ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার করমেলায় ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে কর প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এবার করমেলায় ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে কর প্রশিক্ষণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা শুরু হচ্ছে আগামী ১৩ নবেম্বর। এরই মধ্যে মেলা আয়োজনের পুরো প্রস্তুতি শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত দুই বছর ধরে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা আবারও ফিরে আসছে বেইলী রোডের অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে। মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় যানজট এড়াতেই এ সিদ্ধান্ত। বিপুলসংখ্যক করদাতার পদচারণাকে মাথায় রেখে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অফিসার্স ক্লাবের পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হবে কর অঞ্চলের সার্কেল অফিসগুলোকেও। তবে এবারের মেলায় রাজস্ব আদায়ের সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নেই। ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাকে উদ্বুদ্ধ করাই এবারের মেলার প্রধান লক্ষ্য। মেলায় নতুন সংযোজন হিসেবে এবার থাকছে ‘ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে’ কর প্রশিক্ষণ। এর মাধ্যমে নতুন করদাতারা কর নিবন্ধন নেয়া থেকে শুরু করে রিটার্ন দাখিলের বিস্তারিত তথ্যও জানতে পারবেন। মেলার নতুনত্ব জানতে চাইলে মেলার সমন্বয়কারী ও এনবিআর সদস্য (আয়কর প্রশাসন) জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এবারের মেলায় নতুন করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে অডিও ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে ওয়ার্কশপ হবে। নতুন করদাতা তৈরি ও রিটার্ন দাখিলে সাহায্য করতেই এই কর্মশালা। এতে সাধারণত কারদাতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো আসে, তা সেট করা থাকবে। নতুন কোন প্রশ্ন জাগলে সেই প্রশ্নের উত্তরও অন্তর্ভুক্ত হবে। এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চলতে থাকবে, যা হেল্প ডেস্কের মতো কাজ করবে। এটিই এবারের মেলার একমাত্র ব্যতিক্রম।’ আগামী ১৩ নবেম্বর থেকে আটটি বিভাগীয় শহরসহ ১৬৬টি স্থানে শুরু হবে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা-২০১৮। এনবিআরের তথ্যমতে, আগামী ১৩ থেকে ১৯ নবেম্বর বিভাগীয় শহরে ৭ দিন, ৫৬ জেলা শহরে ৪ দিন, ৩২ জেলায় ২ দিন ও ৭০ উপজেলায় ১ দিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা উদযাপন করা হবে। ৩০ নবেম্বর আয়কর দিবসে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য র‌্যালি। এর আগে ১২ নবেম্বর জেলাভিত্তিক ও দীর্ঘসময় ধরে আয়কর প্রদানকারী করদাতাদের পুরস্কার দেয়া হবে। ২০১৭-১৮ কর বছরের পরিশোধিত আয়করের ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তি, কোম্পানি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে ১৪১টি ট্যাক্স কার্ড দেয়া হবে। ব্যক্তি শ্রেণীতে ৭৬, কোম্পানিতে ৫৩ ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১২টি ট্যাক্স কার্ড দেয়া হবে। তবে গতবছর সাধারণ করদাতাদেরও ‘করকার্ড’ দেয়া হলেও এবার তা থাকছে না। মূলত কার্ডের কার্যকারিতা না থাকায় আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে এনবিআর। কেন্দ্রীয় মেলা এবার অফিসার্স ক্লাবে ॥ ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো আগারগাঁওয়ের নির্মাণাধীন ভবনে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালেও মেলাটি সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে তারও আগে মেলা হয়েছে বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে। মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকা ও মেলাকে এনবিআর অফিসের কাছে নিয়ে আসতেই দুই বছর পর আবারও মেলা বসবে অফিসার্স ক্লাবে। অফিসার্স ক্লাবের পুরো স্থান এরই মধ্যে বরাদ্দ নিয়েছে এনবিআর। তবে গত কয়েকবছরে মেলায় বিপুলসংখ্যক করদাতার ভিড়কেও প্রধান্য দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। প্রতিটি কর অঞ্চলের সার্কেল অফিসে করমেলার সেবা প্রদানকে বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে। মেলার সমন্বয়কারী এনবিআর সদস্য জিয়া উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে, মেলার স্থান পরিবর্তন নিয়ে আয়করদাতাদের মধ্যে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। গত দুই বছর ধরে রিটার্ন দাখিল করতে হয় বেসরকারী কর্মজীবী তরুণ করদাতা সোহেল রানাকে। ফার্মগেটের এই বাসিন্দা বলেন, আগারগাঁওয়ে মেলাকে দেখেছি উৎসব হিসেবে। গত দুই বছর ধরে সেখানে গিয়ে রিটার্ন দাখিল করছি। সবার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে কর দেয়াতে পেয়েছি অন্য রকমের আনন্দ। তবে মেলার স্থান পরিবর্তনকে আমি ভালভাবে দেখছি না। নগরীর শান্তিনগরের বাসিন্দা মোঃ রুমি (৬০) বলছিলেন, অফিসার্স ক্লাবে আয়করমেলা হলে তা তাদের জন্য ভালই। আগারগাঁওয়ের যানজট উপেক্ষা করেই তারা কর দিতে পারবেন। এনবিআর বলছে, যাতায়াতের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের মেলায় যে সুবিধা ছিল এবারও তা থাকছে। আয়কর মেলায় রাজস্ব আয় ॥ ২০১০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো আয়কর মেলা চালু হয়। প্রতিবছরই মেলার পরিধি বাড়ছে। মেলা নিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রুপও। এনবিআরের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের আয়কর মেলায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫১ টাকা। ২০১৫ সালের মেলায় তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকায়। ২০১৬ সালের মেলায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকারও বেশি। বছরটিতে মেলায় রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আয়কর মেলায় রেকর্ড সংখ্যক ২ হাজার ২১৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ২২১ টাকার রাজস্ব আহরণ হয়। বছরটিতে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। গতবছর মেলায় আয়করে রাজস্ব বাড়লেও প্রবৃদ্ধিতে তা ছিল পূর্বের বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে, ২০১৮ সালের মেলা থেকে রাজস্ব আদায়ের সুর্নিদিষ্ট কোন লক্ষ্যমাত্রা নেই। এবারের মেলায় করদাতাকে উদ্বুদ্ধ করাই প্রাধান্য পাচ্ছে বলে জানিয়েছে এনবিআর। আয়কর মেলায় থাকবে নির্বাচনের প্রভাব ॥ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নবেম্বরের আয়কর মেলায় তাই থাকবে নির্বাচনের প্রভাব। ‘কী হয়’ তা এখনও বলা যাচ্ছে না। অনেকটা ছাড়া দেয়ার প্রবণতা থেকেই মেলা থেকে রাজস্ব আদায়ের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়নি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
×