ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

নির্মিত হচ্ছে সাইদুল আনাম টুটুলের ‘কালবেলা’

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১১ অক্টোবর ২০১৮

নির্মিত হচ্ছে সাইদুল আনাম টুটুলের ‘কালবেলা’

সাইদুল আনাম টুটুল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে এক উজ্জ্বল নাম। দীর্ঘ ঊনচল্লিশ বছর ধরে চিত্র সম্পদনা এবং পরিচালানা করে আসছেন বেস সুনামের সঙ্গে। যাঁর নামের সঙ্গে ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ ‘ঘুড্ডি’ ‘দহন’ ‘ফেরারি বসন্ত’ ‘দীপুনম্বর টু’ এর মতো মার্জিত ও নন্দিত সিনেমার সাফল্য জড়িত। নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘আকার’ থেকে নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’। দীর্ঘ সময় পর আবারও চলচ্চিত্র নির্মাণে ক্যামেরায় চোখ রেখেছেন এই শিল্প প্রেমিক। সম্প্রতি তাঁর পরিচালনায় সরকারী অনুদানে নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্র ‘কালবেলা’। মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়ে নারীদের দহনকালের সত্য গল্প নিয়ে লেখা বই ‘নারীর ’৭১ ও যুদ্ধপরবর্তী কথ্য কাহিনী’ থেকে অনুপ্রাণীত এই সিনেমার গল্প। চিত্রনাট্য লিখেছেন সাইদুল আনাম টুটুল। সম্প্রতি ঢাকা থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয় তাঁর সঙ্গে। ফোন ধরে, আমি খুব ব্যস্ত আছি- লাইট, ক্যামেরা সেট রেডি। শট টেক করে আপনাকে ফোন করছি। কিছু সময় পরে ফিরতি ফোন। ‘কালবেলা’ চলচ্চিত্রের আপতত খবর জানতে চাই? সাইদু আনাম টুটুল, দুই দিন হলো খুলনায় কাজ শুরু করেছি। খুলনার অংশ শেষ হলে রাজশাহীতে শুরু করব। গল্প সম্পর্কে একটুখানি ধারণা। আচ্ছা, কালবেলা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং পরবর্তী সময়ে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অসংখ্য নারীদের ভেতর থেকে একজনের জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র । গল্পটা হচ্ছে, তৎকালীন সদ্য পাস করা সানজিদা নামের একজন শিক্ষিত নারীর জীবনের ছায়া অবলম্বনের গল্প। সানজিদা মাস্টার্স পাস করা একটা ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে করে। ছেলেটা খুলনা জুট মিলে অফিসার পদে চাকরিতে যোগ দেয়। বিয়ের দুই-আড়াই মাসের মাথায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানী সেনারা অন্য অফিসারের সঙ্গে সানজিদার স্বামীকে গ্রেফতার করে। সানজিদা পাগলের মতো স্বামীকে খুঁজতে থাকে। শেষে স্বামীর পরিহিত গায়ের জামা দেখে তাকে শনাক্ত করতে পারে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, স্বামীর মৃত্যু এর মধ্যে সানজিদা অন্তঃসত্ত্বা। প্রসবকাল খুব কাছাকাছি। যুদ্ধ শেষে সন্তানসহ সানজিদা স্বামীর বাড়িতে যায়। সেখানে তাদের অনানুষ্ঠানিক বিয়ে, পাকসেনাদের হাত থেকে নিজের সতীত্ব রক্ষা এবং তাদের সন্তানসহ আরও অনেক নির্দয় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। এ যেন যন্ত্রণার অনলে জীবন অঙ্গার করা। দীর্ঘ সময় নিয়ে এই চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রেডি করেছি। ‘আধিয়ার’এর পর আপনাকে দীর্ঘ সময় চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি, কি কারণ? আধিয়ারের পর আমি বেশ কিছু নাটকের চিত্র সম্পাদনার কাজ করেছি। সিনেমা তো পকেটের টাকা দিয়ে বানানো সম্ভব নয়। যেমন, চ্যানেল আই বা অন্যদের মতো আমাদের অনেক টাকা নেই। সরকারী অনুদানে একবার আবেদন করলে পরবর্তীতে কিছু সময় লাগে। এসব বিবেচনায় চলচ্চিত্র নির্মাণে এই বিরতি। কালবেলার অভিনয় শিল্পী মুনিরুজ্জামান শিশিরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই সিনেমায় তার কাজের অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। শিশির আনন্দকণ্ঠকে জানায়। আমি ভীষণভাবে উচ্ছ্বসিত। যখন থেকে টুটুল স্যারের কাজ দেখেছি তাঁর সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন লালন করেছি। আমার দৃষ্টিতে তিনি আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে লিজেন্ট। আমি মনে করি তাঁর সঙ্গে এই কাজ আমার ক্যারিয়ারে একটা আলাদা প্লাটর্ফম তৈরি করে দেবে। কালবেলায় সানজিদার চরিত্রে অভিনয় করছেন তাহমিনা অথৈ। ফোনে অথৈর কাছে যাছে জানতে চাওয়া হয়, সানজিদার মতো এত সিরিয়াস একটা চরিত্র কিভাবে করছেন, এই সিনেমায় তার কাজের অভিজ্ঞতা? অথৈ, প্রথমত আমি ভীষণ আনন্দিত সাইদুল আনাম টুটুল স্যারের মতো একজন বড় মাপের মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। কালবেলা চলচ্চিত্রে সানজিদা মূল চরিত্র, আমি আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি নিজেকে সানজিদা রূপে তৈরি করতে বাকিটা সময়ের অপেক্ষা। তবে আমি আশা করি টুটুল স্যারের কাজটা সবাইকে খুব আলোড়িত করবে। দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পে হতে যে ক’জন ব্যক্তিত্ব চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং চিত্র সম্পাদনার কাজ প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভিজ্ঞতায় করেন, তাদের মধ্যে সাইদুল আনাম টুটুল অন্যতম। সঙ্গত কারণে তার এই নির্মিতব্য সিনেমা নিয়ে আমাদের একটু বেশিই কৌতূহল।
×