন কিছু সঠিকভাবে না জেনে অন্ধের মতো বিশ্বাস করি। তাতে আমরা সহজে বিপথে চলে যাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মটিভেট করতে হবে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কাছিন সুলতানা চামেলী বলেন, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। আরও মতামতে উঠে আসে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি উগ্রবাদ বিরোধী কাউন্সিলিং টিম থাকলে তারা উগ্রবাদ সম্পর্কে ধারণা দেবে। তরুণদের কথা শুনতে হবে যাতে তারা হতাশ না হয়। দেশের বেকারত্ব সমস্যা সমাধান করতে হবে। রাখি নামে বদরুন্নেসা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ইন্টারনেটের অধিক ব্যবহার, তরুণদের মানসিক অবস্থা ও হতাশার উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। সব ধরনের গুজব মোকাবেলা করতে হবে। একটি ভুয়া নিউজ যত দ্রুত তরুণদের স্পর্শ করে, অতটা সহজে সেই মিথ্যাকে সরানো যায় না। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের মধ্যে তিনজন জানান, জঙ্গীবিরোধী অভিযানের তথ্য আরও স্বচ্ছ হওয়া দরকার। জেল থেকে বের হয়ে জঙ্গীরা যেন ফের জঙ্গীবাদে না জড়ায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় জঙ্গীবাদ বিরোধী বিজ্ঞাপন, প্রয়োজনে বুস্ট করে প্রচার করতে হবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ ফারজানা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শবনম আজিম ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও ডিবিসি নিউজের সঞ্চালক নবনিতা চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
×