ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক সময়ের বঞ্চনার রাঙ্গুনিয়ায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 এক সময়ের বঞ্চনার রাঙ্গুনিয়ায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ অতীতে বছরের পর বছর যুদ্ধাপরাধী (মৃত্যুদ-ে দ-িত) বিএনপি নেতা সাকাচৌ (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) ও তার ভাই গিকাচৌ (বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী) অর্থাৎ ফকাচৌ (ফজলুল কাদের চৌধুরী) পরিবারের অত্যাচার নির্যাতনে নানাভাবে বঞ্চিত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া (জাতীয় সংসদ আসন-৭) নানা বঞ্চনার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে সংসদের এই আসনটি মহাজোটের পক্ষে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর থেকে উন্নয়নের জোয়ারে এলাকাবাসীর ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। সংসদ নির্বাচনের এই পর্যন্ত দুই টার্মে চট্টগ্রামের বর্ধিষ্ণু এই রাঙ্গুনিয়ায় বর্তমান সরকার উন্নয়ন খাতে ব্যয় করেছে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ। আরও ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী ভাঙ্গন রোধে একটি প্রকল্প প্রি-একনেকে পাস হয়েছে। শীঘ্রই একনেকে যাবে অনুমোদনের জন্য। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে শেখ হাসিনা এ্যাভিয়ারি (পক্ষীশালা)। অতীতে বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্ণফুলী জুট মিল বেসরকারী মালিকানা থেকে উদ্ধার করে সরকারী পর্যায়ে চালু করা হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে সহস্রাধিক শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর। এলাকার আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এবং এলাকার নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের প্রত্যক্ষ ও তত্ত্বাবধানে রাঙ্গুনিয়াবাসী প্রত্যক্ষ করছে দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়াকে একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত করার প্রত্যয়ে এ সরকারের চলমান দুই টার্মে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ডিঙ্গিয়েছে। পুরো দেশের মতো উন্নয়নের সোপানে রাঙ্গুনিয়াও। যে চিহ্নিত মহলটি অতীতে রাঙ্গুনিয়াকে বঞ্চনায় রেখে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল তা এখন কেবলই ইতিহাস। বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় ও এলাকার সংসদ সদস্যের তত্ত্বাবধানে রাঙ্গুনিয়াবাসীর রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকাকে অতীতের জটিলতার আবর্ত থেকে বের করে এনেছে। রাঙ্গুনিয়াবাসীকে বার বার দুষ্টু চক্রের রাহুগ্রাস থেকে বেরিয়ে আসার প্রাণান্তকর প্রয়াস চালিয়েছে। সাফল্য এসেছে ২০০৮ সালে নির্বাচনে। এই পর্যন্ত গত প্রায় সাড়ে ৯ বছরে কৃষি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, নারী সমাজ, এলাকার রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক কর্মকা-ে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা নিয়ে এখন এলাকায় সরব আলোচনা। কেননা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন্ন ডিসেম্বরের শেষ দিকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্বাচন হবে। এলাকাবাসী তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে অনেকের নাম শোনা যায়। প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ রয়েছেই। বিএনপির প্রার্থীর নামও শোনা যায়। তবে জাতীয় পার্টি ও মৌলবাদী জামায়াত এলাকায় নিষ্ক্রিয়। আওয়ামী লীগে গ্রুপিং নেই। বিএনপি বিভক্ত। আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ড. হাছান মাহমুদ আগামী নির্বাচনে মহাজোট বা দলের পক্ষে আবারও যে মনোনয়ন আসছেন তা অনেকটা নিশ্চিত। তাঁর সঙ্গে অন্য যারা প্রার্থিতার জন্য দৌড় ঝাঁপ করছেন তারা দেশের তো দূরের কথা এলাকার সকলের কাছেও তেমন জানা শোনা নয়। এদের কেউ কেউ মৌসুমি। নির্বাচন আসলে নড়েচড়ে বসেÑ এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। আর বিএনপির দুটি গ্রুপ একটির নেতৃত্বে রয়েছেন শওকত আলী নুর। অপরটিতে রয়েছেন অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার। সে যাই হোক নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সকলের যেমন রয়েছে। তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। এলাকাবাসী নির্ধারণ করবেন কাকে তারা সংসদ সদস্যের পদে বসাবেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ড. হাছান মাহমুদ বহুলাংশে এগিয়ে রয়েছেন। দলের অনেকে জানিয়েছেন, তার প্রার্থিতা অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি গত দুই মেয়াদে এমপি পদে রয়েছেন। প্রথম বার নির্বাচিত হওয়ার পর মন্ত্রীর পদেও ছিলেন। কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক পদে ব্যস্ত সময় থাকার পাশাপাশি এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ সর্বক্ষণিক। ড. হাছান মাহমুদের আগ্রহে ও প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় ইতোমধ্যে যে আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে এবং আরও ৫শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকা- শুরু হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে তাতে এলাকাবাসী তাকে নিয়েই নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখছেন। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। রাজারহাট সেতু ও সরফভাটা সেতুসহ ৫ ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। পারুয়াবিচি সড়ক, মরিয়ম বিচি সড়ক, সৈয়দ আলী সড়ক, আমান আলী সড়ক, হাফেজ বজলুর রহমান সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ হয়েছে। কর্ণফুলী ইছামতি ও শিলক খালের ভাঙ্গন রোধ এবং ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও বন্য রোধে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। জলবায়ু ট্রাস্টের অধীনে আরও ১৫ কোটি টাকার বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের নদীরটির সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রায় ৪০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে চন্দ্রঘোনায় দেশের প্রথম শেখ রাসেল এ্যাভিয়ারি এ্যান্ড রিক্রিয়েশন পার্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছে এতে আরও দেড় শ’ কোটি টাকা ব্যয়েও উন্নয়ন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব ছাড়াও খুরুশিয়া ইকোপার্ক একটি কারিগরি মহাবিদ্যালয় ফায়ার স্টেশন কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হচ্ছে এই উপজেলা ১৬ ইউনিয়নের ১০ হাজার দরিদ্র পরিবারকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি প্রদর্শনী মৎস্য খামার। ভূমিহীন ও দুস্থদের জন্য ৩ হাজার ৯শ’ ভূমিহীন পরিবারকে ভূমি প্রদান, ভূমিহীনদের জন্য স্কুল মসজিদ ও কৃষি জমি ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব ছাড়াও ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম ভিজিএফ, সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায় ভাতা প্রদান কর্মসূচী এবং বেসরকারী এতিমখানায় অনুদান ও দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫৬৭ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া ছোট খাট স্বল্প ব্যয়ে অসংখ্য উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন হয়েছে এ সরকারের গত দুই টার্মে। মূলত বর্তমান সরকারী দলই এলাকায় বহুল আলোচিত। যার নেপথ্যে রয়েছেন এমপি ড. হাছান মাহমুদ। তবে দলের জন্য নিবেদিত যারা তাদের অনেকের ইচ্ছাও তো রয়েছে। যে কারণে হাতেগোনা কয়েকজন দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড় ঝাঁপ করছেন। লবিংয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। তবে দলীয় প্রধান ইতোমধ্যে দেশব্যাপী প্রার্থিতার যে প্রাথমিক তালিকা করেছেন তাতে ড. হাছান মাহমুদের কাছাকাছি যাওয়ার সফলতা অর্জন করতে পারেননি বলে এলাকাবাসীর প্রত্যক্ষ ধারণা। এমনও জানা গেছে, দলীয় সভানেত্রী আগামী নির্বাচনে তাঁর দলের পক্ষ থেকে সুনিশ্চিতভাবে যাদের মনোনয়ন দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন সে তালিকায় অন্যতম একজন হলেন ড. হাছান মাহমুদ।
×