ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চার মাসে বাস্তবায়ন ১৩.৭৫ শতাংশ

এডিপি বাস্তবায়নে নির্বাচনের প্রভাব

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২০ নভেম্বর ২০১৮

 এডিপি বাস্তবায়নে নির্বাচনের প্রভাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কমেছে। এ সময় এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। এই চার মাসে প্রায় ৩৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। তারাই রয়েছে এডিপি বাস্তবায়নের শীর্ষে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই চার মাসে একটাকাও খরচ করতে পারেনি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন এ চিত্র উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনের ধাক্কায় অর্থ খরচ বাড়লেও শতাংশের দিক থেকে বাস্তবায়ন কমেছে। ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, অবশ্যই নির্বাচনী প্রভাব থাকতে পারে। কেননা, এ সময়ে সবাই জাতীয় নির্বাচনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের নজরদারি কম হচ্ছে। অন্যদিকে, নির্বাচনী প্রচারণা মাথায় রেখে নতুন প্রকল্পগুলোতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কম হচ্ছে। এজন্য শতাংশের দিক থেকে এডিপি বাস্তবায়ন কম হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে নতুন প্রকল্পে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমও। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এডিপি’র আকার বাড়ছে। সেই হিসাবে খরচ বাড়তে পারে। যেহেতু এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়েনি, তাই এখানে নির্বাচনী প্রভাব সেভাবে বলা যাচ্ছে না। বরং এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়লে বলা যেত এতে নির্বাচনী প্রভাব রয়েছে। বরং সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনকে ঘিরে নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, যেখানে নির্বাচনী প্রভাব রয়েছে। যদিও আইএমইডি সচিব মফিজুল ইসলাম এডিপি বাস্তবায়নে নির্বাচনের প্রভাবের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, টাকার অঙ্কে তো বাস্তবায়ন বেড়েছে। এখনও নির্বাচনী বছরের কোন প্রভাব পড়েনি। শতাংশের বিষয়টিও এখনই মূল্যায়ন করা যাবে না। কেননা, কোন একটি মন্ত্রণালয় কম ব্যয় করলেই শতাংশের ওপর তার প্রভাব পড়ে। আবার যদি কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বেশি ব্যয় করে ফেলে, তখন দেখা যাবে বাস্তবায়ন হার বেড়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির মৌসুম শেষ হয়েছে মাত্র একমাস। আগামীতে এডিপির বাস্তবায়ন বাড়বে। আইএমইডি বলেছে, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত চার মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে ২৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। অন্যদিকে, গত অর্থবছরের একই সময়ে, অর্থাৎ চার মাসে খরচ হয়েছিল ২৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে টাকার অঙ্কে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খরচ বেড়েছে ১ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। তবে শতাংশের হিসাবে তা কমেছে প্রায় শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ (৩৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ); অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ); বিদ্যুত বিভাগ (২৮ দশমিক ২১ শতাংশ); প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (২৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ); খাদ্য মন্ত্রণালয় (২৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ); প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় (২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ); পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় (২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ) এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ (২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ)। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টাকাও খরচ করতে পারেনি এই চার মাসে। তাছাড়া এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ); অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ); পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় (২ দশমিক ৮২ শতাংশ); আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (২ দশমিক ২১ শতাংশ); ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় (৩ দশমিক ১৪ শতাংশ) এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
×