ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওপারের রোহিঙ্গাদের জন্যও ত্রাণ সামগ্রী যাচ্ছে এপার থেকে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ওপারের রোহিঙ্গাদের জন্যও ত্রাণ সামগ্রী যাচ্ছে এপার থেকে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বিস্ময়করও বটে। বাংলাদেশ সীমান্তের এপার থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী যাচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে এ অপকর্ম চলছে নির্বিঘেœ। বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তের ওপারের জিরো লাইনে আশ্রয় গ্রহণকারী ৬ সহস্রাধিক রোঙ্গিাদের জন্য প্রতিনিয়ত ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করছে এক শ্রেণীর এনজিও। নিয়মনীতি বহির্ভূত এমন কর্মকা- চালানোর বিপরীতে এপারের কোন কর্তৃপক্ষ বাধা কেন দিচ্ছে না তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছরের ২৫ আগস্টের রাতের পর সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। অনুরূপ প্রক্রিয়ায় ৬ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা তুমব্রু সীমান্তের ওপারে জিরো লাইনে অর্থাৎ নোম্যান্সল্যান্ডে আশ্রয় নেয়। ওপারের সূত্রগুলো জানায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাখাইন পরিস্থিতি অনুকূলে এলে তারা নিজ বাড়িঘরে ফিরে যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকায় গত প্রায় একবছর ধরে এরা অস্থায়ী বসতি গেড়ে বসেছে তুমব্রু কোণাপাড়া জিরো লাইনে। আশ্রয় গ্রহণকারীরা এসেছে মিয়ানমারের তুমব্রু, রাইমনখালি, ঢেকিবুনিয়া ও সাহাববাজার এলাকা থেকে। এদের জন্য কিছু এনজিও মাচাং ঘর ও বিভিন্ন কায়দার বসতি গড়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ওরা মিয়ানমারের বাসিন্দা এবং মিয়ানামর অংশেই রয়েছে। এদের জন্য বাংলাদেশ থেকে কেন ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো হচ্ছে। এমনিতেই ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভারে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে আছে। এ ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য প্রতিনিয়ত বিপুল অঙ্কের ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে আগ বাড়িয়ে ওপারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য এপার থেকে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার যৌক্তিকতা কোথায়। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ কারও অজানা নয়। এরপরও এ অপতৎপরতা চলছে। যার কারণে জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া এসব রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যেতে উদ্যোগী হচ্ছে না। তুমব্রুর জিরো লাইনে অবস্থান গ্রহণকারী এসব রোহিঙ্গাদের অবস্থা পরিদর্শনে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করেছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ইতিপূর্বে এদেরকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিংও করেছিল। কিন্তু এরা নিজ এলাকায়ও যেমন যাচ্ছে না, পাশাপাশি অবস্থান দিন দিন আরও মজবুত করছে। বাংলাদেশ থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রেরণে বিলম্ব হলে এরা সেখানে মিছিল সমাবেশও করে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতি উৎসাহী কিছু এনজিও এদের জন্য নিয়ত কিছু ত্রাণ প্রেরণ করছে। ত্রাণ প্রেরণে সহায়তা করছে কিছু রোহিঙ্গা দালাল। ত্রাণের সামগ্রী বিভিন্নভাবে ভাগাভাগিও হচ্ছে। ত্রাণ প্রেরণে কিছু রোহিঙ্গা দালালের নামও পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছে মৌলভী আরএফ আহমেদ ও মাস্টার দিন মোহাম্মদ। এরা উভয় পারে সহজে আসা যাওয়া করে থাকে। এখানে আরও উল্লেখ করা যেতে পারে, নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের দূরত্ব খুব বেশি নয়। এপার থেকে ওপারের চিত্র সহজে প্রত্যক্ষ করা যায়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, তিনি কর্মস্থলে নতুন যোগদান করেছেন। বিষয়টি তার জানা নেই। তবে অনুসন্ধান করে দেখবেন। এদিকে, সীমান্তের ওপারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি উঠেছে স্থানীয়দের পক্ষে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, এমনিতেই উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলে ১২ লক্ষাধিক ভিনদেশী অর্থাৎ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের চাপে পরিবেশ দিন দিন কলুষিত হচ্ছে। স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বড় ধরনের ছেদ পড়েছে। এরপরও মানবিক কারণে সরকার এদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর ওপর ওপারে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের জন্য এদেশ থেকে ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণের কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। ত্রাণ প্রেরণের নামে এর বড় একটি অংশ একদিকে যেমন আত্মসাত হচ্ছে, অপরদিকে সেখানকার খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
×