ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১ অক্টোবর ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী চাকরিতে কোটা সম্পর্কিত সচিব কমিটির সুপারিশ বাতিল করে সকল গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখাসহ নয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অভিযোগ তুলেছেন, প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একশ্রেণীর স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকর্তা প্রতিটি পদক্ষেপে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে। সচিব কমিটির সুপারিশ তারই নতুন সংস্করণ। মানববন্ধনে দাবিগুলো তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান শাহীন। নয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- জাতির পিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কট‚ক্তিকারীদের আইনের আওতায় আনা, মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন তৈরি, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে তা বাস্তবায়নে বিসিএস প্রিলিমিনারি থেকে কোটা শতভাগ বাস্তবায়ন করা, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চলমান সব নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কোটার শূন্য পদ সংরক্ষণ করে বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা, ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শূন্য পদগুলোতে এ বছরই নিয়োগ দেয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে পেনশন, বোনাস, রেশনসহ সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পদ বাজেয়াফতসহ তাদের উত্তরসূরীদের সব চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা করা, স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসির বাসভবনে হামলাসহ দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া। মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ অন্য সবার জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা তুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়। কর্মসূচীতে নেতারা বলেছেন, সরকারী চাকরিতে কোটা সম্পর্কিত সচিব কমিটির সাম্প্রতিক সুপারিশ অবিলম্বে বাতিল করে সকল গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে প্রিলিমিনারি থেকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মর্যাদা সমুন্নত রাখার বিষয়ে আন্তরিক থাকলেও প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একশ্রেণীর স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকর্তা প্রতিটি পদক্ষেপে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে। সাম্প্রতিক সচিব কমিটির সুপারিশ এরই একটি নতুন সংস্করণ। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, সচিব কমিটির সুপারিশের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সাধারণ ছাত্র নামধারী কিছু দিকভ্রান্ত যুবকের দাবি মেনে নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী এই সুপারিশের ফলে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়েছে। প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীরা অনেকদিন থেকে এটাই চেয়েছিল যে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা যাতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না পারে। তারা যাতে সারাজীবন পিয়ন, দারোয়ান ও সুইপারের মতো নিম্নœপদে চাকরি করে। তারা আরও বলেন, জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেই বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকতে পারে না। বৈষম্য দূর করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে দেশকে শত্রæমুক্ত করেছেন। আর আজ তাদের পরবর্তী প্রজন্মরাই চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তা একদিকে যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চরম অপমানের অপর দিকে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্গন। কর্মসূচীতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সন্তানরা মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাথার ওপর বসে নির্লজ্জ নৃত্য করবে, তা দেখার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
×