ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজকালের মধ্যে ঘোষণা

এলএনজি আমদানির খরচ মেটাতে গ্যাসের দাম বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৮ অক্টোবর ২০১৮

  এলএনজি আমদানির খরচ মেটাতে  গ্যাসের দাম বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজকালের মধ্যে গ্যাসের বর্ধিত দামের ঘোষণা আসতে পারে। রবিবার বিকেলে গ্যাসের বর্ধিত দাম ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্র বলছে আজ সোমবার বা কাল মঙ্গলবার গ্যাসের বর্ধিত দাম ঘোষণা করার প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আমদানির খরচ মেটাতে এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হবে। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ছাড়া অন্য সব গ্রাহকের গ্যাসের দামই বৃদ্ধি চেয়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। এর আগে সরকার গ্যাসের ওপর থেকে সব ধরনের সম্পূরক শুল্ক তুলে নিয়েছে। একই সঙ্গে এলএনজির আমদানি পর্যায়েও কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুধু দেশীয় গ্যাস বিপণনের ওপর ১৫ ভাগ ভ্যাট রাখা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এজন্য গত ৩ অক্টোবর তিনটি পৃথক এসআরও জারি করেছে। বাংলাদেশ সরকারী মুদ্রণালয় (বিজি প্রেস) এর ওয়েব পেজে ২৮৯, ২৯০ এবং ২৯১ নম্বর এসআরও তিনটি রয়েছে। গ্রাহকরা গ্যাসের ওপর ৯৩ দশমিক ২৪ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ২৮ দশমিক ৯৮৬ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে আসছিল। এখন থেকে শুধু ১৫ ভাগ ভ্যাট দিতে হবে। সরকার কর নেয়ার ক্ষেত্রে বড় রকমের ছাড় দেয়ার পরও এলএনজি আমদানির খরচ মেটাতে দাম বৃদ্ধি করতে হবে। পেট্রোবাংলা বলছে, সরকারের কোষাগারে গত পাঁচ অর্থবছরে গ্যাস খাত থেকে সিডি ভ্যাট, ডিএসএল, লভ্যাংশ, আয়কর এবং এসডি ভ্যাট বাবদ ৩৭ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে সর্বাধিক গত অর্থবছরে ১৩ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সূত্র বলছে, সরকার কর প্রত্যাহারের পরও এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন সরকার ঘাটতির একটি অংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। মোট ঘাটতি থেকে ভর্তুকি বাদ দিয়ে কোম্পানিগুলোকে ব্রেক ইভেনে (লাভ ক্ষতির সমতা বিন্দু) চলার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটাই দাম বৃদ্ধি করা হবে। জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সরকার গ্যাস খাতের লভ্যাংশ, কর্পোরেট ট্যাক্স, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল এবং জ¦ালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ নিয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে কি কি ছাড় দেয় তা এখন দেখার বিষয়। এলএনজি আমদানির ফলে যেহেতু গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে তাই এসব ক্ষেত্রেও অর্থের সংস্থান বৃদ্ধি পাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে তাই গ্যাসের মুনাফাসহ গ্যাস উন্নয়ন তহবিল এবং জ¦ালানি নিরাপত্তা তহবিলে জমার পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। এলএনজি সরবরাহে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির হারে তা প্রভাব ফেলবে। সঙ্গত কারণে যে হারে তা কেটে নেয়া হচ্ছিল এখন একই হার ধরে রাখা যৌক্তিক হবে না। বিইআরসির পরিচালক গ্যাস রেজানূর রহমান বলেন, ভ্যাট এবং শুল্কের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও গ্যাসের অন্যান্য অর্থ যেভাবে বিভিন্ন হিসাবে জমা হতো সেভাবেই হবে। এক্ষেত্রে কোন পরিবর্তনের কথা এখনও সরকার থেকে বিইআরসিকে জানানো হয়নি। ফলে এসব বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি । বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বিতরণ কোম্পানিগুলো যে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে তাতে গত জুন থেকে ৫০০ এবং ২০১৮ এর জানুয়ারি থেকে আরও ৫০০ মিলিয়ে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ধরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবে ৭৫ ভাগ দাম বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়া এবং পরিমাণে কম এলএনজি সরবরাহের কারণে বিইআরসি বলছে বিতরণ কোম্পানির প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম বৃদ্ধি করা হবে না। বিইআরসি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, আমরা পেট্রোবাংলাকে দাম বৃদ্ধির জন্য দুটি বিষয় আমাদের জানাতে বলেছিলাম। একটি হচ্ছে এনবিআর-এর এসআরও জারি আর অন্যটি হচ্ছে প্রতিদিন কি পরিমাণ এলএনজি পাইপ লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সরবরাহ এবং ভবিষ্যত সরবরাহের পরিমাণ সম্পর্কে আমাদের নিশ্চিত করেছে। বাকি ছিল এসআরও জারি। সেটিও হয়ে গেছে। এখন আমরা দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেব। তিনি বলেন, আজকালের মধ্যে যে কোন দিন এই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে। গত ১৮ আগস্ট প্রথমবারের মতো পাইপলাইনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ শুরু হয়। প্রথমে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হলেও এখন প্রতিদিন কর্নফুলি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। পাইপ লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় আপাতত এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস পেট্রোবাংলার কাছ থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলো সরবরাহ পায় হিসেবের মারপ্যাঁচে তাই বিক্রি দেখালেও বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি হয়ে যায়। চুরি রোধ করা গেলে গ্যাসের লাভ আরও বৃদ্ধি পেত যাতে অর্থের সরবরাহ বাড়লে ঘাটতি কমানো সহজ হতো।
×