ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ, দুর্গে ফিরতে উদগ্রীব বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

   বিজয় ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ, দুর্গে  ফিরতে উদগ্রীব বিএনপি

তপন কুমার খাঁ, জয়পুরহাট ॥ থেমে নেই জয়পুরহাটের নির্বাচনী রাজনীতি। সারাদেশের মতো এ জেলার দুটি আসনেই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। জেলাটি বিএনপির দুর্গ বলা হলেও এখন সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। জেলার পাঁচ উপজেলাতেই বর্তমান সরকারের গত দুই মেয়াদে প্রায় পৌনে ১০ বছর সময়ে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে অনেকটাই বদলে গেছে জেলার সার্বিক চেহারা। দুটি আসনই বর্তমানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দখলে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আওয়ামী লীগ চাইছে দুটি আসনই আগামী নির্বাচনেও ধরে রাখতে। এ লক্ষ্যে দলের দুই বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও আরও কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপিও তাদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত জয়পুরহাটের দুটি আসনই পুনরুদ্ধারে মাঠে নেমেছে। তুলশীগঙ্গা, ছোট যমুনা, হারামতি, চিরি-নদী, শ্রী-নদী বিধৌত জয়পুরহাট জেলায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ছোট বড় সব দলই মাঠে নেমে প্রচার শুরু করেছে। পাঁচ উপজেলা, পাঁচ পৌরসভা ও বত্রিশটি ইউনিয়ন নিয়ে এ জেলার অবস্থান ভারত সীমান্ত ঘেঁষে। জয়পুরহাট জেলায় জাতীয় সংসদের আসন দুটি। জয়পুরহাট জেলার রাজনৈতিক গৌরবময় অতীত ইতিহাস রয়েছে। ব্রিটিশ ভারতের তেভাগা আন্দোলন, পাকিস্তানের অসহযোগ আন্দোলন, ৬ দফা, ১১ দফাসহ অন্যান্য আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই জয়পুরহাটেই এবারের একাদশতম নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য দলের নেতারা মনোনয়ন চেয়ে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা নিজেদের কর্মতৎপরতার বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং গ্রুপিং করে মনোনয়ন চাইতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (খালেকুজ্জামান), ওয়ার্কার্স পার্টি, জামায়াতে ইসলামী দলগতভাবে নিজেদের প্রার্থিতা নির্ধারণ করেছেন। তবে এই দলগুলো জোটগতভাবে নির্বাচন হলে জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই নির্বাচন করবে। জোটগত সিদ্ধান্ত না হলে দলগত এবং জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে। জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর-পাঁচবিবি) ॥ জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি দুটি উপজেলায় দুটি পৌরসভা ও ১৭ ইউনিয়ন। এ আসনে সর্বত্র এখন নির্বাচনী আলাপ আলোচনা। পাড়ায় পাড়ায় বৈঠক চলছে। আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন। সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু বলেন, নেত্রীর নির্দেশনায় নির্বাচন করব। বিগত ১৯৭৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রায় ৩৩ বছর বিএনপি, জাতীয় পার্টি এ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সংসদে গেছেন। কিন্তু এই দুই উপজেলার কোন উন্নয়ন হয়নি। এলাকার জনগণ উন্নয়নের জন্য দাবি করে আসলেও তারা শুধু নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। উন্নয়নের কিছুই হয়নি। এই দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ তাই সবসময়ই নানা কষ্ট ও হতাশায় দিন কাটিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ২০১৪ নির্বাচনে আমি সংসদ সদস্য হিসেবে জয়লাভ করে নেত্রীর নির্দেশনায় নানা উন্নয়নমুখী প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আজ জয়পুরহাট, পাঁচবিবি দুই উপজেলার গ্রামে গ্রামে হাজার হাজার মানুষের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছেছে, সড়ক অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। স্কুল কলেজের ভবন, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পসহ নানা উন্নয়নের কাজ করেছি। এ সব উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমি আবার নির্বাচনে অংশ নিতে চাই এবং আমি নিশ্চিত এলাকার ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। কারণ এই ভোটার ও এলাকাবাসী আমার কর্মতৎপরতায় খুশি। তারা এখন বলেন এর আগে কোন সংসদ সদস্য আমাদের কাছে ও কাজে এত সময় দেননি। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচবিবি পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পাঁচবিবি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার কার্যক্রমে সক্রিয়। আমরা সেই সক্রিয়তার সহযোগী। দেশে উন্নয়ন তৎপরতার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবার নির্বাচিত হতে হবে। দেশে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস নির্মূলে আওয়ামী লীগ আগামীতেও সাঁড়াশি অভিযান চালাবে। পাঁচবিবি ও জয়পুরহাটের গ্রামে গঞ্জে আমি জনজাগরণ আনতে এই বিষয়গুলো নিয়ে সভা সমাবেশ করছি। শোকের মাস আগস্টে প্রতিদিন আমি এই দুই উপজেলায় নানা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু হত্যা, আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতার বিষয়গুলো তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছি। এসব সমাবেশে মানুষ সোচ্চার হয়ে বলেছে আর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের শাসনে যেতে চায় না। তাই আমি মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচিত হব এই আশা রাখি। মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক এ্যাডভোকেট সোলায়মান আলী বলেন, তিনি জয়পুরহাট-১ এবং জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, আমি এলাকার উন্নয়ন করেছি। দলকে সংগঠিত করেছি। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আগামী দিনে আমি নির্বাচিত হবই। জেলার ভোটারদের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও জেলা সভাপতি, পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা, স্থানীয় দৈনিক মায়ের আঁচল পত্রিকার সম্পাদক এ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ ম-ল জানান, দলের সঙ্কটকালে ঝুঁকি নিয়ে এই জেলায় দলকে সংগঠিত করেছিলাম। আক্কেলপুরে জিয়াউর রহমানের জনসভায় জুতা নিক্ষেপ করে প্রতিবাদ জানালে গ্রেফতার হই। সংখ্যালঘুদের নানা দাবিতে মাঠপর্যায়ে জনমত গঠনে কাজ করি। পিপি হিসেবে সরকারের দেয়া দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি ইতোপূর্বে। তাই নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন পেলে নির্বাচিত হব এই আশা ব্যক্ত করেন তিনি। গত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়া প্রার্থী জয়পুরহাট সরকারী ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খাজা সামছুল আলম বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সভাপতি হিসেবে সাংগঠনিক জেলা জয়পুরহাটে দলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছি। দলের নানা শাখা সক্রিয় করেছি। ছাত্র রাজনীতি, ৬ দফা, ১১ দফার আন্দোলন শিক্ষক আন্দোলনসহ নানা আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছি। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে দলের কোন্দলে পড়তে হয়েছিল। কোন্দলের কারণে এ নির্বাচনে জয়ী হতে পারিনি। তবুও ১ লাখ ৩১ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমি নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করছি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মহাতাব উদ্দিনের পুত্র বর্তমান আওয়ামী লীগের জেলা যুগ্ম সম্পাদক ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সম্পাদক জাকির হোসেন। তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এই জেলার সন্তান জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এই জেলার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন। আমি মনোনয়ন পেলে নির্বাচিত হয়ে সেই উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নেব। পৌরসভার নানা উন্নয়নের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাব। জয়পুরহাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দোগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমি নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব। এদিকে বিএনপির এককালের ঘাঁটি বলে চিহ্নিহ্নত জয়পুরহাট-পাঁচবিবি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন চাইবেন জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জয়পুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি আলহাজ ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, আমি জয়পুরহাটের উন্নয়নে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ে তুলেছি তেমনি অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। মনোনয়ন পেলে আমি নির্বাচিত হবই। আমি সদর উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির উন্নয়ন করেছি, নানা সাহায্য সহযোগিতা দিয়েছি। এই জেলায় বিএনপি মাটি ও মানুষের সঙ্গে কাজ করে। বিএনপির নানা সঙ্কটে আমি দলের সঙ্গে একাত্ম থেকে কাজ করেছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্পপতি মমতাজ উদ্দিন ম-ল বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে আমি অতীতে কাজ করেছি। এখনও কাজ করছি। জয়পুরহাট বিএনপির এলাকা। এই আসনগুলোতে বিএনপিই নির্বাচিত হয়। আমি মনোনয়ন চাইব। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি জয়লাভ করবই। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত ও প্রয়াত আব্দুল আলিমের পুত্র ফয়সল আলীম এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক নাফিজুর রহমান পলাশ, অধ্যক্ষ সামছুল আলম মনোনয়ন চাইবেন বলে তারা জানিয়েছেন। জেলা জামায়াতের আমির ডাঃ ফজলুর রহমান সাঈদ বলেন, ২০ দলীয় জোটগত নির্বাচন হলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে জোটগত না হলে তিনি স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়াবেন বলে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক ছাত্র সমাজ নেতা আবুল কাশেম রিপন জানান, দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই আসনে নির্বাচনের জন্য কাজ করতে তাকে বলেছেন। একই কথা জানালেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক ছাত্রনেতা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে জড়িত সংগঠক তিতাস মোস্তফা। তিনি জয়পুরহাট-১ আসনে বিগত ২০১৪ সালে দশম নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে ওই সময় নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না হলে নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় আমি জয়ী হতাম। আমি এবারও মনোনয়ন চাইব। একাদশ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানালেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা এম এ রশিদ। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (খালেকুজ্জামান) জেলা সমন্বয়ক অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজ ও ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বাবলুও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। জয়পুরহাট-২ (আক্কেলপুর-কালাই-ক্ষেতলাল) ॥ এ আসনে তিন উপজেলা, তিনটি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়ন রয়েছে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন। আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাজশাহী বিভাগে পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকার পর এখন তাকে খুলনা বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই প্রভাবশালী নেতা জয়পুরহাট-২ আসনের গ্রামে গ্রামে সড়ক নির্মাণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় নতুন নতুন ভবন নির্মাণ, মসজিদ, মন্দির, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স নির্মাণ, সামাজিক সুরক্ষাসহ নানা উন্নয়ন কর্মকা- করেন। অপরদিকে নিজের সংসদীয় এলাকা ছাড়াও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে এলাকার উন্নয়নে জয়পুরহাট-পাঁচবিবিতে নানা উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রেখেছেন। জয়পুরহাটে যুব উন্নয়ন ভবন, মৎস্য ভবন, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বরেন্দ্র উন্নয়ন কেন্দ্র, পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা দফতরসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। জেলায় যানজট নিরসনে ফোর-লেন সড়কের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। স্বাস্থ্য খাতে নানা উন্নয়ন কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১০ বছরের উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রাখার জন্য তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। যদিও জয়পুরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় প্রার্থিতা স্বপন ছাড়া অন্য কেউ পাবে না বলেই এলাকায় ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, জেলার উন্নয়নে ছাত্র রাজনীতি থেকেই কাজ করে আসছি। সেই ধারাবাহিকতায় নেত্রী আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন ও দলকে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় করেছি বলেই নেত্রী আমাকে খুলনা অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি খুলনা অঞ্চলে যেমন দলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছি তেমনি সংসদ সদস্য হিসেবে আমার সংসদীয় এলাকা জয়পুরহাট-২ আসন এলাকায় নিরলসভাবেই কাজ করছি। একইভাবে জেলায় সংগঠনের গতি বাড়িয়েছি। তিনি বলেন, আগামীতে নির্বাচিত হয়ে নেত্রীর নির্দেশিত পথে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাব এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করব। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমার এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যবস্থা করে এলাকায় বেকার সমস্যার সমাধান করব। এই জেলার মাটির নিচে প্রচুর খনিজ সম্পদ রয়েছে। তা আহরণ করে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য কাজ করব। কালাই পৌরসভার মেয়র হালিমুল আলম জনও এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে, একাদশ নির্বাচনে জয়পুরহাট-২ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে বলেন, দলের মধ্যে আমি সক্রিয় রয়েছি। আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি জয়ী হব। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলার সহ-সভাপতি ও আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কমল ও জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আলী হাসান মুক্তা। ২০ দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে মনোনয়ন চাইবেন জামায়াতের আক্কেলপুর উপজেলা আমির ও আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদুল আলম সবুজ। তবে জোটগত নির্বাচন না হলে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান। অপরদিকে বিএনপি থেকে পর পর তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বর্তমানে এলডিপি নেতা প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান জানান, ২০ দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এলাকায় তিনি পর পর ৩ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। অনেক উন্নয়ন করেছেন। তিনি বলেন, এলাকার লোক তাকে ভালবাসে। মনোনয়ন পেলে তারা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
×