ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকের শেষ সভায় রেকর্ড ৩৯ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৫ নভেম্বর ২০১৮

 একনেকের শেষ সভায় রেকর্ড ৩৯ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রেকর্ডসংখ্যক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে একনেকে। বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর একনেক সভা আর হবে না। আর তাই রবিবারই শেষ একনেক অনুষ্ঠিত হলো বলে জানা গেছে। রবিবার বিকেলে রাজধানীর শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে সন্ধ্যায় প্রকল্পগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রবিবার অনুষ্ঠিত বিশেষ এ একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৩৯ প্রকল্প। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৬৬ হাজার ৪৬৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৯ হাজার ৯০৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা খরচ করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, আইএমইডি সচিব মোঃ মফিজুল ইসলামসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, পায়রা সমুদ্রবন্দরকে গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটিকে সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে অন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এখন থেকে হাইওয়ে রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে রেললাইনেও সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। যাতে কেই অপরাধ করলে সহজেই ধরা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন একনেক চলবে। যদি নির্বাচনী আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় তাহলে একনেক বাদ দেয়া হবে না। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতেই এত প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া নির্বাচনের সময় আমরাসহ প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিভিন্ন এলাকায় যাবেন। সুতরাং, তখন একনেক করার সম্ভব নাও হতে পারে। দুই মাসের উন্নয়ন গ্যাপ যাতে তৈরি না হয় সেজন্য একনেকে বেশি বেশি প্রকল্প পাস করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রকল্প অনুমোদন হলেই তো আর টাকা পাবে না, কাজ করেই তো টাকা নিতে হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দূরবীণ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এসব প্রকল্প একনেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে জয়দেবপুর হতে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডবললাইন নির্মাণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ২৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া পূর্বাচল লিংক রোডের উভয়পাশে (কুড়িল হতে বোয়ালিয়া পর্যন্ত) ১০০ ফুট পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পের খরচ ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য টার্মিনাল নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক সুবিধ সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ৩ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ, খরচ ৯৭৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ, খরচ ৩৫৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, খরচ ১১৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, খরচ ৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক পর্যন্ত) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাচ্চর-ভাংগা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ,খরচ ৪ হাজার ১১১ কোটি টাকা। টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হারিয়াখালী হতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ, প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ, খরচ ৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। টাঙ্গাইল পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন, খরচ ২২৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বৃহত্তর কৃষ্টিয়া জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, খরচ ৯৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্ট (এলজিইডি অংশ),খরচ ২২৫ কোটি টাকা। পশ্চাৎপদ কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলার দারিদ্র্য দূরীকরণ, খরচ ১৯৫ কোটি টাকা। বঙ্গমাতা ন্যাশনাল সেলুলার এ্যান্ড মলিকুলার রিসার্স সেন্টার স্থাপন, খরচ ১ হাজার ৫০৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মুগদা মেডিক্যাল কলেজের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা সম্প্রসারণ, খরচ ৫২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সুনামগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, খরচ ১ হাজার ১০৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ, খরচ ৮৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, খরচ ৬৪৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। র‌্যাবের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, খরচ ৩৪০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি ইউনিট সম্প্রসারণ, খরচ ১৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। ন্যাশনাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, খরচ ২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, খরচ ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লি.র উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরকরণ, খরচ ৮৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা। বিএমআর অব কেরু এ্যান্ড কোং (বিডি) লি., খরচ ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকা। ঢাকার আজিমপুর সরকারী কলোনির অভ্যন্তরে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ,খরচ ১ হাজার ৯২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, খরচ ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ২৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। অনুমোদন পাওয়া আরও কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা লেক উন্নয়ন প্রকল্প, কুমিল্লা জেলার ৫টি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্রামীণ সড়ক পুনর্বাসন, গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, ফরিদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, বৃহত্তর ঢাকার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, তিন পার্বত্য জেলায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন, গ্রামীণ রাস্তার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু কালভার্ট নির্মাণ এবং গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিংবন্ডকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়)প্রকল্প। হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। গ্রেটার ঢাকা সাসটেনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এ্যাসেস টু সার্ভিসেস প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সারসংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি নতুন বাফার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।
×