ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ধার করে মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো হলো লাশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৮ নভেম্বর ২০১৮

ধার করে মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো হলো লাশ

আজাদ সুলায়মান ॥ কুয়ালালামপুরের একটি হাসপাতালে সাত দিন পড়েছিল প্রবাসী শ্রমিক কামালের মরদেহ। সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস কোন খোঁজ খবর নেয়নি। শেষ পর্যন্ত মরদেহ পচন ধরার মতো খবর পেয়ে ওই হাসপাতালে ছুটে যান সেখানকার দুই ছাত্রলীগ নেতা ফাহাদী ও শাহীন। তারা অন্য প্রবাসীদের কাছ থেকে ধারকর্জ করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন। তারপর সেই মরদেহ ২ নবেম্বর দেশে পাঠানোর সব ব্যবস্থা করেন তারা। কামালের মতো অন্য প্রবাসীদের মরদেহ আনতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে অভিভাবকদের। যেখানে একটি মরদেহ আনতে তিন দিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়, সেখানে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মরদেহ আনা সম্ভব হচ্ছে না। মরদেহ পাঠানোর সব দায় দায়িত্ব সেখানকার কোম্পানি ও বাংলাদেশ দূতাবাসের হলেও তা কেউ পালন করেনি। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ায় ছাত্রলীগ নেতা ও কয়েকজন প্রবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় কামালের মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয়- এখনও কামালের পরিবার মরদেহের কোন ক্ষতিপূরণ বা লাশ দাফনের টাকাও পায়নি। প্রবাসীকল্যাণ বোর্ডও এ বিষয়ে কোন দায়িত্ব পালন করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। মালয়েশিয়া প্রবাসীদের অভিযোগ-বৈধভাবে থাকা প্রবাসীদের মরদেহ দেশে পাঠাতেই গলদঘর্ম হতে হয়। সেখানে অবৈধ শ্রমিক হওয়ায় তার মরদেহ নিতে জটিলতা দেখা দেয়। জানা গেছে, দাউদকান্দি উপজেলার বিটেশ্বের গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে মোঃ কামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী। কলিং ভিসায় তিনি ২০১০ সালে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। তার পরিবারে রয়েছে দুই কন্যা, স্ত্রী ও পিতা-মাতা। মালয়েশিয়ায় এজেন্ট শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সাধারণত এজেন্ট শ্রমিকদের অবৈধ শ্রমিক হিসেবে দেখা হয়। সেখানকার একটি কোম্পানিতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে ২৫ অক্টোবর সকালে এক মর্মান্তিক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপর তার মরদেহ থাকে হাসপাতালেই। কদিন পর মালয়েশিয়া ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিয়াজ উদ্দীন ফাহাদী এবং শাহীনের সহযোগিতায় প্রবাসীরা সম্মিলিতভাবে কামালের মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তারা দাবি করছেন, অবৈধ শ্রমিকদের মরদেহ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার বা দূতাবাসের তেমন কিছু করার থাকে না। তবে কামাল বৈধ প্রবাসী হলেও তিনি ছিলেন একজন এজেন্টের অধীনে। সেজন্য কিছুটা জটিলতা দেখা দেয়। এ বিষয়ে রিয়াজ উদ্দীন ফাহাদী বুধবার রাতে জনকণ্ঠকে বলেন, হাসপাতালে যখন কামালকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত ঘোষণা করা হয় সেটা তাৎক্ষণিক কোন বাংলাদেশী বা এখানাকার দূতাবাসকে জানানো হয়নি। এই দায়িত্ব ছিল কামালের কোম্পানির। মূলত সঠিক সময়ে সংবাদ পাঠানো হলে মরদেহ আরও অনেক আগেই দেশে পাঠানো সম্ভব হতো। তারপরও বিলম্বে হলেও দূতাবাস বিমানের টিকেট সংগ্রহ করে কামালের মরদেহ দেশে পাঠাতে সহযোগিতা করেছে। মোঃ রিয়াজ উদ্দীন ফাহাদী বলেন, ২৫ অক্টোবর বেলা ১১টায় কামাল হোসেন কাজের উদ্দেশে মোটরসাইকেলযোগে রাস্তায় বের হন। পথিমধ্যে ভ্যান লরিতে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান। তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মালয়েশিয়ায় থাকা কামালের মামা সিদ্দিকুর রহমান ওই মরদেহ দেশে পাঠানো নিয়ে বিপাকে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনি আমাকে অবহিত করলে আমি এখানকার প্রবাসী ছাত্রলীগ নেতা শাহীনের সহায়তায় ধারকর্জ করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করি। এরপর দূতাবাসে জানানোর পর মরদেহ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফাহাদী জানান, সাধারণত প্রবাসীদের মরদেহ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াটা সময়সাপেক্ষ। কামালের মরদেহ পাঠাতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রথমে দূতাবাস থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কামালের পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদ, তার অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমানের ফ্লাইটে বুকিং দেয়ার কাজ সারতে বেশ সময় লেগেছে। এর আগে অপর এক প্রবাসীর মরদেহ পাঠাতে চার মাস সময় লেগেছিল। পেনাং থেকে প্রবাসী অপর এক জনের মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। জানা গেছে, সম্প্রতি আরও কয়েকজন প্রবাসীর মরদেহ পাঠাতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে অভিভাবকদের। সাধারণত মালয়েশিয়ায় কোন প্রবাসী মারা গেলে মরদেহ দেশে পাঠানোর সব দায় দায়িত্ব সেখানকার দূতাবাসের। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যে কোন বাংলাদেশীর মরদেহ বিনা পয়সায় দেশে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। তারপরও কেন মরদেহ পাঠানোর প্রক্রিয়া এতটা জটিল জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ বোর্ডের একজন পরিচালক বলেন, আগে তো আরও অনেক সময় লাগতো। এখন তিন চার দিনেও অনেক মরদেহ আনা সম্ভব হচ্ছে। বিদেশী দূতাবাসগুলো প্রবাসীর মৃতদেহের খবর যত দ্রুত পাবে তত দ্রুত দেশে পাঠানো সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে মরদেহ পাঠানোর সব দায়িত্ব দূতাবাসেরই।
×