ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দশ বছরে বদলে গেছে চিত্র

উন্নয়নের মডেল এখন যমুনা ও বাঙালী তীর

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩ নভেম্বর ২০১৮

উন্নয়নের মডেল এখন যমুনা ও বাঙালী তীর

যমুনা তীরের গ্রাম ও চরগ্রামে উত্তাল স্রোতধারাকে শাসনের পর শান্ত করে ভাঙনের থাবা মুক্ত করা হয়েছে। যে এলাকার মানুষ যমুনাকে রাক্ষুসী বলত এখন তা ভুলতে শুরু করেছে। তবে ভীতি কাটেনি। চুলের বেণীর মতো বয়ে চলা ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ যমুনাকে থামাবার সকল প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। গেল দশ বছরে যমুনা ও বাঙালীকে বশে আনতে অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে নয়শ’ কোটি টাকা। নদী ভাঙন রোধে আরও আটশ’ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প শীঘ্রই অনুমোদিত হবে। যমুনার ভাঙ্গনের কারনে যে এলাকার উন্নয়ন এতকাল পিছিয়ে ছিল ভাঙ্গন রোধের পর সেই এলাকার উন্নয়নের গতি অনেক বেড়েছে। গত দশ বছরে যমুনা ও বাঙালী তীরের সারিয়াকান্দি এবং সোনাতলা উপজলোয় প্রায় এক হাজার ৮শ’ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ওই এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতি হয়েছে চাঙ্গা। নারীর ক্ষমতায়নে নারীর উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি। যে চরে আগে মাটির রাস্তাও ঠিকমতো ছিল না সেই চরে এখন পাকা রাস্তা। প্রতিটি ইউনিয়ন বিদ্যুত ও সোলারে আলোকিত। এলাকায় উন্নত যোগাযোগ ও বিদ্যুত পৌঁছানো গেলে বাকি উন্নয়ন যে আপন গতিতেই এগিয়ে যায় তার বড় প্রমাণ এই এলাকা। যেখানে প্রযুক্তি এখন হাতের মুঠোয়। সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যদি নিজের গরজে এলাকার উন্নয়ন করতে চান এবং সাধারণ মানুষের পাশে সর্বক্ষণ থাকেন তাহলে তিনি যে ‘মিরাকল’ অনেক কিছুই করতে পারেন তার বড় দৃষ্টান্ত বগুড়ার যমুনা ও বাঙালী তীরের সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা এলাকা। এই এলাকার সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মান্নান একাই যমুনার সঙ্গে যুদ্ধ করে এলাকার চিত্র পাল্টে ফেলেছেন। সংসদে বরাদ্দ আনতে তার কণ্ঠ ছিল সোচ্চার। গত দশ বছরে তিনি যে উন্নয়ন করেছেন তা মডেল হয়েছে। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগই উন্নয়ন করতে পারে। এলাকার হাজারো মানুষ এখন তাই বলে। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা এলাকায় ৮১টি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র স্থাপন দুটি হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে এসেছে উন্নয়ন। ১২৭টি সরকারী প্রাথমিক স্কুল ৩৭টি হাইস্কুল, ৬টি কলেজ ৬টি মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়েছে। অনেক স্কুল সংস্কার হয়েছে। এই এলাকায় পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে প্রায় ৩শ’ কিলোমিটার। ভাঙা পাকা রাস্তা সবই মেরামত করা হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামে যে ৩৩টি বাঁশের সাঁকো ছিল তা অপসারণ করে নির্মিত হয়েছে রড সিমেন্ট কনস্ট্রাকশনের (আরসিসি) সেতু। এর সঙ্গে ছোট ও মাঝারি ৯৩টি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। স্যানিটেশনেও এসেছে আধুনিকতা। আগে গ্রামে ছিল কুয়ার পাড় ও টিউবওয়েলের পাড়। এখন গ্রামের অনেক মানুষ শহরের মতো টিউবওয়েল বাথরুম ও স্যানিটেশন একত্রে রাখছে। অনেক গ্রামে ট্যাপের পানি সরবরাহ হয়েছে। ওভারহেড পানির ট্যাংক এখন গ্রামেও চোখে পড়ে। নদী ভাঙনে যারা নিঃস্ব হয়েছিল তারাও পুনর্বাসিত। ২ হাজার ২৯১টি পরিবারের জন্য ২৫টি গুচ্ছগ্রাম, জমি আছে ঘর নাই এমন ৭১৩টি পরিবার পেয়েছে উন্নত ঘর। আদর্শ গ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্প চলমান। এই এলাকার অনেক নারী এখন মোটর মেকানিক। তাদের কেউ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালায়। নারী উন্নয়নে বিএনপি শাসনামলে সারিয়াকান্দিতে মা ফাতেমা (রাঃ) মহিলা প্রশিক্ষণ উন্নয়ন কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সঙ্গেই এই মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে নারীদের অটোমোবাইল (মোটর মেকানিক্স) প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়। এই এলাকার অনেক শিক্ষিত নারী এখন কম্পিউটার আউট সোর্সিংয়ে দক্ষতা অর্জন করেছে। শিক্ষিতের হার এই এলাকার বেশি। এর বড় কারণ নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করেই তাদের বাঁচতে শেখা। তারা বুঝেছে শিক্ষা ছাড়া তাদের অন্য কোন পথ নেই। কৃষি উন্নয়নে চরের বালু কমিটি উপযোগী ফসল যেমন বাদাম তিল কাউন বাড়তি ফসল হয়ে কৃষকদের বাড়তি অর্থ এনে দিচ্ছে। ধান সবজি তো কমন উৎপাদন। কৃষির সকল কাজ এখন যন্ত্রে। বন্যায় পাটের ক্ষতি হলে পরবর্তী সময়ের পাট চাষের আধুনিক বীজ কৃষক পেয়েছে। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পেতে তারা উন্নত হাটবাজারে যায়। মরিচ উৎপাদনের এই এলাকায় কনজিউমার প্রোডাক্টের অনেক কোম্পানি সারিয়াকান্দিতে পারচেজ সেন্টার খুলেছে। অবকাঠামো নানা উন্নয়ন এখন চোখে পড়ে। দুটি সার্ভার স্টেশন, পৌরসভা ভবন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন, ৩টি ভূমি অফিস, ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভবন, উপজেলা অডিটোরিয়াম, হাট বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রায় ২ হাজার মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, এতিমখানা, কবরস্থানের উন্নয়নসহ প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। যে যমুনা এতদিন তীর ভেঙ্গেছে সেই যমুনা তীর সুরক্ষিত হয়ে পর্যটনের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। সারিয়াকান্দির প্রেম যমুনার ঘাটে এখন শীত মৌসুমে পর্যটকদের প্রিয় এলাকায় পরিণত। ভ্রমণে পর্যটন করপোরেশন কোন ব্যবস্থা না করলেও ব্যক্তি উদ্যোগে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত উন্নত নৌকা ও স্পিড বোট ভ্রমণ পিপাসুদের চরে নিয়ে যায়। অনেক তরুণ এখন চরে গিয়েও পিকনিক ও ব্যান্ড সঙ্গীতের আয়োজন করে। কেউ চাঁদনী রাতেও চরে গিয়ে নিসর্গ উপভোগ করে। দশ বছর আগেও কেউ ভাবতো না যমুনার তীর এমনই উন্নয়নের চিত্র হয়ে যাবে। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×