ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণিল আয়োজনে আড়ংয়ের চল্লিশ বছর পূর্তি উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

বর্ণিল আয়োজনে আড়ংয়ের চল্লিশ বছর পূর্তি উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে আবহমান গ্রাম বাংলার নানা অনুষঙ্গ। প্রান্তরজুড়ে দৃশ্যমান হয় কুঁড়েঘর। সেখানে তৈরি হচ্ছে নানা রঙের জামদানি শাড়ি। কিছু জামদানি শাড়ি শোভা পাচ্ছে কুঁড়েঘরের দেয়ালে। এমন কয়েকটি কুঁড়েঘরে দেখা মেলে রিক্সা পেইন্টিং থেকে শুরু করে মৃৎশিল্প সামগ্রী। কোথাওবা বোনা হচ্ছে নকশিকাঁথা। আর মাঠের উত্তরপাশের বিশাল মঞ্চে চলছে শ্রোতা উদ্দীপ্ত কনসার্ট, ফ্যাশন শোসহ নানা আয়োজন। এমন বর্ণিল আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো দেশীয় পোশাক প্রতিষ্ঠান আড়ংয়ের চল্লিশ বছরপূর্তি উৎসব। বৃহস্পতিবার বিকেলে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয় তিন দিনের এ উৎসব। উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন ফজলে হাসান আবেদ ও ব্র্যাকের সিনিয়র পরিচালক তামারা হাসান আবেদ। পথচলার ৪০ বছর পূর্ণ করেছে আড়ং। এ উপলক্ষে আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ‘আড়ং ফোরটি ইয়ার্স ফেস্টিভ্যাল’। এ আয়োজনে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের হস্তশিল্পের ঐতিহ্য এবং কারুশিল্পীদের সাফল্যের গল্প। উৎসবে হস্তশিল্প প্রদর্শনীর পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে কারু ও হস্তশিল্পবিষয়ক কর্মশালা। এছাড়া রয়েছে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান, ফ্যাশন শো ও কনসার্ট। এতে জামদানি, সিল্ক, মৃৎশিল্প, কাটখোদাই, গয়নাশিল্প, বাঁশজাত শিল্প, রিক্সা পেইন্টিং, ব্লক পেইন্টিং, ন্যাচারাল ডাইং, সূচিশিল্প, নকশিকাঁথা, কার্পেট বয়নশিল্পের আলাদা আলাদা প্রদর্শনীতে কিভাবে পণ্য প্রস্তুত হয় তা দেখানোর পাশাপাশি বিশদ উপস্থাপন রয়েছে। উদ্বোধনী বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে অন্যতম কারণ হলো দেশের মানুষকে স্বাবলম্বী করা, নিজের পায়ে দাঁড়ানো। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করার আগে একটি বড় কাজ করেছিলেন। তিনি অনেক বড় একটি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, দেশ স্বাধীন করছিলাম। দেশ স্বাধীনের পর শুরু হয়েছিল আরেকটি যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ ছিল দারিদ্র্যতা ও বেকারত্ব দূর করার। যুদ্ধ ছিল সব মানুষকে চিকিৎসা ও শিক্ষা দেয়ার। মানুষকে স্বাবলম্বী করার এ যুদ্ধে জয়ী হতে সহযোগিতা করছে ব্র্যাক। ফজলে হাসান আবেদ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই ব্র্যাকের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে স্বাবলম্বী করার যে কর্মকা- আমরা শুরু করেছিলাম, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে রয়েছে আড়ং। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের কাজের সংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি দেশজ পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বিদেশেও দেশের নাম উজ্জ্বল হয়েছে। উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে ছিল পুরস্কার বিতরণী। এতে সেরা হস্ত ও কারুশিল্পী এবং উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়। তুলে দেয়া হয় পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সম্মননাপত্র। আর প্রথম দিনে শেষ পর্বে ছিল কনসার্ট। এতে গানে গানে দর্শক-শ্রোতাকে মাতিয়ে রাখেন কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। এ ছাড়া গান গেয়ে শোনান লোকসঙ্গীত শিল্পী শাহজাহান মুনসি। উৎসবের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই নানা শ্রেণী-পেশার দর্শনার্থীর ভিড় জমে উৎসবে। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি খাবারের স্টল, বাচ্চাদের জন্য আলাদা জায়গা এবং পার্টনার প্রতিষ্ঠানের স্টলে বিশেষ সুবিধায় কেনাকাটার ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গোটা আর্মি স্টেডিয়ামের পরিবেশ ছিল প্রাণবন্ত ও আনন্দমুখর। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার থাকছে নানা আয়োজন। সন্ধ্যায় থাকছে ফ্যাশন শো। শেষদিন কাল শনিবার থাকছে কনসার্ট। এতে থাকছে নগরবাউল জেমস, জলের গান, নেমেসিসসহ খ্যাতনামা ব্যান্ডদলের পরিবেশনা। গ্রামীণ কারু ও হস্তশিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আড়ং। ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের আবহমান ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক ফ্যাশনের মেলবন্ধন ঘটিয়ে নিজেকে দেশের সবচেয়ে বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আড়ং। জাতীয় শিশু উৎসবের উদ্বোধন ॥ ‘আমি হবো সকাল বেলার পাখি’ স্লোগানে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো জাতীয় শিশু উৎসব। বিকেলে বাংলাদের শিশু একাডেমি মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী উৎসবটির উদ্বোধনী হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহ্কাম উল্লাহ্্। সভাপতিতত্ব করেন পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য ইশতেইকবাল হোসেন। দুই দিনব্যাপী উৎসবে পরিষদভুক্ত সারা দেশের বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনের সহ¯্রাধিক শিশু অংশগ্রহণ করছে। প্রথম দিনে শিশুতোষ আবৃত্তি পরিবেশনা উপস্থাপন করে মৈত্রী থিয়েটার, শিল্পবৃত্ত, শিশু একাডেমি, কিংবদন্তি, সুফিয়া কামাল সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ দশটি দল। উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তীর তিন দিনের সমাপনী অনুষ্ঠান ॥ সংস্কৃতির আশ্রয়ে লড়াই-সংগ্রাম করা ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সময়ের পথচলায় সংগঠনটি পাড়ি দিয়েছে প্রতিষ্ঠার গৌরবময় ৫০ বছর। গণসাংস্কৃতিক সংগঠনটির সুর্বণজয়ন্তী উদযাপনে বছরব্যাপী কর্মসূচী নেয়া হয়। সেই মহাযজ্ঞের অংশ হিসেবে তিন দিনব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ‘আঁধারবৃন্তের আগুন জ্বালো, আমরা যুদ্ধ আমরা আলো’ স্লোগানে শনিবার থেকে শুরু হবে এ আয়োজন। বৃহস্পতিবার সকালে তোপখানা রোডে উদীচীর কেন্দ্রীয় র্কাযালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরা হয়। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উদীচীর সহসভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, মাহমুদ সেলিম, সহসাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে ও সম্পাদকম-লীর সদস্য প্রদীপ ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরের শুভক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে গত ২৯ অক্টোবর ২০১৭ থেকে বছরব্যাপী কর্মসূচী হাতে নেয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে আয়োজিত হয়েছে জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন, সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা, নৃত্য উৎসব, লোক-সংস্কৃতি উৎসবসহ নানা কর্মসূচী। চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে আয়োজিত হয়েছে বিভাগীয় সেমিনার। আগামী ২৭ অক্টোবর শনিবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী উৎসবের উদ্বোধন করবেন উদীচীর সাবেক পাঁচজন সভাপতি। তারা হলেন অধ্যাপক পান্না কায়সার, সৈয়দ হাসান ইমাম, অধ্যাপক যতীন সরকার, গোলাম মোহাম্মদ ইদু ও কামাল লোহানী। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, উদীচীর উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. পবিত্র সরকার। উপস্থিত থাকবেন গোলাম কুদ্দুস, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ফকির আলমগীর, মান্নান হীরা ও আহ্্কাম উল্লাহ্্। এছাড়াও থাকবেন ফ্রান্স থেকে আগত ইউনেস্কোর সম্মানিত কর্মকর্তা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী শুভেন্দু মাইতি, কল্যাণ সেন বরাট, শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, বিমল দে, বিপুল চক্রবর্তী ও অনুশ্রী চক্রবর্তী। সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা উদীচীর সাড়ে তিন শতাধিক শাখা সংগঠনের শিল্পীকর্মীরা যোগ দেবেন উদ্বোধনী সমাবেশে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদ্বোধন ঘোষণার পর একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হবে। সেখানেই আয়োজিত হবে বাকি দু’দিনের অনুষ্ঠানমালা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে বিভিন্ন আমন্ত্রিত দল, শিল্পী এবং উদীচীর জেলা ও শাখাসমূহের বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা। এছাড়া থাকবে গণসঙ্গীত এবং আবহমান বাংলার সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা নিয়ে সেমিনার ও আলোচনাসভা। তৃতীয় দিন পুনর্মিলনীতে যোগ দেবেন নানান সময়ে উদীচীর সঙ্গে যুক্ত থাকা সাংস্কৃতিক সংগঠকরা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ফেডারেশন ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তিনদিনের অনুষ্ঠানমালায় ঢাকায় এবং বিভিন্ন জেলায় যেসব সাংস্কৃতিক সংগঠক উদীচী গড়ে তোলার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হবে। দিল্লীতে শিল্পকর্মে ‘দি এ্যাসিভার বেস্ট এ্যাওয়ার্ড’ পেলেন রাজশাহীর সোমা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, ভারতের দিল্লীর কালারার ফাউন্ডেশন আয়োজিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে এবার দি এ্যাসিভার বেস্ট এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন রাজশাহীর চিত্রশিল্পী নারগিস পারভীন সোমা। পুরস্কারপ্রাাপ্ত তার চিত্রকর্মটির শিরোনাম ছিল ‘ওম্যান লাইফ’। কালারার ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার জয়া আরোরা গত বুধবার রাতে দিল্লীর র‌্যাডলেন্স মোটেলে এশিয়া গামার ফ্যাশন শো অনুষ্ঠানে এ্যাওয়ার্ডটি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন নারগিস পারভীন সোমার হাতে। সোমা ষড়ং আট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং রাজশাহী আর্ট কলেজের প্রভাষক।
×