ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়াল সেই ১২ নবেম্বর

আজও কাঁদায় স্বজনহারা উপকূলবাসীকে

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১২ নভেম্বর ২০১৮

 আজও কাঁদায় স্বজনহারা উপকূলবাসীকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা/লক্ষ্মীপুর ॥ আজ সেই ভয়াল ১২ নবেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে ভোলাসহ উপকূলবাসীর বিভীষিকাময় এক দুঃস্বপ্নের দিন। এক এক করে ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও কান্না থামেনি স্বজন হারা মানুষের। এই দিনে বিস্তীর্ণ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ক্ষতবিক্ষত করে দেয় স্থানীয় জনপদ। মৃত্যু পুরীর হাত থেকে রক্ষা পেতে দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটির আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন তারা। ওই ঝড়ে ভোলায় হারিয়ে যায় দেড় লক্ষাধিক প্রাণ। নিখোঁজ হয় সহস্রাধিক মানুষ। দুর্গম এলাকায় হতদরিদ্রদের একমাত্র আয়ের উৎস্য গবাদিপশু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সেই ঝড় আজও কাঁদায় দ্বীপবাসকে। ৭০’র এর ১২ নবেম্বর দিনভর ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও ঝড়োবাতাস। সন্ধ্যার পর মুহূর্তের মধ্যেই ভয়ানক রূপ ধারণ করে। গভীর রাতে শুরু হয় ঝড়ের তা-ব। হারিকেনরূপী জলোচ্ছ্বাসের সময় ঝড়টি ভোলা, নোয়াখালী, বরিশাল, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনাসহ উপকূলীয় ১৮ টি জেলায় আঘাত হানে। তৎকালীন সময় তথ্যপ্রযুক্তি অনেকটা দুর্বল থাকায় উপকূলে অনেক মানুষই ঝড়ের পূর্বাভাস পায়নি। এসময় জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ৮/১০ ফুট উচ্চতায়। কেউ গাছের ডালে, কেউ উঁচু ছাদে আশ্রয় নিয়ে কোনমতে প্রাণে রক্ষা পেলেও ১০দিন পর্যন্ত তাদের অভুক্ত কাটাতে হয়েছে। বেড়িবাঁধ, জলাভূমি, জঙ্গলসহ বিভিন্ন প্রান্তে স্বজনহারা মানুষ তাদের প্রিয়জনের লাশ খুঁজে পায়নি। ৪৮ বছরের সব কয়টি ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে ’৭০’র ঝড়টি সব চাইতে হিংস্র বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ভোলা, কালীবাড়ি, মক্কি মসজিদ রোডের বাসিন্দা মোঃ আলমগীর মিয়া জানান, তখন তিনি মেট্রিক পরীক্ষার্থী। ঝড়ের সময় তিনি দৌলতখানে তার নানাবাড়ি অবস্থান করছিলেন। সেখানেও ১০ ফুট পানি উঠে। তবে বেশি ক্ষতি হয়নি। কিন্তু নানাবাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়ি ঝড়ে সব লন্ডভন্ড করে ফেলে। ঝড়ের পরদিন তিনি মেঘনা নদীর তীরে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। অলৌকিকভাবে তার মা বেঁচে গেলেও তার বাবা মারা যায়। ৬ ভাই ১ বোনের মধ্যে ৩ বোন বাঁচলেও বাকিরা মারা যায়। এছাড়া বাড়ির অন্যান্য মেহমানসহ তাদের বাড়ির ১৬ জন মারা যায়।
×