ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহাসঙ্কটে পোল্ট্রি শিল্প ৩;###;বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ঋণ পাচ্ছে ৩ শতাংশ সুদে, দেশী প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে

দেশী খামারিরা মার খাচ্ছে বিদেশী কোম্পানির দৌরাত্ম্যে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশী খামারিরা মার খাচ্ছে বিদেশী কোম্পানির দৌরাত্ম্যে

রহিম শেখ ॥ দেশে যে কয়েকটি শিল্পে নীরব বিপ্লব ঘটেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প। বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্প ব্যবসায় নিয়োজিত বিদেশী কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্যে বিপাকে পড়েছে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প। বর্তমানে সাত বিদেশী কোম্পানি সরকারের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের ব্যবসা করছে। কিন্তু এই সাত বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারবে কিংবা কি পরিমাণ লভ্যাংশ নিয়ে যেতে পারবে তার সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। ফলে বিদেশী কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া বাজার দখলের কারণে দেশী কোম্পানিগুলো বাজার হারাচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু বিদেশী প্রতিষ্ঠান ব্যবসার জন্য পাইপলাইনে রয়েছে। বিদেশী কোম্পানিগুলো ৩ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণে ব্যবসার সুযোগ পেলেও দেশী ব্যবসায়ীরা ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) বলছে, বাংলাদেশের পোল্ট্রি ব্যবসার ৪০ শতাংশ ইতোমধ্যে বিদেশী সাত কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বিদেশী সাত কোম্পানি হলোÑ ভিএইচ গ্রুপ, গোদরেজ, সেগুনা, টাটা, অমৃত গ্রুপ, সিপি ও নিউ হোপ। কোম্পানিগুলোর কেউ বাচ্চা উৎপাদন, ডিম উৎপাদন কিংবা মুরগি উৎপাদনের অনুমতি নিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিদেশী কোম্পানিগুলো বর্তমানে সবকিছুই করছে। ফলে দেশী কোম্পানিগুলো বাজার হারাচ্ছে। এছাড়া বিদেশী কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ কি পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পারবে, মোট লভ্যাংশের কত শতাংশ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারবে এবং কত শতাংশ এদেশে খরচ কিংবা বিনিয়োগ করতে পারবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। বিদেশী পুঁজি আসার কারণে দেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা চলছে। বড় পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র খামারিরা। এসব নানা সঙ্কটে ২০২১ সালের মধ্যে বিনিয়োগের লক্ষ্য অর্জন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এদিকে বিদেশী কোম্পানিগুলো ৩ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণে ব্যবসার সুযোগ পেলেও দেশী ব্যবসায়ীরা ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে ব্যাংক ঋণের সুবিধাও পাচ্ছে কেবল বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আর ঋণ সুবিধা না পেয়ে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। আর তাই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে দেশী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানিয়েছেন দেশী উদ্যোক্তারা। এছাড়া খামারিদের ব্যয়ের ৭০ শতাংশই পোল্ট্রি ফিডে। যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এই আমদানিতে ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা না পাওয়ায় আরও বিপাকে রয়েছে পোল্টি শিল্প। অপরদিকে লাইভ স্টক ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুমতি না নিয়ে বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট থেকে অনুমতি নিয়ে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করছে। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এ খাতের কোন সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও নীতিমালা নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে পর্যায়ক্রমে পুরো পোল্ট্রি শিল্পই বিদেশীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। বাংলাদেশের যে সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি শিল্পে জড়িত তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ, বিদেশী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্য দেশী প্রতিষ্ঠানের নেই। বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তি পর্যায়ের খামারিরা বিপাকে পড়বে। তাদের মতে, এই শিল্পে বিদেশী আগ্রাসন বাড়লেও সরকারের নজর নেই। নেই বাজারের নিয়ন্ত্রণও। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, পোল্ট্রি শিল্পে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ সুবিধা থাকলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা কোন ঋণ সুবিধা পান না। তাদের ঋণ সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি খাতা কলমেই সীমাবদ্ধ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাংক ঋণের সুবিধা আছে। কোন খামারি এ সুবিধা পান না বলে জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা যেন ঋণ সুবিধা পান সে ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।
×