ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিম চাষের জেলা লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

শিম চাষের জেলা লালমনিরহাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজ আর ফুলে ফুলে ছেঁয়ে গেছে। সেই সবুজের দিকে তাকালে লতার সমারোহ আর তার ফাঁকে ফাঁকে ছোট্ট নীল-সাদা অজস্র ফুল ফুটে আছে। বুক সমান উচ্চতায় বাঁশের মাচানজুড়ে। এতে জন্মেছে অসংখ্য, অজস্র্র শিম। এই শিম লালমনিরহাট থেকে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এভাবেই প্রতিদিন দেশের বৃহত্তম শিমের হাট দুরাকুটিহাট ও কুমড়িরহাটে বিক্রি হচ্ছে ট্রাকে ট্রাকে শিম। প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ ট্রাক শিম এ জেলা হতে অন্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শিম আবাদ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। চলতি মৌসুমে জেলার সদরে ২১০ হেক্টর জমিতে ৩২১ মেঃ টন, আদিতমারি উপজেলায় ১৪৭৬০ হেক্টর জমিতে ১৩৬৩৪ মেঃ টন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে ৫০০ মেট্রিক টন, হাতীবান্ধা উপজেলায় ৮৩০ হেক্টর জমিতে ৯৭০০ মেট্রিক টন ও পাটগ্রাম উপজেলায় ১০৫০ হেক্টর জমিতে ১০৯০০ মেট্রিক টন শিম আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। দামও পেয়েছে কৃষক পরিবারগুলো। কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এই এলাকার নামকরণ করেছেন ‘শিমের গ্রাম’। শিম চাষে ঝামেলা তুলনামূলক কম এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক। তাছাড়া বেশকিছু দিন সময় নিয়ে ধীরে ধীরে গাছ থেকে শিম সংগ্রহ করে বিক্রি করা যায়। ২৩টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কম-বেশি শিম চাষ হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা এবং এলাকার বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে শিমের মাচান রয়েছে। বুড়িমারি থেকে রংপুরগামী মহাসড়কের দুই পাশে এবং দৈখাওয়াহাট থেকে দুরাকুটি সড়কের দুই পাশে মাঠের পর মাঠ শুধু শিম ক্ষেত। শিম চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিম চাষ হয় দুইভাবে। নিজের জমিতে আবাদ করা ছাড়াও কৃষকেরা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন। একেবারেই যারা ভূমিহীন তারাও জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। বর্গা চাষীরা আবাদ করে এক তৃতীয়াংশ ফসল দেন জমির মালিককে। এতে জমির মালিকও অন্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি পান। যারা জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন তারা প্রতিবিঘা জমির জন্য মালিককে দেন ছয় থেকে আট হাজার টাকা। লালমনিরহাট সদর উপজেলার তেলীপাড়া গ্রামের সবজি চাষী ছব্বুল মিয়া জানান, উচ্চ ফলনশীল শিম বীজ এনে জমিতে আবাদ করেন। তিনি ওই বছর শিম বিক্রি করে লাভবান হন। প্রতিবেশী কৃষকরা তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হন। তাছাড়া বাজারে ক্রমশই শিমের চাহিদা বাড়তে থাকায় পর পর কয়েক বছর এলাকার কৃষকেরা শিমের চাষ করেন। এভাবেই এলাকায় শিম চাষ সম্প্রসারিত হয়। এ এলাকার চুনযুক্ত দোআঁশ মাটিতে শিমের ফলনও ভাল হতে থাকে। আর এভাবেই আদিতমারীর কুমড়িরহাট এখন দেশের বৃহত্তম শিম উৎপাদন এলাকা। দুরাকুটি গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে শিম চাষে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় প্রায় ১১ মণ শিম। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। চলতি বছর শিমের ফলন ভাল হয়েছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ বিষয়ে লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিধু ভূষন রায় বলেন, এ এলাকার মাটি শিম চাষের জন্য উপযোগী। ফলে শিম চাষে সাফল্য এসেছে। যা দেশের শিম বিপণনের সবচেয়ে বড় হাট কুমড়িরহাট ও দুরাকুটিহাট। সারাদেশ থেকে পাইকারি ক্রেতারা এই হাটে আসেন। প্রতিদিন ভোরবেলা থেকে হাট বসে। বিক্রি চলে রাত পর্যন্ত। ট্রাকযোগে চলে যায় দেশের নানা প্রান্তে।
×